ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

আমরা পৃথিবীতে বাঁচব আমাদের শর্তে

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১৮ মার্চ ২০১৫

আমরা পৃথিবীতে বাঁচব আমাদের শর্তে

ইতিহাসের অনিবার্যতা বাংলাদেশকে ঘিরে ধরেছে। একটি গরিব দেশ রাষ্ট্র হয়েছে। রাষ্ট্র হওয়ার উদ্ভব এবং লড়াই, জয় এবং পরাজয়, একদিকে ব্যক্তির জীবনযাত্রায় প্রভাব বিস্তার করেছে, অন্যদিকে মহাপৃথিবীর রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে নিজের জায়গা খুঁজে বের করেছে। একদিকে ব্যক্তির জীবনযাত্রায় প্রভাব বিস্তার করা, অন্যদিকে মহাপৃথিবীর রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে নিজের জায়গা খোঁজা, বাংলাদেশের ওপর একটা নৈতিক এবং রাজনৈতিক অনিবার্যতা তৈরি করেছে। মানুষের সামাজিক শ্রেণীবোধ প্রধানত সামগ্রিকভাবে শ্রেণীর অনিবার্য বিবর্তন, একই সঙ্গে মানুষের অনিবার্য ইতিহাসবোধ। এ দুটি বোধ নিয়ে একটা গরিব দেশ রাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করে। গরিব দেশের ইতিহাস এর মধ্য দিয়ে বোধগম্য হয়ে ওঠে। একটা প্যাটার্ন তৈরি হয় মানুষের চিন্তার, অনুভূতির, কাজের। এই প্যাটার্নটিই বাঙালী জাতির মধ্যে কাজ করেছে। একটা গরিব দেশ কিভাবে রাষ্ট্রে পর্যবসিত হয় সেই হিসাব-নিকাশটাই বুঝবার চেষ্টা করব। পৃথিবীর পরাক্রমশালী ধনী দেশগুলো তাদের প্রদর্শিত উন্নয়নের দিক থেকে, সামরিক ক্ষমতার দিক থেকে গরিব রাষ্ট্রগুলোর ওপর অসম্ভব চাপ প্রদান করা শুরু করে। তাদের বক্তব্য : বাঁচতে হলে তাদের পক্ষে থাকতে হবে। বিভিন্ন মহাদেশে এভাবে তারা ক্লায়েন্ট রাষ্ট্র তৈরি করে। ক্লায়েন্ট রাষ্ট্র অধস্তন রাষ্ট্র আর চাপ প্রদানকারী উন্নত রাষ্ট্র। গণতন্ত্র রক্ষা করার দায়িত্ব গ্রহণ করে উন্নত ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং গণতন্ত্র রক্ষা করার চূড়ান্ত দায়িত্ব : সামরিক হস্তক্ষেপ। অন্যপক্ষে প্রতিটি মহাদেশে পরাক্রমশালী ধনী রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে থাকে সাব-রিজিওনাল ধনী রাষ্ট্র। সাব-রিজিওনাল ধনী রাষ্ট্রগুলোর সাহায্য নিয়ে গরিব রাষ্ট্রগুলোর স্বাধীনভাবে টিকে থাকার ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান দেশগুলোর সঙ্গী এখন জাপান, ব্রাজিল, ভারত, চীন। ধনী শক্তিশালী রাষ্ট্রের ইচ্ছা সার্বভৌমত্ব। এই ইচ্ছাকে সম্মান না জানালে গরিব রাষ্ট্র অর্থায়ন থেকে বঞ্চিতই শুধু হবে না, জাতি হিসেবে অপমানিত হবে এবং বিভিন্ন অপবাদে ভূষিত হবে। সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের চিহ্ন, জন্মদাগ। সে চিহ্ন ধনী শক্তিশালী রাষ্ট্র যদি আস্তে আস্তে মুছে ফেলে, জন্মদাগ যদি নষ্ট করে তাহলে রাষ্ট্রের ব্যক্তিত্ব থাকে না। জাতির জন্মদাগ থাকে না। এখানেই ধনী রাষ্ট্রের চক্রান্ত। এই চক্রান্তের কাছে নতি স্বীকার করে আমাদের বেঁচে থাকা কি জরুরী? আমরা গরিব দেশ হতে পারি, গরিব রাষ্ট্র হতে পারি, কিন্তু আমরা বাঁচব, বেঁচে থাকব আমাদের শর্তে। আমাদের সার্বভৌমত্বের কেন্দ্র ভিত্তিমূল : আমরা, আমাদের শর্ত আমরা নির্ধারণ করি। আমাদের সাহস শেখ হাসিনার সাহস। আমাদের সাহসের সার্বভৌমত্বের পাহারাদার শেখ হাসিনা। আমাদের নিয়ে তিনি সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধে নেমেছেন। শেখ মুজিব এই প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু হয়েছেন। শেখ হাসিনা এই প্রক্রিয়ায় গরিব রাষ্ট্রের মান-ইজ্জত রক্ষার যুদ্ধে নেমেছেন। না হয় আমরা আরও কিছুদিন গরিব থাকব, কিন্তু সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে নয়। খালেদা জিয়া যে কাজটি করেছেন। এভাবে আমরা প্রকৃত জাতিতে পরিণত হয়েছি। আমরা পৃথিবীতে বাঁচব আমাদের শর্তে। এখানেই আমাদের ইতিহাসের অনিবার্যতা। লেখক : কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ
×