ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘চোকার’ প্রোটিয়াদের পরিকল্পনায় সাঙ্গা!

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৭ মার্চ ২০১৫

‘চোকার’ প্রোটিয়াদের পরিকল্পনায় সাঙ্গা!

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্বকাপে পুল-পর্বের খেলা শেষ। এবার লড়াই শেষ আটের। শিরোপার পথে আর তিনটি মাত্র ম্যাচ। বুধবার প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সোমবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দুটি বিষয় নিয়েই বেশি কথা বলতে হলো রাসেল ডমিঙ্গোকে। একÑ এবার কি ‘চোকার’ অপবাদ ঘোচাতে পারবে তাঁর দল? দ্বিতীয়তÑ কুমার সাঙ্গাকারাকে থামাতে কী পরিকল্পনা তাঁরা নিয়েছেন? প্রথম প্রশ্নে অনেকটাই বিরক্ত দক্ষিণ আফ্রিকা কোচ। আর দ্বিতীয়টিতে আত্মবিশ্বাসীÑ সাঙ্গাকারা তো বটেই, গোটা লঙ্কাকে থামিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নিতে মরিয়া প্রোটিয়ারা। ‘বিষয়টা আমার কাছে অদ্ভুত মনে হয়। আমরা কি এর আগে কখনই নকআউটে জিতি নাই? সেমিতে খেলেছি, শেষ আটে বড় বড় দলকেও হারিয়েছি। সুতরাং চোকার শব্দটি আসলে অতিরঞ্জিত, উৎসুকদের তৈরি! এ নিয়ে আমি আর একটি কথাও বলতে চাই না।’ সংবাদকর্মীদের প্রিয় প্রশ্নটি এভাবেই মাঠে পাঠিয়ে দেন ডমিঙ্গো। তবে সাঙ্গাকারার কথা উঠতেই সিরিয়াস। ‘হ্যাঁ, এটা মানতেই হবে। সাঙ্গাকারা অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলছে। বিশ্বকাপে প্রতিটি দলের জন্যই সে হুমকি। আমরা তাঁকে থামাতে সব রকম চেষ্টা করব। এটাও সত্য একজন ব্যাটসম্যান এক-দুই-তিন-চার দিন ভাল করতে পারেন। কিন্তু একটা না একটা সময় তারও খারাপ দিন আসে। আমার বিশ্বাস সেটি হবে কোয়ার্টার ফাইনাল। তাকে ফেরানোর এতটুকু সুযোগও হাতছাড়া করব না আমরা।’ সাঙ্গাকারাকে নিয়ে বাক্যব্যয়ের কারণ তাঁর অবিশ্বাস্য ব্যাটিংশৈলী। বিশ্বকাপে যেখানে একটি সেঞ্চুরিই কোন ব্যাটসম্যানের জন্য পরম আরাধ্য, সেখানে এবার ‘ব্যাক টু ব্যাক’ চার সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাস ওলটপালট করে দিয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী লঙ্কান উইলোবাজ। বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৫*, ১১৭*, ১০৪ ও ১২৪Ñ টানা চার সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়েন কিংবদন্তি সাঙ্গা। ছয় ম্যাচে আসরের সর্বোচ্চ ৪৯৬ রান তাঁর। গড় ১২৪। সুতরাং এই সাঙ্গাকারাকে নিয়ে না ভেবে উপায় আছে? তবে সাঙ্গাকারার পাশাপাশি ডমিঙ্গো পুরো দল নিয়েই পরিকল্পনা আঁটছেন। প্রোটিয়া কোচ আরও যোগ করেন, ‘শ্রীলঙ্কা শক্তিধর প্রতিপক্ষ। প্রতিটি পজিশনেই ওদের ভালমানের পারফর্মার রয়েছে, সাঙ্গাকারাকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা থাকলেও তাই লঙ্কানদের গোটা দল নিয়েও আমাদের গবেষণা অব্যাহত থাকছে। তাদের দুর্বলতা খুঁজতে যথারীতি কাজ করে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় বিষয়, ছেলেরা জয় ছাড়া আর কিছুই ভাবছে না।’ কোচের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বাস্তবতাটা আসলেই কঠিন। যে বাস্তবতার কথা বলতে গেলে অবধারিতভাবে উঠে আসে ‘চোকার’ প্রসঙ্গ। বরাবরই দুর্দান্ত খেলে চাপের ম্যাচে ভেঙ্গে পড়ার রীতিটা দক্ষিণ আফ্রিকার পুরনো। আধুনিক ক্রিকেটের চিত্তাকর্ষক ও দুরন্ত শক্তি দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার সুযোগ পাওয়ার পর থেকে সেমিফাইনাল খেলেছে ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭ সালে। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে ১৯৯৬ ও ২০১১ বিশ্বকাপে। এছাড়া বিশ্বকাপের পর বিশ্ব ক্রিকেটের দ্বিতীয় বৃহত্তর আয়োজন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ২০০০, ২০০২, ২০০৪, ২০০৬, ২০০৯ ও ২০১৩ সালে তারা সর্বোচ্চ সেমিফাইনাল খেলা দল। এখানেই শেষ নয়। ২০০৭, ২০০৯, ২০১০, ২০১২ ও ২০১৪ টি২০ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে দু’বারই তারা ফেরে সেমিফাইনাল থেকে! বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের সব লড়াইয়ে একটা দলের এমনটা হতেই পারে। কিন্তু প্রোটিয়ারা একাধিকবার বিদায় নেয় অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে। কখনও নিশ্চিত জেতা ম্যাচ হাতছাড়া করে, কখনও নাটকীয় টাইয়ের পর হেড টু হেডের খড়গে কাটা পড়ে, কখনও বা বৃষ্টি আইনের অদ্ভুত আছড়ের শিকার হয়ে! বিষয়টা বড় হয়ে আলোচনায় উঠে আসে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে। সেবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে নাটকীয় সেই টাইয়ের পরই আসলে ‘চোকার’ উপাধি পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। অসি তারকা স্টিভ ওয়াহর ক্যাচ ঠিকমতো তালুবন্দী না করেই উদযাপন শুরু করেন হার্সেল গিবসনরা।
×