ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়ার দলগুলোর ঈর্ষণীয় সাফল্য!

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৭ মার্চ ২০১৫

এশিয়ার দলগুলোর ঈর্ষণীয় সাফল্য!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শঙ্কা ছিল আগে থেকেই। যেখানে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড আয়োজক সেখানে এশিয়ার টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর অতীত রেকর্ড তেমন সুখকর নয়। বরাবরই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের গতিময়, বাউন্সি আর শক্ত উইকেটে এশিয়ার দলগুলো দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নিজেদের স্বাভাবিক নৈপুণ্য দেখাতে। তবে বিশ্বকাপ মঞ্চটা যেন একেবারেই ব্যতিক্রম। ১৯৯২ সালে প্রথমবার এ ট্রান্স-তামসান অঞ্চলে অনুুষ্ঠিত বিশ্বকাপ থেকে শিরোপা জিতে গিয়েছিল পাকিস্তান। এবারের আসরেও গ্রুপপর্ব অতিক্রম করেছে এশিয়ার চার টেস্ট খেলুড়ে দেশÑ ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত ও শ্রীলঙ্কা যেমন দুর্দান্ত খেলেছে তেমনি আন্ডারডগ হয়েও বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ দল ইংল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপপর্ব থেকেই তাদের বিদায় দিয়ে। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে এর মধ্যে একটি দলের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ের পর ছিটকে যাবে একটি দল। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯২ চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে গত দুই বিশ্বকাপের রানার্সআপ শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হবে। শেষ পর্যন্ত শেষ চারে এশিয়ার তিন দল যেতে পারবে তো? এখন এটাই আলোচনার বিষয়। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাঠে খেলেছে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। আর সেসব ম্যাচে ভাল কিছু করার ইঙ্গিত আসেনি। এ কারণে অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন এবার এশিয়ান দলগুলোর ভরাডুবি ঘটবে বিশ্বকাপে। কিন্তু সেসবকে অমূলক প্রমাণ করেছে এশিয়ার চার দলই। বরং এ পরিবেশের সঙ্গে সুপরিচিত ইংল্যান্ড দলই উল্টো গ্রুপপর্ব থেকে ছিটকে গেছে এশিয়ার দুর্বলতম ক্রিকেট শক্তি বাংলাদেশের কাছে হেরে। বিশ্বকাপ মঞ্চ মোটামুটি তোলপাড় করে দিয়েছে এশিয়ার দেশগুলো। এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করা অপর দুটি দল আফগানিস্তান ও আরব আমিরাতও ছিল বেশ আলোচনায়। শেষ পর্যন্ত কোয়ার্টার ফাইনালে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত সব ম্যাচেই জিতে উঠে এসেছে। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ ‘এ’ গ্রুপে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ হিসেবে শেষ আটে পা রেখেছে। প্রথম দুটি ম্যাচ হেরে চরম চাপে থেকেও পাকিস্তান টানা চার ম্যাচ জিতে ‘বি’ গ্রুপের তৃতীয় হিসেবে পা রেখেছে কোয়ার্টারে। এখন আর মাত্র তিন ম্যাচ জিততে হবে যেকোন দলকে শিরোপা জয়ের জন্য। এশিয়ার চার দলের মধ্যে শিরোপা জয়ের সম্ভাবনাটাও তাই অনেক বেড়ে গেছে। এমনকি নিজেদের মধ্যেই হতে পারে শিরোপার লড়াইÑ সেই সম্ভাবনাটাকেও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। পাকিস্তানের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার ওয়াসিম আকরাম তেমনটাই বলছেন। তিনি বলেন, ‘এশিয়ার কোন দেশ শিরোপা জিতবে না, এবার তা ভাবার কারণ নেই। দলগুলো অনেক ভাল খেলেছে এবং শেষ পর্যন্ত যাওয়ার উপযুক্ত। যদিও নকআউটে এসে অতীত নৈপুণ্য আর বিবেচনার বিষয় নয়। নির্দিষ্ট দিনে কেমন খেলছে সেটার ওপরই নির্ভর করছে সব।’ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের দারুণ প্রত্যাবর্তন ঘটেছে বিশ্বকাপ দিয়ে। অস্ট্রেলিয়া সফরে বিশ্বকাপের আগে দুই মাসে কোন জয়ের দেখা পায়নি ভারতীয়রা। কিন্তু সেই দলটাই গ্রুপপর্বে টানা ৬ ম্যাচে অপরাজিত থেকেছে বিশ্বকাপ শুরুর পর। এ বিষয়টি পুরো বিশ্বকেই চমকে দিয়েছে। তবে আশ্চর্য হননি দলের পরিচালক রবি শাস্ত্রী। সাবেক এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘আমি মোটেও এটা নিয়ে আশ্চর্য নই। আমরা এখন ভালভাবেই বাকি কাজ করে যাওয়ার দিকে মনোযোগী। খুব বেশি সুদূরপ্রসারী চিন্তা নেই, তবে ছন্দটা ধরে রাখার দিকে দৃষ্টি আমাদের।’ শ্রীলঙ্কাই একমাত্র দল বিশ্বে যারা আইসিসির সব ইভেন্ট মিলিয়ে সবচেয়ে বেশিবার নকআউট ম্যাচগুলো খেলেছে। তাই এমন ম্যাচের চাপ মোকাবেলার সামর্থ্য আছে এবং অভিজ্ঞতাও আছে। এ বিষয়ে দলের কোচ সাবেক ক্রিকেটার মারভান আতাপাত্তু বলেন, ‘আমি গত কয়েক বছরে দেখেছি দলকে উন্নীত করেছেন অনেক ক্রিকেটার এবং আশা করছি এবারও সেটা ঘটবে। এমন চাপের ম্যাচগুলোর ক্ষেত্রে আমরা সেরাদের কাতারে।’ দুর্দান্ত খেলেই কোয়ার্টারে পা রেখেছে ১৯৯৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা। অপরদিকে বাংলাদেশ গত বছর বলতে গেলে পুরোটাই জয়শূন্য থেকে শেষ করেছে। একেবারে বছরের শেষভাগে দুর্বল জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ সিরিজ জিতে নিজেদের ফিরে পায় দলটি। তবে বাংলাদেশই সবচেয়ে কম অভিজ্ঞ দল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের পরিবেশে। গ্রুপপর্ব অতিক্রম করবে দলটি সেটাও চিন্তা করেনি কেউ। এ বিষয়ে দলের শ্রীলঙ্কান কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহে বলেন, ‘এখানে খেলার জন্য আমরা নিজেদের কৌশলে পরিবর্তন এনেছি। কিভাবে খেলতে হবে প্রতিদিনের জন্য আলাদা পরিকল্পনাও করেছি।’ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, ‘আমরা সাফল্য পাওয়ার জন্য ক্ষুধার্ত। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, আমরা নতুন এক উচ্চতায় উঠতে পারব। সবাই এখন দারুণ উত্তেজনায় আছে। তবে পেশাদার দল হিসেবে আমাদের সামনে যে কাজ রয়েছেÑ সেটার দিকে সবার মনোযোগ আছে।’
×