ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপারেটররা উদ্ভূত সমস্যার সমাধান না হলে অংশ নেবে না ॥ অর্থমন্ত্রীকে বিটিআরসির চিঠি

টেলিযোগাযোগ সেক্টরে তরঙ্গ বরাদ্দের নিলাম হবে কবে?

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৭ মার্চ ২০১৫

টেলিযোগাযোগ সেক্টরে তরঙ্গ বরাদ্দের নিলাম হবে কবে?

ফিরোজ মান্না ॥ টেলিযোগাযোগ সেক্টরে তরঙ্গ বা স্পেকট্রাম বরাদ্দের সবচেয়ে বড় নিলাম আয়োজন নিয়ে তৈরি জটিলতা নিরসনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সম্প্রতি বিটিআরসির উপ-পরিচালক মোঃ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, নিলাম কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিটিআরসি চেয়ারম্যান, এনবিআর চেয়ারম্যান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এবং মোবাইল ফোন অপারেটর সিইওদের সঙ্গে একটি বৈঠক করা জরুরী। এ জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী সময় দিলেই বিটিআরসি তরঙ্গ বরাদ্দ বিষয়ে বৈঠকের আয়োজন করবে। সমস্যা সমাধান না হলে অপারেটররা নিলামে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিটিআরসির ১৭৫তম কমিশন বৈঠকে টুজি ও থ্রিজি নিলামের সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে টুজি ও থ্রিজি সেবা দেয়া মোবাইল ফোন অপারেটররাই কেবল এ নিলামে অংশ নিতে পারবে। আগামী ৩০ এপ্রিল এ নিলাম অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত অনুমোদন ও অনুমোদিত খসড়া গাইডলাইন চূড়ান্ত করার জন্য এরই মধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই নিলামের কার্যক্রম শুরু করা হবে। খসড়া গাইডলাইনে ১৮০০ মেগাহার্টজের জন্য নিলামের ভিত্তি মূল্য ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২৪০ কোটি টাকা) এবং ২১০০ মেগাহার্টজের জন্য ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১৭৬ কোটি টাকা) ধরা হয়েছে। আর ১৮০০ ও ২১০০ মেগাহার্টজ উভয় তরঙ্গের ক্ষেত্রে বিড করার জন্য আর্নেস্ট মানি ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। অপারেটররা মনে করছেন নিলামে টাকার অঙ্ক অনেক বেশি। তাই তাদের এ নিলাম নিয়ে আপত্তি রয়েছে। পরে বিটিআরসি অর্থমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। জানা গেছে, বিটিআরসি টুজি ও থ্রিজি স্পেকট্রাম বরাদ্দে নিলামের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আপারেটরদের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। এবার টুজি (দ্বিতীয় প্রজন্ম) ও থ্রিজি (তৃতীয় প্রজন্মের) মোবাইলের জন্য ১৮০০শ’ ও ২১০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেয়া হবে। এ জন্য বিটিআরসি একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। গাইডলাইন অনুযায়ী ৩০ এপ্রিল এ নিলাম অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। তবে স্পেকট্রামের যে দাম ধরা হয়েছে, তাতে অপারেটররা ওই দামে স্পেকট্রাম কিনতে রাজি নন বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে। এরপরও অপারেটররা আবেদন ফরম কিনেছে। বিটিআরসির প্রস্তাব অনুযায়ী, এ মাসের শুরু থেকে নিলামে অংশ নেয়ার জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। ১৯ মার্চ প্রাক-নিলাম বৈঠক হবে। ২ এপ্রিল নিলামের আবেদন গ্রহণ করা হবে। ৯ এপ্রিল উপযুক্ত আবেদনকারীদের তালিকা প্রকাশ করার কথা রয়েছে। ২০ এপ্রিলের মধ্যে বিড আর্নেস্টমানি জমা দিতে হবে এবং ৩০ এপ্রিল নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। প্রস্তাবে ১৮০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গের ১০ দশমিক ৬০ + ১০ দশমিক ৬০ মেগাহার্টজ খালি আছে। এ তরঙ্গকে দুটি সøটে ভাগ করে নিলাম হবে। এক্ষেত্রে টেলিকম সেবা দেয়া অপারেটরদের মধ্যে যাদের আগের রাজস্ব বকেয়া আছে ও যারা আগেই ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গের বেশি বরাদ্দ নিয়েছেন, তারা প্রাথমিকভাবে আবদনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না। নিলামে পুরো স্পেকট্রাম বিক্রি না হলে সেক্ষেত্রে ২০ মেগাহার্টজের বেশি তরঙ্গ ব্যবহারকারীরাও নিলামে অংশ নিতে পারবেন। ২১০০ মেগাহার্টজের ক্ষেত্রে ১৫ + ১৫ মেগাহার্টজ বরাদ্দ দেয়া হবে। এ তরঙ্গে তিনটি সøটে ভাগ করে নিলাম হবে। যেসব অপারেটর বর্তমানে থ্রিজি সেবা দিচ্ছে তারাই কেবলমাত্র এ তরঙ্গের নিলামে অংশ নিতে পারবে। একজন অপারেটর দুটির বেশি সøট কিনতে পারবে না। কমিশন বৈঠকের সিদ্ধান্তে ফোরজির জন্য ৭০০ মেগাহাটর্জ ব্যান্ড অবমুক্ত করার গাইডলাইন প্রণয়নেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। টুজি ও থ্রিজি নিলামের পরেই ফোরজি (চতুর্থ প্রজন্মের) স্পেকট্রাম নিলাম অনুষ্ঠান করা হবে। এ জন্য বিটিআরসি একটি খসড়া গাইডলাইন তৈরির কাজ চলছে। এ গাইডলাইনটি বিটিআরসির ওয়েবসাইটে রেখে জনমত যাচাইয়ের পরেই নিলামের দিন তারিখ ঠিক করার কথা রয়েছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, টুজি ও থ্রিজি সেবা দেয়া মোবাইল ফোন অপারেটরদের আরও বেশি স্পেকট্রাম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা থেকেই এ নিলাম অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বছরের প্রথম ভাগেই টুজি ও থ্রিজি স্পেকট্রামের এক দফা নিলাম অনুষ্ঠানের ফলে ফোরজির জন্য ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নিলামের বিষয়টি পিছিয়ে যাবে। তবে এখন পর্যন্ত এ বছরের মধ্যেই ফোরজি নিলামের টার্গেট নিয়েই আছে বিটিআরসি। ফোরজি বাজারে এলে তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। তবে এর আগে দেশের চার মোবাইল টেলিফোন অপারেটর টেলিকম পলিসি সংশোধন, স্পেকট্রামের ওপর ভ্যাট, সিম রিপ্লেসমেন্টের বিষয়ে বেশকিছু সমস্যার সমাধান চাইছে। কয়েকটি সমস্যা উল্লেখ করে গ্রামীণফোনের পক্ষে টেলিনর, বাংলালিংকের পক্ষে ভিম্পেলকম, রবির পক্ষে আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও এয়ারটেল বাংলাদেশের পক্ষে ভারতীয় এয়ারটেলের প্রধান নির্বাহীর স্বাক্ষর করা একটি চিঠি গত ১ মার্চ পাঠানো হয় বিটিআরসিসহ অর্থমন্ত্রীর কাছে। এতে বলা হয়েছে, সমস্যাগুলো সমাধান না করা হলে আগামী ৩০ এপ্রিল আয়োজিত তরঙ্গ নিলামে অংশ নেবে না অপারেটররা। এ কারণেই বিটিআরসি অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে। অপারেটরদের দাবি সিমকার্ড প্রতিস্থাপন করসংক্রান্ত মামলার সমাধান, নিলামে বিক্রি হওয়া তরঙ্গমূল্যের ওপর ধার্য করা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার, বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ আইন সংস্কার, তরঙ্গ ব্যবহারে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, কর কাঠামোর সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিটিআরসি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সব সমস্যার সমাধান করা হয়নি। বিশেষ করে সিম প্রতিস্থাপন করসংক্রান্ত বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে মোবাইল ফোন অপারেটররা।
×