ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের বাড়তি অঙ্ক!

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৬ মার্চ ২০১৫

বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের বাড়তি অঙ্ক!

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ যে কেমন দল, নিজেদের দিনে কতটা ভয়ঙ্কর; তা এর আগে বুঝেছে ভারত। ২০০৪ সালে প্রথমবার, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার এবং ২০১২ সালে এশিয়া কাপে তৃতীয়বার ভয়ঙ্কর বাংলাদেশকে দেখেছে ভারত। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হেরেছে। সেই হারের ভয় থেকেই বাংলাদেশকে নিয়ে এখন গভীর ভাবনায় পড়ে গেছে ভারত। দশ বছর আগে ’০৪ সালে সিরিজের একটি ম্যাচ হারলেও ’০৭ সালে বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ভারত! আর ’১২ সালে হারে খেলতে পারেনি এশিয়া কাপের ফাইনালে। যখনই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছে ভারত, তখনই ভারতের বিপদ এসেছে। এবার মেলবোর্নে বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালেও কি সেই রকম কিছুই ঘটবে? এ ম্যাচ তো আবার বাংলাদেশের জন্য বিশেষ ম্যাচ। পরিত্যক্ত হওয়া ৮ ম্যাচ বাদ দিলে তো ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ নিজেদের ৩০০তম ম্যাচ খেলতে নামবে। কাঁপছে ভারত। বাংলাদেশ সেই তুলনায় শান্তিতেই আছে। প্রথম লক্ষ্য ছিল, গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারানো। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এরপর যে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হবে, লক্ষ্য নির্ধারণ ছিল; সানন্দ্যেই নক আউট পর্বে খেলার যোগ্যতা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। তাই হারানোর এখন আর কিছুই নাই। যদি ভারতকে বধ করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে আরও বড় প্রাপ্তি যোগ হয়ে যাবে। এমন স্বস্তি, স্বাচ্ছন্দ্যই ভারতকে চিন্তায় ফেলছে। ভারত শক্তিশালী দল। আবারও যদি বাংলাদেশের কাছে হার হয়ে যায়। সেই চাপই এখন ভারতের ঘাড়ে আছে। একটি পরিত্যক্ত হওয়া ম্যাচ বাদ দিলে বাংলাদেশের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ২৭ ম্যাচ খেলে। ভারত জেতে ২৪টি ম্যাচে। হারে ৩টি ম্যাচে। সেই তিন ম্যাচের সাক্ষী ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। এশিয়া কাপে তো ধোনি নিজেই অধিনায়ক ছিলেন। বাংলাদেশের মাশরাফি বিন মর্তুজাও ভারতের বিপক্ষে তিন জয়ী ম্যাচের সাক্ষী ছিলেন। তবে কোন ম্যাচেই নেতৃত্বে ছিলেন না। এবার বিশ্বকাপের মতো আসরে উড়তে থাকা বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি এবং বাংলাদেশ যে ম্যাচটিতে জিতবে না, তাও বলা যায় না। জিতেও যেতে পারে। হোক বিশ্বকাপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল ভারত। ভারত যে হারতেও পারে, সেই আশঙ্কা সাবেক ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীও করছেন। শুধু সরাসরি বলছেন না। ২০০৪ সালে যে ভারতের বিপক্ষে ইতিহাসের প্রথম জয়টি পায় বাংলাদেশ, সেই ম্যাচের অধিনায়ক ছিলেন গাঙ্গুলী। তিনি ম্যাচটি নিয়ে ভারতকে সতর্ক করছেন। তবে ভারত নিজ দল বলে কথা। ারবেই এমন তো আর বলতে পারেন না। তাই স্টার স্পোর্টসে বলেছেন, ‘আমি তাদের (বাংলাদেশ) শেষ তিন-চারটা বিশ্বকাপে দেখছি, ইংল্যান্ডকেও হারাতে দেখেছি। নিউজিল্যান্ডের ওপর তারা প্রচুর চাপ তৈরি করেছে। বাংলাদেশ এখন অনেক উন্নত। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতেই হবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তাদের যে উন্নতি হয়েছে সেটা এ মুহূর্তে ভারতকে হারানোর জন্য যথেষ্ট নয়।’ কেন ভারতকে হারানোর জন্য বর্তমান উন্নতি যথেষ্ট নয়, সেই ব্যাখ্যাও দিলেন গাঙ্গুলী। বললেন, ‘তারা ভারতকে ২০০৭ সালে (বিশ্বকাপে) হারিয়েছে। বিশ্বকাপে বড় দলকেও হারিয়েছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি, ভারত অনেক এগিয়ে আছে।’ প্রথমবার বাংলাদেশ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়েছে। কিন্তু গাঙ্গুলীর কাছে মনে হচ্ছে, কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার চাপ নিতে পারবে না বাংলাদেশ, ‘বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলার চাপও বাংলাদেশকে সামাল দিতে হবে, যা মেলবোর্নের মতো বড় মাঠে হাজার হাজার ভারত সমর্থকের সামনে সহজ হবে না।’ ভারতকে এগিয়ে রাখলেও বাংলাদেশ ব্যাটসম্যান-বোলারদের প্রশংসাই করেছেন গাঙ্গুলী। বলেছেন, ‘মাহমুদুল্লাহকে মানসম্পন্ন খেলোয়াড় মনে হয়েছে। সে সময় নেয় এবং উইকেটের উভয় দিকেই শট খেলে। তাসকিনকেও দেখেছি; সেও মানসম্পন্ন বোলার এবং যে অনেক দলে খেলতে পারে।’ শেষ সময়ে এসে গাঙ্গুলী ঠিকই বুঝিয়েছে দেন, বাংলাদেশ ম্যাচটিতে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে এবং কেন বাংলাদেশকে জয়ের ফেবারিট তকমায় রাখলেও বলতে পারছেন না, ‘যেহেতু তারা ভারতের বিপক্ষে খেলছে, সেহেতু বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি সৌভাগ্য কামনা করতে পারছি না। কিন্তু তারা এই বিশ্বকাপে ভাল করছে।’ শুধু সৌরভ গাঙ্গুলী নন, ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কারও বাংলাদেশকে নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। আর বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তো বলেই দিয়েছেন, ‘এখন সামনে কোয়ার্টার ফাইনাল। যে দলই সামনে আসুক, নিজেদের খেলাই খেলব এবং জেতার জন্যই খেলব।’ ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি নিজেও অবশ্য চাপ অনুভব করছেন। তাই তো বলেছেন, ‘আমি অনেকবারই বলেছি, যে কোন টুর্নামেন্টে খেলাই চাপের। যে দলই প্রতিপক্ষ হোক, চাপ থাকবেই। এখন দেখার বিষয় সেই চাপকে কিভাবে সামাল দিতে পারি।’ উত্তাপটা বুঝতে পারছেন ধোনিও। বাংলাদেশকে নিয়ে যে কত ভাবনা আছে, তাই বোঝা যাচ্ছে।
×