ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বল্প সময় অল্প শ্রম- ধান রোপণ কর্তন মাড়াই, সবই মেশিনে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৭ মার্চ ২০১৫

স্বল্প সময় অল্প শ্রম- ধান রোপণ কর্তন মাড়াই, সবই মেশিনে

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। কৃষি বিভাগ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছে। ফলে সর্বস্তরে কৃষি খাতে যান্ত্রিকীকরণের প্রসার ঘটায় ক্রমেই এ জনপদের চাষীদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটতে শুরু করেছে। একসময়ের একমাত্র লাঙ্গল-হালের বলদ, মই প্রযুক্তি পরিহার করে বর্তমানে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের সাহায্যে অতি অল্প সময়ে, স্বল্প পরিশ্রমে অধিক পরিমাণে জমি চাষ করা হচ্ছে। কৃষি উৎপাদনের সামগ্রিক ব্যবস্থায় যান্ত্রিকীকরণ অবদান রাখছে। বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণেও চাষীরা কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তা নিচ্ছেন। বর্তমানে এ জনপদে ধানের চারা রোপণ, ধান কর্তন ও মাড়াইÑ সবই হচ্ছে প্রযুক্তিগত মেশিনের সাহায্যে। সরকারী পর্যায়ে দেশের কৃষকদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য ও দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বেশি ফলনের লক্ষ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। যে কারণে উচ্চ ভূমিতেও সেচ, সার ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় চাষাবাদ করে সোনার ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে পাম্প এবং গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে পানি সেচ দেয়া, পোকা মাকড় দমনে বিষমুক্ত কীটনাশক ব্যবহার, অধিক ফসল উপাদনের জন্য জমিতে ব্যবহার করা হচ্ছে গুটি ইউরিয়া সার। বীজ সংরক্ষণ ব্যবস্থাও হচ্ছে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে। বরিশালের জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল আলম বলেন, দেশের খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির প্রসার এখন সময়ের দাবি। সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে কৃষি বিভাগ ও কৃষকের যৌথ প্রচেষ্টায় জনসংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার পরেও খাদ্য উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে চাষীরা ফসল উৎপাদন করায় গত কয়েক বছর থেকে দক্ষিণাঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে উদ্বৃত্ত থাকছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলার চাষীদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ পাওয়ার টিলার, পাওয়ার পেসার, গুটি ইউরিয়া বানানোর মেশিন (ব্রিকেট), গুটি পোতা মেশিন প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতি মৌসুমে চাষীদের আরও চাষাবাদে উৎসাহ যোগাতে উপজেলার বিভিন্নস্থানে প্রদর্শনী প্লট প্রদর্শন করা হচ্ছে। এ সমস্ত প্রদর্শিত প্লট দেখে চাষীরা নানা ধরনের প্রযুক্তির সঙ্গে দ্রুত পরিচিত হতে পারায় খুব অল্প সময়ে এর সুফল সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। বরিশাল জেলার দু’বারের শ্রেষ্ঠ মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বলেন, ইতোমধ্যে তাঁর ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের ধান-বীজ সরবরাহ, মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ, লক্ষ্যাভিমুখী কৃষি সহায়তা প্রদান, কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি ও তদারকি, সেচের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত ব্যবস্থা, রাসায়নিক সারের পরিবর্তনে ভার্মি কম্পোস্ট সার জৈব সার উৎপাদন এবং নামমাত্র মূল্যে বাজারজাতকরণ, কৃষিপণ্যের বহুমুখীকরণসহ বাজারজাত-করণের সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি অর্জনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষকদের সচেতন করা হয়েছে। ফলে গত চার বছর থেকে ইউনিয়নের বার্ষিক খাদ্য চাহিদার চেয়ে প্রতিবছর ৭৭৬ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। বরিশালের কৃষক বন্ধু ও গৌরনদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়ে এর আওতায় রাইস প্লিন্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধানের চারা রোপণ, আধুনিক পদ্ধতিতে ধান কর্তন ও মাড়াই ইতোমধ্যে চাষীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তা ছাড়াও ধানের নতুন নতুন জাতের সম্প্রসারণ এবং ধান, পাট ও সবজিতে গুটি ইউরিয়া, সুষম সার ব্যবহার এবং এমপিটে মিশ্র সম্প্রসারণ প্রযুক্তিসহ নানা ধারনের প্রযুক্তির সঙ্গে দিন দিন চাষীরা যান্ত্রিকীকরণের সঙ্গে পরিচিত লাভ করার ফলে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চাষীরা এর সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে।
×