ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

থানা হেফাজতে সুজন হত্যা

বাদী নারাজি না দেয়ায় ওসিসহ ৫ জনের অব্যাহতি

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ১৭ মার্চ ২০১৫

বাদী নারাজি না দেয়ায় ওসিসহ ৫ জনের  অব্যাহতি

কোর্ট রিপোর্টার ॥ বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর বাদী নারাজি না দেয়ায় সুজন হত্যা মামলায় মিরপুর থানার ওসি সালাহউদ্দিন আহমেদসহ ৫ জন অব্যাহতি পেয়েছেন। সোমবার বাদী তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজের ভারপ্রাপ্ত বিচারক কেএম ইমরুল কায়েস বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদের অব্যাহতি দেন। অব্যাহতি পাওয়া অপর ৪ জন হলেন পুলিশের সোর্স নাসিম, ফয়সাল, খোকন ও পলাশ। এদিকে একই সঙ্গে আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তে অভিযুক্ত মিরপুর থানার এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদসহ অপর ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছে। বাকি ৪ জন হলেন মিরপুর থানার এএসআই রাজ কুমার, কনস্টেবল আসাদ, কনস্টেবল রাশেদুল, জনৈক মিথুন, ফয়সাল, নাসিম, ও খোকন। গত ১৩ জুলাই রাতে মিরপুর থানা হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ২০ জুলাই নিহতের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসি আদালতে এই মামলা করেন। বিচার বিভাগীয় তদন্তের পর গত ৬ নবেম্বর মামলাটিতে সিএমএম আদালত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে ওসি সালাহউদ্দিন আহমেদসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে তাদের অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করায় বাদী তার বিরুদ্ধে নারাজি দাখিল করবেন বলে কয়েক দফা সময় গ্রহণ করেন। কিন্তু গতকাল বাদী মমতাজ সুলতানা লুসি আদালতে হাজির হয়ে জানান যে, তিনি নারাজি দাখিল করবে না, প্রতিবেদন গ্রহণ করলে তার কোন আপত্তি নেই। সে অনুযায়ী আদালত প্রতিবেদন গ্রহণ করে। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন ২০১৩ এর ১৫ (১)(২)(৩)(৪) ধারায় মালাটি দায়ের করা হয়। মামলার আর্জিতে বলা হয়, ১৩ জুলাই রাত সোয়া ১২টায় বাদিনীর ভাড়া বাসায় বাড়িওয়ালা দরজা খুলতে বলে। বাদিনী দরজা খুলতেই এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাজ কুমার, কনস্টেবল আসাদ, কনস্টেবল রাশেদুল, জনৈক মিথুন, নাসিম, ফয়সাল, খোকন ও ফয়সালকে দেখতে পান। বাদিনীর স্বামী মাহবুবুর রহমান সুজন পুলিশ আসার খবরে রান্না ঘরের সানসেটে লুকিয়ে ছিলেন। সেখান থেকে এএসআই রাজ কুমার তাকে নামিয়ে আনে। এরপর এসআই জাহিদ ও এএসআই রাজ কুমার বাদিনীর স্বামীর গামছা দিয়ে মুখ ও চোখ বাঁধে এবং দুই হাত পেছনে দিয়ে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে টানতে টানতে বাথরুমে নিয়ে বালতি ভরা পানিতে মাথা চুবিয়ে লোহার রড দিয়ে বেদম প্রহার করে। এরপর এসআই জাহিদ বাদিনী, তার স্বামী ও শিশু পুত্র মোশারফকে নিয়ে রাত পৌনে দুইটার দিকে মিরপুর থানায় আসে। ওই সময় এসআই জাহিদ ওয়্যারলেসে একজনকে ফোন করে বলেন, স্যার হারামজাদাকে তো অর্ধেক মেরে থানায় নিয়ে এসেছি। এখন কি করব? অপর প্রাপ্ত থেকে উত্তর আসে, ওকে হয় ক্লোজ করে দাও না হয় ফাইনাল করে দাও। এরপর থানায় বাদিনী তার স্বামীর কান্নাকাটি ও চিৎকার শুনতে পান। পরদিন সকালে ওসি সালাহউদ্দিন তার কক্ষে বসিয়ে এক গ্লাস পানি আনিয়ে তাকে খেতে দেন। পানি খাওয়ার পর বাদিনীর শরীরে ঝিম ঝিম শুরু হয়। তখন ওসি বলেন, যদি স্বামীকে দেখতে চান তবে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষর করার পর ওসি বলেন, তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে বাদী জানতে পারেন তার স্বামীর লাশ ঢাকা মেডিক্যালে আছে। বাদিনীর স্বামীর লাশ ঢাকা মেডিক্যাল থেকে বাসায় আনার পর বাদিনী তার স্বামীর হাতের কব্জিতে কালো দাগ, পায়ের গোড়ালিতে কালো দাগ, পিঠের ডানপাশে কালো দাগ ও মাথার পেছনে কালশিটে দাগ দেখতে পান।
×