ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলার মাটিতে কোন শিশু অশিক্ষিত থাকবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৮ মার্চ ২০১৫

বাংলার মাটিতে কোন শিশু অশিক্ষিত থাকবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা, গোপালগঞ্জ, ১৭ মার্চ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশুদের জন্য জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শে গড়ে তুলতে হবে। বাংলার মাটিতে কোন শিশু অশিক্ষিত থাকবে না, প্রতিটি শিশু লেখাপড়া শিখবে, সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে। কোন শিশু না খেয়ে কষ্ট পাবে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না। শিশুদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত রচনা এবং জাতির পিতার চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়ন করার জন্যই আমরা শিশু শিক্ষাকে আরও সর্বজনীন করার পদক্ষেপ নিয়েছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৬তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস ২০১৫ উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু মাজার কমপ্লেক্সের পাবলিক প্লাজায় আয়োজিত শিশু সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু যেভাবে ’৭১ সালে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন, ঠিক সেইভাবে এ দেশের সকল মানুষ ঐক্যবদ্ধ করে অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচী দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ দিনটি বাঙালী জাতির জন্য একটি কলঙ্কময় দিন। সেদিন শুধু আমরা জাতির পিতাকেই হারাইনি, হারিয়েছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও আদর্শকে। শিশু, কিশোর ও তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আজকে আমরা সেই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেছি, মসজিদভিত্তিক শিক্ষা শুরু করেছি, ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে আমরা শিক্ষার নীতিমালা দিয়েছি এবং কোন বাবা-মা’র যাতে কষ্ট করে বই কিনে দিতে না হয়, আমরা সে ব্যবস্থাও করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার এখন প্রতি ইংরেজী নববর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে এসএসসি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করছি। তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা দিতে পারেননি, তাদের কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক থেকে শুরু করে ব্যাচেলর ডিগ্রী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আমরা বৃত্তি ও উপবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। পয়সার অভাবে কোন ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখবে না, এটা হতে পারে না। আমাদের দেশে এখন ঝরে পড়ার সংখ্যা কমে গেছে। উপস্থিত ছোট্ট ছোট্ট সোনামনি, শিশু-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী অনুরোধের সুরে বলেন, জীবনে বড় হতে হলে লেখাপড়া শিখতে হবে। মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। স্বাধীন দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি হত-দরিদ্র, গরিব বা প্রতিবন্ধীকে কখনও অবহেলা করবে না। তাদের সব সময় আপন করে নিবে, তাদের পাশে থাকবে- এটাই আমি চাই। ‘বঙ্গবন্ধ’ু সম্পর্কে বলতে গিয়ে শিশুদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ছোটবেলা থেকেই শিশুদের প্রতি অত্যন্ত দরদী ছিলেন। স্কুলে গিয়ে বই কিনতে পারে না এমন দরিদ্র কাউকে পেলে নিজের বই তাকে দিয়ে দিতেন। সেই সময়ে রাস্তা-ঘাটহীন দূর-দূরান্ত থেকে যারা আসত, তাদের তিনি নিজের ছাতা, গায়ের কাপড়-চোপড় দিয়ে দিতেন। অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী-বন্ধুদের বাড়িতে নিয়ে নিজের খাবার ভাগাভাগি করে খেতেন। তিনি বড় হয়ে এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম খেটেছেন। এসবে তাঁর বাবা-মার আদর ভালবাসা ও উৎসাহ ছিল বলেই তিনি এতবড় অবদান রেখে যেতে পেরেছেন এবং আমাদের একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাই আমরাও চাই, বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু সুন্দরভাবে বাঁচবে, প্রতিটি শিশুর ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে। বাংলাদেশের কোন মানুষ দরিদ্র থাকবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিভিন্ন তথ্যসেবা কেন্দ্র করে দিয়েছি। সেখানে এখন ছেলেমেয়েরা কাজ করে অর্থ উপার্জন করছে, নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য জাতির পিতা যে স্বাধীনতা আমাদের দিয়ে গেছে, সে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে গড়ে তোলা, এ দেশকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলা। আমরা চাই না, আমাদের দেশের মানুষ পুড়িয়ে মারা হোক, শিশুদের পুড়িয়ে মারা হোক বা অন্তঃসত্ত্বা মাকে পুড়িয়ে মারা হোক। বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ ও শিক্ষা আমাদের দিয়ে গেছেন, সে শিক্ষা নিয়েই আমরা এ দেশ গড়তে চাই। তিনি বলেন, আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। এ দেশ ও দেশের মানুষের জন্য একটি সুন্দর আবাসস্থল গড়ে তুলব, যে দেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাÑ এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। এর আগে সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথকভাবে জাতির জনকের সমাধি বেদিতে ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাষ্ট্রপতিকে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে বিদায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেন বঙ্গবন্ধু মাজার কমপ্লেক্সের পাবলিক প্লাজায় আয়োজিত জাতীয় শিশু সমাবেশে। এর আগেই সেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শে জীবন গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ঢল নামে শিশু-কিশোর ও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিশু-সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছোট্ট শিশু শিক্ষার্থী আশুরা রেজা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। শিশু সমাবেশে বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন। পরে তিনি দর্শক সারিতে গিয়ে বসে শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানের শেষে তিনি পুনরায় স্টেজে গিয়ে শিশুদের সঙ্গে ফটো-সেশন করেন। পরে তিনি সেখানে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও জেলা প্রশাসন আয়োজিত সাত দিনব্যাপী গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেন এবং মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। এরপর তিনি সরাসরি চলে যান বঙ্গবন্ধু ভবনে। সেখানে তিনি জোহরের নামাজ ও মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে বেলা তিনটার দিকে হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
×