ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতকে মোকাবেলায় হাতুরার বাড়তি পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৭ মার্চ ২০১৫

ভারতকে মোকাবেলায় হাতুরার বাড়তি পরিকল্পনা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিশ্বকাপে ভারতকে হারানোর অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশ দলের আগেও। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে তাদের হারিয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। এবারও সেই ভারতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী বৃহস্পতিবার মেলবোর্নে কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। জয় ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা নেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। ৮ বছর আগের সেই স্মৃতিটাকে সঙ্গী করে ভারতকে হারানোর মিশন নিয়েই নামবে বাংলাদেশ। তবে ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার সঙ্গে এ ম্যাচের কোন সম্পর্কই নেই। ভাবতে হবে চলতি আসর নিয়ে। এমনটাই মনে করছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ হাতুরাসিংহে। সেজন্য এবার ভারতকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনাই আঁটছেন তিনি। যে মঞ্চে লড়াই সোমবার সেই মেলবোর্নে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের ফাঁকে এসব কথা বলেন হাতুরাসিংহে। ২০০৪ সালেও ঘরোয়া সিরিজে এবং ২০১২ সালে এশিয়া কাপে শক্তিশালী ভারতীয় দলকে হারিয়েছে বাংলাদেশ; আর ২০০৭ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বেই ভারতকে ছিটকে দিয়েছিল। সেবার বাংলাদেশ তাদের হারিয়ে সুপার এইটে উঠে। তবে সেসব এখন অতীত। এবার ভাবতে হবে নতুন করে। চলতি আসরে দুর্দান্ত ফর্মে আছে গত বিশ্বকাপের শিরোপাধারী ভারত। অপরাজিত থেকেই ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ আটে উঠে এসেছে তারা। এ বিষয়ে কোচ হাতুরাসিংহে বলেন, ‘আমি মনে করি না আমাদের সেটা নিয়ে ভাবার আদৌ কোন কারণ আছে। কারণ সেটা অতীত এবং মনে করিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত আমি সেটা নিয়ে ভাবিইনি কখনও। এমনকি ওই ম্যাচ সম্পর্কে আসলে আমি তেমন জানিও না।’ পোর্ট অব স্পেনে ভারতীয় দলকে হারানোর সে মধুর স্মৃতি নিয়ে বর্তমান বাংলাদেশ দলে শুধু আছেন চার ক্রিকেটারÑ মাশরাফি, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম ও তামিম ইকবাল। আর এ চতুষ্টয় সে অবিস্মরণীয় জয়ে মুখ্য ভূমিকাই রেখেছিলেন। মাশরাফি দুর্দান্ত এক স্পেলে ধসিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় ব্যাটিং আর তামিম, সাকিব ও মুশফিক হাঁকিয়েছিলেন হাফসেঞ্চুরি। গত বছর মে মাসে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেয়া হাতুরাসিংহে অতীতের সেই দলটির সঙ্গে বর্তমান দলের পার্থক্য নিয়ে বলেন, ‘আমি বলতে পারব না অতীতে আসলে কী ঘটেছিল? এখন যেটা আমি বলতে পারি তা হচ্ছে নিজেদের ওপর আমাদের যথেষ্ট বিশ্বাস আছে এবং নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে নৈপুণ্য দেখাতে চাই। সেজন্য যতটা সম্ভব সেরা প্রস্তুতিই গ্রহণ করব আমরা।’ হাতছানি দিচ্ছে প্রথমবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠার। সেজন্য কঠিন এক মিশনে জয়ী হতে হবে ভারতের বিরুদ্ধে। গ্রুপপর্বে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। শক্তিশালী ইংল্যান্ডকেও হারিয়ে দিয়েছে আর স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচ উপহার দিয়ে হেরেছে। তবে এসব নিয়েও আর ভাবছেন না হাতুরাসিংহে। এখন শুধু তাঁর ভাবনায় ভারত। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্টভাবে অন্য কোন ম্যাচ নিয়ে আর বিশ্লেষণ করছি না। আমরা দেখছি ভারতের বিরুদ্ধে কিভাবে ম্যাচ খেলা যায়। প্রতিটি ম্যাচের জন্য আমাদের আলাদা পরিকল্পনা আছে যে আমরা কিভাবে মোকাবেলা করব। মাশরাফির নিজের কিছু পরিকল্পনা আছে এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনিই সিদ্ধান্ত নেন একাদশে কে খেলবে। তিনি নিজেও নিজের ব্যাপার সিদ্ধান্ত নেবেন।’ মেলবোর্নে চলতি বিশ্বকাপেই আরেক এশিয়ান পরাশক্তি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলেছে বাংলাদেশ। তবে সে ম্যাচে হেরেছে দল কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই। ওই ম্যাচের অভিজ্ঞতা অনুসারেই দল গড়া হবে ভারতের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে হাতুরাসিংহে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আমরা এখানে ম্যাচ খেলেছি। আমার মনে হয় স্পিন তেমন একটা কার্যকর নয়। আর ভারতীয় দল স্পিন মোকাবেলার ক্ষেত্রে অন্যতম সেরা একটি দল। এখন পর্যন্ত চলতি আসরে তারা দুর্দান্তও খেলেছে। তাই আলাদা পরিকল্পনা করতে হবে আমাদের।’ ভারতীয় দল ব্যাটিং শক্তির আধার। তবে সবসময়ই দলটির বোলিং দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবার সেটা নেই। কারণ ভারতীয় পেসাররা এখন পর্যন্ত দারুণ বোলিং করেছেন। হাতুরাসিংহেও জানালেন অতীতে পেস বোলিংয়ে তেমন ভাল না হলেও এবার দারুণ সাফল্য পেয়েছেন তাঁরা। এ বিষয়ে হাতুরাসিংহে বলেন, ‘সাধারণত ভারতীয় দলের মূল শক্তি ব্যাটিংয়ে। এবারও সেটার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আসল ব্যাপার হচ্ছে এবার তাঁদের পেসাররাও অনেক ভাল বোলিং করছেন। এ বিভাগে বরাবরই পূর্বে এতটা শক্তিশালী ছিল না দলটি। আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে ভারতীয় শক্তিকে মোকাবেলার জন্য আমাদের কী কী শক্তি মজুদ রয়েছে এবং আমরা কিভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।’
×