ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত কঠিন প্রতিপক্ষ, আমরাও প্রস্তুত

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৮ মার্চ ২০১৫

ভারত কঠিন প্রতিপক্ষ, আমরাও প্রস্তুত

মোঃ মামুন রশীদ ॥ চার বছর আগে গ্রুপ পর্বেই ভারতীয় দলকে বিদায় করে দেয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন যে চার ক্রিকেটার তারা বর্তমান দলেও আছেন। পোর্ট অব স্পেনে ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার বিধ্বংসী বোলিংয়ের পর তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম ও সাকিব আল হাসানের অর্ধশতক জয় পেতে ভূমিকা রেখেছিল। গত চার বছরে এ চার ক্রিকেটার আরও পরিণত ও অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। এবার লড়াইটা নকআউট ম্যাচে। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতকে আবার হারিয়ে দিতে পারলে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। পোর্ট অব স্পেনের পর এবার মিশন মেলবোর্ন। মঙ্গলবার এ মাঠে অনুশীলন শেষে সাকিব দাবি করলেন এখন পর্যন্ত চলতি বিশ্বকাপে ভয়ডরহীন মনোভাব নিয়ে খেলেছে দল এবং কিছুই হারানোর নেই বাংলাদেশের। ভারত অনেক শক্তিশালী এবং ভাল দল। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে যে কোন দলই খারাপ খেলতে পারে। ভারতকে মোকাবেলার জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুত হয়েছে বাংলাদেশ বলে দাবি করেছেন অলরাউন্ডার সাকিব। ভারতের বিরুদ্ধে সাকিব ১১ ম্যাচ খেলেছেন এখন পর্যন্ত। এর মধ্যে দলের বিজয়ে হাসি নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন দু’বার। তার ভূমিকাও নেহাত কম ছিল না। ১১ ম্যাচে ৩৬ গড়ে ৩৬০ রান করেছেন ব্যাট হাতে। তবে ক্যারিয়ারে যে বোলিং গড় সেটা ভারতের বিরুদ্ধে কিছুটা খারাপ বলা যেতে পারে। ১৩ উইকেট নিয়েছেন ৩৫.৭৬ গড়ে। বর্তমানে ওয়ানডেতে বিশ্বের দুই নম্বর এবং টেস্ট ও টি২০ ফরমেটের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব এমনিতেই যে কোন প্রতিপক্ষের বিশেষ বিবেচনায় থাকেন এবং সমীহ আদায়ও করে থাকেন। নিশ্চিতভাবেই সাকিবকে মোকাবেলার জন্য ভারতীয় দলকেও ছক কষতে হবে। তাছাড়া বোলিংয়ে চলতি আসরের প্রথমদিকে তেমন ঝলক দেখাতে না পারলেও গ্রুপের শেষ ম্যাচে ম্যাজিক দেখিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সাকিবের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে তার ভয়ঙ্কর বোলিংটাকেও বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা আঁটতে হবে মহেন্দ্র সিং ধোনি শিবিরকে। তবে টাইগারদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে এবং ভয়হীন থেকে উচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলতে চায় বাংলাদেশ। আট বছর আগে ২০০৭ বিশ্বকাপেও তেমন মনোভাব নিয়েই খেলেছিল দল। এ বিষয়ে সাকিব বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা ভয়হীন ক্রিকেট খেলেছিলাম। আমরা যে পর্যায়ের ক্রিকেট উপহার দিয়েছিলাম এখন সবাই সেই ধরনের ক্রিকেটই খেলতে চাই। আর এখন পর্যন্ত এ বিশ্বকাপে আমরা সেটাই করতে পেরেছি। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমরা যেমন খেলেছি সেটাই যদি করতে পারি সেক্ষেত্রে ইতিবাচক একটা ম্যাচ হবে আমাদের জন্য।’ গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত দুর্দান্ত ফর্মে আছে। গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচই জিতেছে তারা। তাই তাদের হারানো বেশ কঠিন হবে বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে যে কোন দলেরই খারাপ সময় আসতে পারে। সেটাই মনে করিয়ে দিলেন সাকিব, ‘এটা নির্ভর করে একটা নির্দিষ্ট দিনের ওপর। ভারত অনেক ভাল দল, তারা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। দলে তাদের বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় আছেন। কাগজে-কলমে অবশ্যই ভারত অনেক ভাল দল বাংলাদেশের তুলনায়। সে বিষয়ে কারও কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু একটা দিনে শুধু এক ম্যাচেরই বিষয়। আমাদের যদি দিনটা ভাল আসে এবং তাদের দিনটা খারাপ যায় সেটা তো জানার উপায় নেই। তাই অনেক কিছুই ঘটতে পারে।’ ভারতকে মোকাবেলার জন্য দারুণ আত্মবিশ্বাস টাইগারদের। এ বিষয়ে সাকিব বলেন, ‘আমরা যা করেছি সেটাই যদি করে যেতে পারি এবং নিজেদের ছন্দ ধরে রাখতে পারি আমাদের পক্ষে যে কোন কিছুই সম্ভব। আমাদের আত্মবিশ্বাস এখন অনেক উঁচুতে এবং আমরা এ ম্যাচের জন্য সর্বোচ্চ দিয়েই নামব।’ বাংলাদেশ দল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল। সেই স্বপ্নটা সফল করার জন্য বাস্তবে অনেক কঠিন ছিল পথটা। কারণ নিজেদের চেয়ে শক্তিমত্তায় বহুগুণে এগিয়ে থাকা কোন একটি দলকে পরাস্ত করতে হবে। ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে শক্তির দিক থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই তারা। পুরো জাতিকেই আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়েছে। এবার প্রত্যাশা আরেকটু বেড়েছে। সেমিফাইনালের স্বপ্ন এখন বাংলাদেশের মানুষের। এ বিষয়ে সাকিব বলেন, ‘উপমহাদেশের মানুষ সবসময়ই অনেক বেশি প্রত্যাশা করে। আমরা যেহেতু ভাল খেলছি সে জন্য এখানেও কিছু প্রত্যাশা কাজ করছে। কিন্তু আমাদের খেলার প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং আমরা কতটা ভাল খেললাম সেটাই মূল চাবিকাঠি। সেটা করতে পারলেই আমার মনে হয় ফলাফলটা তার সদিচ্ছায় আমাদের পক্ষে আসবে। হারি কিংবা জিতি সেটা আসল নয়, ভাল খেলাটাই মূল বিষয়।’
×