ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট

শ্যালা নদী ও পাটুরিয়ার দুর্ঘটনায় দায়ী নৌযান মাস্টাররাই

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৬ মার্চ ২০১৫

শ্যালা নদী ও পাটুরিয়ার দুর্ঘটনায় দায়ী নৌযান  মাস্টাররাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নৌযান পরিচালনার যথাযথ সংকেত ব্যবহার না করায় সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী নৌযান এবং পাটুরিয়ায় লঞ্চ দুর্ঘটনার জন্য নৌযানগুলোর মাস্টারদের দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। শ্যালায় নৌযান দুর্ঘটনায় দায়ী এমটি টোটালের মাস্টার মোঃ মোস্তফাকে দায়ী করা হয়েছে। সংকেত ব্যবহার না করা, দুর্ঘটনার তথ্য গোপন এবং দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে নাবিকদের উদ্ধার এগিয়ে না আসায় তাকে দায়ী করা হয়েছে। তবে মরে গিয়েও দায় এড়াতে পারেননি ও.টি. সাউদার্ন স্টার-৭ এর মাষ্টার মো. মোখলেসুর রহমান। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো মোখলেসুর রহমানকে দায়ী করে বলা হয়েছে, ঘন কুয়াশার মধ্যে নোঙ্গর করে থাকলেও সাউদার্ন সংকেত ব্যবহার করেনি। একইভাবে পাটুরিয়ায় লঞ্চ দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনেও কার্গো এবং লঞ্চের মাস্টারকে দায়ী করা হয়েছে। বলা হচ্ছে নার্গিস-১ এবং এম.ভি মোস্তফার কোন মাস্টারই নৌপরিচালনার যথাযথ সংকেত ব্যবহার করেননি। গত ৯ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে ভোরে বাগেরহাট জেলার শ্যালা নদীতে তেলবাহী নৌযান ও. টি. সাউদার্ন স্টার-৭ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে যাত্রীবাহী নৌযান এম.ভি মোস্তফার নিমজ্জিত হওয়ার বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদীর নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (টাস্কফোর্স) নূর-উর-রহমান। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে কিছু জানানো হয়নি। রবিবার প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, কমিটির সুপারিশগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবে। পরবর্তীতে রিপোর্টের সুপারিশ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ও মিডিয়ায় প্রকাশ করা হবে। ও .টি. সাউদার্ন-৭ দুর্ঘটনার বিষয়ে কমিটি ২৩টি এবং এম.ভি মোস্তফা দুর্ঘটনার বিষয়ে কমিটি ২৪টি সুপারিশ করেছে। ২৩টি সুপারিশের মধ্যে আইনগত সুপারিশ দু’টি, নৌ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সুপাশি তিনটি, প্রশাসনিক ব্যবস্থা সংক্রান্ত সুপারিশ এগারটি, সার্ভে সংক্রান্ত সুপারিশ ছয়টি এবং অন্যান্য সুপারিশ একটি। ২৪টি সুপারিশের মধ্যে আইনগত সুপারিশ একটি, নৌ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সুপারিশ ছয়টি, প্রশাসনিক ব্যবস্থা সংক্রান্ত সুপারিশ নয়টি, সার্ভে সংক্রান্ত সুপারিশ পাঁচটি এবং অন্যান্য সুপারিশ তিনটি। তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার সময় অন্যান্যের মধ্যে তদন্ত কমিটির সদস্য সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন কে এম জসীম উদ্দিন সরকার, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মাঈন উদ্দিন হাসান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্টাফ অফিসার লে. কমান্ডার এম এহতেশামুল হক খান, বিআইডব্লিউটিসি’র চীফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রহিম তালুকদার, বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোঃ শাহজাদা তরফদার এবং মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজিবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখ ভোর আনুমানিক সাড়ে চারটায় বাগেরহাট জেলার শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের মাঝামাঝি মৃগমারি থানার শ্যালা নদীতে নোঙ্গরকৃত অবস্থায় ও .টি. সাউদার্ন স্টার-৭ নামক তেলবাহী নৌযানের সাথে এম.টি. টোটাল নামক অপর একটি নৌযানের সংঘর্ষে ও .টি. সাউদার্ন স্টার-৭ নিমজ্জিত হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখ আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টায় মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া ঘাটে পদ্মা নদীতে যাত্রীবাহী নৌযান এম.ভি মোস্তফার সাথে সার বোঝাই অপর একটি মালবাহী নৌযান এম. নার্র্গিস-১-এর সংঘর্ষে এম.ভি মোস্তফা নিমজ্জিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় নৌ দুর্ঘটা এই দুটি। একটি দুর্ঘটনায় সুন্দরবনে তিন লাখ টন তেল ছড়িয়ে পড়ে,। অন্যটিতে ৭০ জন নিহত হন।
×