ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিটিআরসির সিদ্ধান্তে মোবাইল অপারেটররা নাখোশ

টানা দুই বছর সিম ব্যবহার না করলে মালিকানা থাকবে না

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৮ মার্চ ২০১৫

টানা দুই বছর সিম ব্যবহার না করলে মালিকানা থাকবে না

ফিরোজ মান্না ॥ টানা দু’বছর মোবাইল সিম ব্যবহার না করলে মালিকানা হারাবেন গ্রাহক। এরপর অপারেটরা অব্যবহৃত সিম কার্ডের নম্বরটি বিক্রি করে দিতে পারবেন। বিটিআরসির এমন সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেনি মোবাইল অপারেটরা। বরং তারা সিম প্রতিস্থাপন বা রিপ্লেসমেন্টেই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে। বিটিআরসির শর্তে দু’বছর অব্যবহৃত সিমে যদি কোন ইন্টারনেট ডাটা জমা থাকে তবে পরবর্তী গ্রাহককে তা প্যাকেজের সঙ্গে ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সম্প্রতি মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে এমন নির্দেশ দিয়েছে। তবে বিটিআরসির বেঁধে দেয়া শর্তে মোবাইল অপারেটররা ভিন্নমত পোষণ করেছে। তারা এমন সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী হিসেবে মনে করছে। প্রথম দিকে অপারেটররা বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছিল। এখন তাদের কাছে এ সিদ্ধান্ত কাল হয়ে দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসি তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় মোবাইল অপারেটরা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও পরে বিষয়টি নিয়ে তারা আপত্তি তুলেছে। বিটিআরসি যদিও মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ নির্দেশ জারি করে। দেশে বর্তমানে মোবাইল ফোনের গ্রাহকসংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার মতো। আর মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার। দেশে এত দ্রুত গতিতে মোবাইল গ্রাহক ও ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়ে যাবে তা বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটরা ভাবতে পারেনি। বিটিআরসি জানিয়েছে, টানা ৯০ দিন মোবাইল বন্ধ থাকলে ওই সিম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এক বছর সময় পর্যন্ত রিচার্জের মাধ্যমে সেটা চালু রাখতে পারবেন গ্রাহকরা। আর যদি সিমটি টানা ৩৬৫ দিনের বেশি অব্যবহৃত থাকে তবে এটি সচল করতে গ্রাহককে ১৫০ টাকা রিচার্জ করতে হবে। গ্রাহক যদি এক বছরের মধ্যে বন্ধ সংযোগ চালু না করেন, তাহলে ৭৩০ দিনের (দুই বছর) মধ্যে অনধিক ১০০ টাকা ফি দিয়ে তা সচল করতে পারবেন। তবে সংযোগ টানা দু’বছর বন্ধ থাকলেই যে মোবাইল অপারেটরা সিমটি বিক্রি করতে পারবেন তাও না। তাদের অন্তত দু’বছর পর্যন্ত ওই নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে। এ সময়ের পর বিটিআরসি বা অন্য কোন সংস্থার আপত্তি না থাকলে মোবাইল সংশ্লিষ্ট ওই নম্বর বিক্রি করতে পারবে। বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তেই আপত্তিতে তুলেছে অপারেটররা। অব্যবহৃত সিম কার্ডের নম্বর বিক্রির ক্ষেত্রেও শর্ত দিয়েছে বিটিআরসি। বিক্রি করার আগে অব্যবহৃত সিমের নম্বর সংশ্লিষ্ট আপারেটদের নিজস্ব ওয়েবসাইট, কাস্টমার কেয়ার সেন্টার ও বিটিআরসির ওয়েবসাইটে দিতে হবে। স্বচ্ছতা বজায় রেখেই ওই নম্বরগুলো বিক্রি করতে হবে। অব্যবহৃত নম্বর বিক্রির তিন মাস আগে কমপক্ষে তিনটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নম্বরগুলো জানাতে হবে। পুনরায় বিক্রি করা সংযোগ চলতি বাজারদরে বিক্রি করতে হবে বলেও বিটিআরসির শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে। নম্বর বিক্রি করে দেয়ার পরও ওই গ্রাহকের নিবন্ধন, ব্যবহার ও অন্যান্য তথ্য আপারেটদের সংরক্ষণ করতে হবে। অব্যবহৃত ইন্টারনেট ডাটাও গ্রাহকদের ফেরত দিতে হবে। এক্ষেত্রে পরের মাসে কেনা ডাটা প্যাকেজের সঙ্গে আগের জমা থাকা ডাটা যুক্ত হবে। অব্যবহৃত ডাটার ব্যবহার শেষ হলেই নতুন ডাটা ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে আপারেটরদের। বিটিআরসির শর্তে বলা হয়, ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের জানানোর জন্য নোটিফিকেশন পাঠাতে হবে। কারণ গ্রাহক কত এমবি ডাটা ব্যবহার করলো ও তার কত এমবি হাতে থাকছে এটা জানতে পারলে স্বচ্ছতা বাড়বে। গ্রাহক ঠকবে না। একশ’ মেগাবাইটের (এমবি) নিচে ডাটার ক্ষেত্রে একবার, একশ’ থেকে ৫শ’ এমবির ক্ষেত্রে দুবার ও ৫শ’ এমবির বেশি প্যাকেজের ডাটার ক্ষেত্রে গ্রাহককে তিনবার নোটিফিকেশন পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি। অন্যদিকে মোবাইল রিচার্জের ক্ষেত্রেও কত টাকায় কত দিন মেয়াদ হবে, তার ন্যূনতম সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
×