ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৮ মার্চ ২০১৫

অগ্নিঝরা মার্চ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ১৮ মার্চ, ১৯৭১। উত্তাল-অগ্নিগর্ভ একাত্তরের এই দিনে দেশব্যাপী সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি চলছিল। একদিকে সংগ্রামের প্রস্তুতি চলছে, অন্যদিকে চলছিল বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের আলোচনা। একপর্যায়ে সবাই বুঝতে পারেন যে, আলোচনার নামে চলছে সময়ক্ষেপণ। বঙ্গবন্ধু আলোচনাতেই শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে আলোচনার নামে প্রহসনের অভিযোগ আনেন। তিনি স্বাধীনতার দাবিতে অটল থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করছিলেন। একাত্তরের এই দিনেই বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বাঙালী সৈনিকরা স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মীরা বাংলাদেশে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম করতে বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময় চালিয়ে যেতে থাকেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি নিতে থাকে। মহিলা পরিষদের মেয়েরাও পিছিয়ে ছিল না। তাদেরও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এদিকে পাকিস্তানী বাহিনী সামরিক ঘাঁটি শক্তিশালী করতে গোপনে গোলাবারুদ আর সৈনিক জড়ো করতে শুরু করেছিল। পাকিস্তানী শাসকরা স্বাধীনতার আন্দোলন দমাতে এভাবে একটু একটু করে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছিল। এদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা তেজগাঁও-মহাখালীতে শ্রমিকদের ট্রাকে হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন. ‘এ ধরনের উস্কানি আর সহ্য করা হবে না।’ ১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিল উত্তাল গণজাগরণের সময়। অসহযোগ আন্দোলনের সপ্তদশ দিবস ছিল ১৮ মার্চ। এদিনও সরকারী-বেসরকারী ভবনের শীর্ষে কালো পতাকা উড়িয়ে, অফিস-আদালতে অনুপস্থিত থেকে সর্বশ্রেণীর কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধু ঘোষিত সংগ্রামের কর্মসূচী সফল করে তোলেন। বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে জনতা সারাদিন মিছিলের পর মিছিল করে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও একাত্মতা ব্যক্ত করে। জনগণের কণ্ঠে উচ্চারিত সেøাগান ছিল- ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’ মিছিলকারীদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোমরা ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। জনগণের রক্তের সঙ্গে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না।’ স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন প্রভৃতি শক্তির প্রতি তাদের সরবরাহকৃত অস্ত্রের মাধ্যমে বাঙালী হত্যার অপচেষ্টা বন্ধ করার আবেদন জানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ অপর এক বিবৃতিতে বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে তারবার্তা প্রেরণ করে আসন্ন গণহত্যা ও যুদ্ধ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানীদের নিবৃত্ত করার অনুরোধ জানান।
×