ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চিকিৎসা বিজ্ঞানে মৌলিক অবদানের জন্য পুরস্কার পেলেন ডাঃ আবদুল্লাহ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৮ মার্চ ২০১৫

চিকিৎসা বিজ্ঞানে মৌলিক অবদানের জন্য পুরস্কার পেলেন ডাঃ আবদুল্লাহ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ও বয়স্কদের বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসায় নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ। ডেঙ্গুর মতো জটিল রোগের ক্ষেত্রে তিনি শুধু ওরস্যালাইনের মাধ্যমেই রোগীকে শতভাগ সুস্থ করে তুলছেন। তাঁর এই সাফল্যে দেশে ডেঙ্গু রোগে মৃত্যুর সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। অথচ, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এখনও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করছেন অনেক মানুষ। ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিজস্ব পদ্ধতি উদ্ভাবনের পাশাপাশি মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের জন্য লিখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অনেক বই। এর মধ্যে ‘শর্ট কেসেস ইন ক্লিনিক্যাল মেডিসিন’ বইটি অন্যতম। এই অসামান্য বইটি লেখার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রবর্তিত ‘ইউজিসি এ্যাওয়ার্ড ২০১৩’ পাচ্ছেন বিশিষ্ট মেডিসিন রোগ বিশেষজ্ঞ, জনপ্রিয় স্বাস্থ্য নিবন্ধকার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ। তাঁর এই সাফল্যে গর্বিত সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও চিকিৎসা পেশার সংশ্লিষ্টরা। ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহকে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ রাকিবুল ইসলাম লিটু বলেছেন, একজন ডাক্তারের মেধা, দক্ষতা, একনিষ্ঠতা, আন্তরিকতার গুণগুলো থাকা জরুরী। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ ডাক্তারের ক্ষেত্রেই এসব গুণের কোন না কোন একটির অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ। তাঁর মাঝে এসব গুণই বিদ্যমান। অধিকাংশ ডাক্তারই তাঁর পেশার মূল জায়গা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের চেয়ে রাজনীতিসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত কাজে বেশি সময় দিচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন। ফলে রোগীরা ডাক্তারদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন, দেশে সুচিকিৎসা না পেয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে। এ ব্যাপারে ডাক্তারদের আরও দায়িত্ববান করতে এবং দক্ষ ডাক্তার তৈরিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন ডাক্তারদের ডাক্তার। তিনি আরও বলেন, এতদিন আমরা বিদেশী লেখকদের বই পড়েছি। এখন বিদেশীরা আমাদের লেখকদের বই পড়ছে। বিষয়টি একই সঙ্গে আনন্দের ও গর্বের। শত ব্যস্ততার মাঝেও এ ধরনের মৌলিক একটি বই লেখার জন্য আবদুল্লাহ স্যারকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আরও একটি কথা না বললেই নয়, ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ স্যার রোগী এবং শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। উনি বাংলাদেশে বিশ্বমানের ডাক্তার। পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব ডাঃ কামরুল হাসান খান এ বিষয়ে বলেছেন, ‘শর্ট কেসেস ইন ক্লিনিক্যাল মেডিসিন’ বইটি আন্তর্জাতিক মানের। এ বইয়ের মাধ্যমে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। এ ধরনের বই ডাঃ আবদুল্লাহর কাছ থেকে ভবিষ্যতে আরও পাব, এমনই আশা। পুরস্কারপ্রাপ্তি তথা তাঁর এই বিরল সম্মানের জন্য ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ ভাইকে অভিনন্দন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি ডাঃ এম এ মজিদ বলেন, যোগ্য ব্যক্তিকে এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্তিতে তাঁকে অভিনন্দন। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি সম্পর্কে ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, যে কোন কাজের স্বীকৃতি পেলে ভালই লাগে। এজন্য সরকার ও ইউজিসিকে ধন্যবাদ। আমি সব সময় চেয়েছি মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে। সেই প্রয়াসেরই অংশ এই বই। মৌলিক ও উদ্ভাবনীমূলক গবেষণা কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে ইউজিসি মনোনীতদের মধ্য থেকে তিনি এই সম্মাননা পাচ্ছেন। চিকিৎসা শাস্ত্রের বই ও জার্নাল প্রকাশের জন্য ইউরোপের অন্যতম প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘এলসেভিয়ার’ থেকে তাঁর লেখা ‘শর্ট কেসেস ইন ক্লিনিক্যাল মেডিসিন’ বইয়ের জন্য তিনি এই পাচ্ছেন পুরস্কার। আগামী ২৯ মার্চ বিকেল ৩টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে অর্থ, সনদ ও সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মৌলিক গবেষণা ও প্রকাশনায় উৎসাহ দিতে ১৯৮০ সাল থেকে এ এ্যাওয়ার্ড চালু করে ইউজিসি। ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ যুক্তরাজ্য থেকে মেডিসিনের ওপর এমআরসিপি ও এফআরসিপি ডিগ্রী অর্জন করেন নব্বই দশকে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে এ পর্যন্ত তাঁর ৩০টির মতো গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ‘শর্ট কেসেস ইন ক্লিনিক্যাল মেডিসিন’ ও ‘লং কেসেস ইন ক্লিনিক্যাল মেডিসিন’সহ এই প্রকাশনা থেকে এ পর্যন্ত তাঁর ৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাঁর লেখা বই কেস হিস্ট্রি এ্যান্ড ডাটা ইন্টারপ্রিটেশন ইন মেডিক্যাল প্র্যাকটিস এবং ইসিজি ইন মেডিক্যাল প্র্যাকটিস প্রকাশ করেছে ভারতীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জেপি ব্রাদার্স। ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার দেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় বই দুটি স্প্যানিশ ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে। এমবিবিএস, এমডি, পোস্ট-নন গ্র্যাজুয়েট, এফসিপিএস ও এমআরসিপি শিক্ষার্থীদের জন্য সহজে পাঠযোগ্য, তথ্যবহুল ও ছবি সংবলিত এসব বই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছে। এছাড়াও একুশে বইমেলা-২০১৫ এ তাঁর বই ‘স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্বাচিত কলাম’ প্রকাশিত হয়েছে। এ বইয়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক ৪৭টি কলাম বয়েছে। প্রকাশের পর পরই বইটি পেয়েছে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা।
×