ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম কোয়ার্টার আজ

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৮ মার্চ ২০১৫

শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম কোয়ার্টার আজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ দেখতে দেখতে আয়ু কমে এসেছে ১১তম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের। ঘটন-অঘটনের পুল-পর্ব থেকে ইতোমধ্যে বিদায় নিয়েছে কুলীন ইংলিশসহ ছয় দল। শিরোপার পথে এবার জমবে লড়াই সেরা আটে, যেখানে আজ প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে সাবেক চ্যাম্পিয়ন (১৯৯৬) শ্রীলঙ্কা ও আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম ভয়ঙ্কর দল দক্ষিণ আফ্রিকা। কোয়ার্টার, সেমি ও ফাইনালÑ শিরোপার পথে তিনটি মাত্র ম্যাচ, শ্রেষ্ঠত্বের ঝা-া ওড়াতে ঐতিহাসিক সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তাই প্রাণ বাজি রেখে লড়বে এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও এবি ডি ভিলিয়ার্স বাহিনী। শেষ চারের টিকেট পেতে, ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে সেরা খেলাটাই খেলতে চাইবেন কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, লাসিথ মালিঙ্গা, ডেল স্টেইন, হাশিম আমলারা। আফ্রিকা ও এশিয়ার দুই ক্রিকেট পরাশক্তির মধ্যকার সাড়ে সাত ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস লড়াই দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব। এই ম্যাচের সঙ্গে যার ন্যূনতম যোগসূত্র নেই সেই নিউজিল্যান্ড কোচ মাইক হেসন বলেছেন, চাপ জয়ের পাশাপাশি কুমার সাঙ্গাকারাকে থামাতে না পারলে প্রোটিয়াদের সব পরিকল্পনাই মাঠে মারা যাবে! কেন? বিশ্বকাপে চোখ থাকলে বিষয়টা যে কারও অনুমান করার কথা। আসর শেষেই ওয়ানডে অবসরের অগ্রীম ঘোষাণা দিয়ে ব্যাটটাকে যেন তলোয়ার করে নিয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী লঙ্কান কিংবদন্তি। ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপের টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরির অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়ে ইতোমধ্যে তুলে নিয়েছেন আসরের সর্বোচ্চ ৪৯৬ রান, গড় ১২৪! সুতরাং আজ প্রোটিয়া শিবিরজুড়ে থাকবে সাঙ্গাকারা আতঙ্ক। দুই সেঞ্চুরি ও এক হাফ সেঞ্চুরির সাহায্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ ৩৯৫ রান তিলকারতেœ দিলশানের। অপর অভিজ্ঞ মাহেলা জয়াবর্ধনে যদি জ্বলে ওঠার মঞ্চ হিসেবে আজকের ম্যাচকেই বেছে নেন, তাহলে খবর আছে ডেল স্টেইন-ইমরান তাহিরদের। বিশ্লেষকদের ভবিষ্যদ্বানী মিথ্যা প্রমাণ করে এমনিতে এবারের বিশ্বকাপে রান হচ্ছে। সেঞ্চুরি, দেড় শ’, এমনকি ব্যক্তিগত-দুই শ’র পথে রানের ফল্গুধারা ছোটাচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা। পুল-পর্বে শীর্ষ পাঁচ রান সংগ্রাহকের তিনজনই আবার এই দু-দলের। এক সেঞ্চুরি ও দুই হাফ সেঞ্চুরির সাহায্যে ৪১৭ রান করে তৃতীয় স্থানে এবি ডি ভিলিয়ার্স। অধিনায়ক রান পেলেও ওপেনিংয়ে হাশিম আমলা-কুইন্টন ডিককদের ধারাবাহিকতা নেই। মিডল অর্ডারে এবির সঙ্গে ডেভিড মিলার, জেপি ডুমিনি, তার আগে রাইলি রুশোরা দুর্বার। সে অর্থে লড়াইটা হতে যাচ্ছে ‘লঙ্কান টপঅর্ডার’ বানাম ‘প্রোটিয়া মিডল অর্ডার’ ব্যাটিংয়ের। স্টেইন, ভারনান ফিল্যান্ডার, মরনে মরকেলদের নিয়ে গড়া দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণ অবশ্যই লঙ্কানদের চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঠিক নিজেদের মতো জ্বলে উঠতে পারেননি তারা। শ্রীলঙ্কার আক্রমণের পুরোভাগে থাকছেন বিজাতীয় এ্যাকশনের অধিকারী লাসিথ মালিঙ্গা। অবশ্য ইনজুরির জন্য প্রধান স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের না খেলার সম্ভাবনা বেশি। স্পিনে দুর্বল প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সেক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে সেক্কুগে প্রসন্নকে। সাঙ্গাকারা-সাঙ্গাকারা করে মালিঙ্গার দিক থেকে দৃষ্টি সরালে বিপদ হতে পারে বলে সতীর্থদের সতর্ক করে দিয়েছেন প্রোটিয়া তারকা হাশিম আমলা। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন ম্যাথুসও। যিনি কি না কিংবদন্তিতুল্য দুই সতীর্থ মাহেলা-সাঙ্গার জন্য শিরোপা জিততে চান, মাত্র কয়েক মাস আগে ঠিক যেভাবে জিতেছেন এশিয়া কাপ ও টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা। হেরে গেলে আজই হবে মাহেলা-সাঙ্গার ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ, ম্যাথুস-মালিঙ্কারা তা কিছুতেই চান না! কোয়ার্টার মানে নকআউট, হারলেই বিদায়Ñ এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসটাও খুবই হতাশার। বিশ্বকাপ ও আইসিসির টুর্নামেন্টেগুলোতে নকআউটে এসে বার বার হোঁচট খাওয়া ‘চোকার’ প্রোটিয়াদের যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে! ঠিক এই জায়গাতেও এগিয়ে লঙ্কানরা, বিষয়টা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই উল্লেখ করেছেন কোচ মারভান আতাপাত্তু। দু-দলের ওয়ানডে পরিসংখ্যান কিন্তু সেয়ানে সেয়ানে লড়াইয়ের ইঙ্গিতই দেয়। ১৯৯২ থেকে এ পর্যন্ত মোট ৫৯ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জয় ২৯ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ২৮টিতে। টাই ও পরিত্যক্ত হয় একটি করে ম্যাচ। তবে কথা যখন বিশ্বকাপ নিয়ে তখন এগিয়ে প্রোটিয়ারা। ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭Ñ বিশ্বকাপে চারবারের দেখায় দুবারই জয় তাদের। ৯২-এ ওয়েলিংটনে শ্রীলঙ্কার জয় ৩ উইকেটে। ৯৯-এ নর্দাম্পটনে ৮৯ রানের বড় ব্যবধানে জয় পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০৭-এ প্রোভিডিয়েন্সে পায় ১ উইকেটের নাটকীয় জয়। মাঝে ২০০৩-এ ডারবানের ম্যাচটি ‘টাই’ হয়। ওয়ানডেতে সর্বশেষ দেখায় অবশ্য জয়ের স্মৃতি রয়েছে এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসদের। প্রোটিয়াদের লঙ্কা সফরে কিম্বার্লিতে ৩শ’ রানের টার্গেটে নেমেও ৫ উইকেটে জিতেছিল তারা। যদিও ঘরের মাটিতে পাঁচ ওয়ানডের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে হারে ৩-১এ। তবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টারের সঙ্গে কি আর সে সবের তুলনা চলে?
×