ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফ্রি স্টাইলে কাজ চলছে ॥ গুলশানে গলিতে গলিতে দোকানপাট ॥ সরকার পদক্ষেপ নেবে ॥ গণপূর্তমন্ত্রী

রাজউকের ব্যর্থতা আর কোর্টের স্থগিতাদেশে পরিকল্পিত ঢাকা হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৬ মার্চ ২০১৫

রাজউকের ব্যর্থতা আর কোর্টের স্থগিতাদেশে পরিকল্পিত ঢাকা হচ্ছে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আদালতের স্থগিতাদেশ আর রাজউকের ‘ব্যর্থতায়’ ঢাকা মহানগরকে পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়ে তুলতে না পারার কথা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। একই সঙ্গে রাজধানীর আবাসিক এলাকায় যত্রতত্র বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়ায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। এছাড়া তিনি বলেন, টাকা পেলেই আগারগাঁওয়ের মেলার মাঠে সচিবালয় তৈরির কাজ শুরু হবে। রবিবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত এক সংলাপে মন্ত্রী বলেন, রাজউক ফুটপাথ থেকে পাঁচ ফুট ভেতরে বিল্ডিং করার কথা বলে, কিন্তু ফুটপাথ ঘেঁষেই বিল্ডিং ওঠে। ভাঙতে যাবেন তখন কোর্টে যাবে। এমন অনেক মামলা আছে। হাইকোর্ট- সুপ্রীমকোর্টে গেলেই স্টে অর্ডার হয়ে যায়। সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল- আবাসিক এলাকায় কেন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। মোশাররফ বলেন, এখন ফ্রি স্টাইলে দেশ চলছে। রাজউক বাধা দিচ্ছে না কিন্তু তাদের জনবল আছে, বেতনও নিচ্ছে। যাঁরা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি তাঁদের রেখে লাভ কি? তবে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনার বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নেবে। মন্ত্রী বলেন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজউক স্বাধীন বডি। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় বোর্ডে। আমি নিজেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। তবে অমি চেষ্টা করছি, যাতে এর সুরাহা হয়। তিনি বলেন, পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় ইউনিভার্সিটি, হোটেল নয়। সব আলাদা থাকতে হবে। পূর্বাচলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ২০ একর জমি দিয়েছি, চীনের অর্থায়নে সেখানে পণ্য প্রদর্শনের জন্য। গুলশান-বনানী-বারিধারা বাণিজ্যিক এলাকা নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার বিভিন্ন সময়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। যাদের থাকার জন্য জায়গা দিয়েছি, তারা ব্যাংককে ভাড়া দিয়েছেন, রেস্টুরেন্ট করে দিয়েছেন বা হোটেল করে দিয়েছেন। এ জিনিসটা কোনদিন অনুমোদন দেয়া ঠিক হয়নি। বিভিন্ন সরকার গেছে আসছে, এ জিনিসটা বাধ্যতামূলক করতে পারেনি। আমরাও সবাই সাধু-সন্যাসী নই। গুলশানে গলিতে গলিতে বেকারি শপ, এই দোকান, ওই দোকান- এগুলোর জন্য রাজউকের সঙ্গে বসেছি। লেকশো’র হোটেল কত বছর হয়ে গেল, এটি অবৈধ। এগুলোর বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের পদক্ষেপ নিতে হবে- বলেন মন্ত্রী। আগামী ১ জুলাই থেকে পূর্বাচল প্রকল্পে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু হবে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, পূর্বাচল গ্রীন সিটি, স্মার্ট সিটি হবে। সেখানে পৃথক স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে মানবমল চলে যাবে। এখানে এসটিপি-ইটিপি হবে। আর সে পানি গ্রিন করার কাজে লাগানো হবে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও পৃথক পাওয়ার স্টেশন রাখা হবে। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবনের বিষয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে না কেন- প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যখন ভাঙতে যাবেন, তখন মালিকরা আদালতের আশ্রয় নেবেন। অনেক মামলা আছে। আমরা সবার সহায়তা চাই। আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নকশা অনুযায়ী না হলে সুন্দর আবাসিক এলাকা হবে না। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, উত্তরায় কাজ চলছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার অর্থায়নে ৮ হাজার ৪০০ এ্যাপার্টমেন্ট হবে। আমরা সহনীয় মূল্যে জনগণকে এ্যাপার্টমেন্ট দেয়ার চিন্তা করছি। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, হাউজিংয়ের পেছনে ইন্ডাস্ট্রি জড়িত আছে। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি যে, গরিব মানুষ ঠিকই ইনস্টলমেন্ট দেবেন। হলমার্ক, ডেসটিনির মতো কেলেঙ্কারি হবে না। গরিব ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং মধ্যবিত্ত পরিবার ব্যাংকের টাকা মারে না। আমি মনে করি, সরকারের এদিকে এগিয়ে আসা উচিত। মন্ত্রী হিসেবে আমি গ্যারান্টি দিতে পারি, এই টাকা কোন দিন মার যাবে না। সেবরকারী ডেভেলপাররা যারা বিনিয়োগ করছেন, পৃথক স্যুয়ারেজ লাইন, এসটিপি, ইটিপি অবশ্যই করতে হবে। না হলে কোন প্ল্যান আমাদের কাছে পাবে না- বলেন মন্ত্রী। চট্টগ্রাম শহরে সাগরের পাড়ে, পাহাড় ও কর্ণফুলী নদীর পাশে ছোট শহর গড়ে উঠবে বলেও জানান মন্ত্রী। ড্যাপের একটা অংশ শেষ করেছি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নতুন ড্যাপ শুরু হবে। মন্ত্রিপরিষদের একটা কমিটি আছে। এতে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। নতুন সিটি যেগুলো হচ্ছে সেগুলো সুন্দর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। হাতিরঝিল ঢাকা শহরের আইকন হলেও এখনও দূষিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। সচিবালয়কে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের খালি জায়গায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, নকশা করা হয়েছে। টাকা পেলেই স্থানান্তরের কাজ শুরু হবে। মন্ত্রী বলেন, নতুন সচিবালয়ে ভবনগুলো হবে সবুজ। প্রতিটি মন্ত্রণালয় আলাদা হবে। গাড়ি রাখার প্রচুর জায়গা থাকবে। অতীতে যাঁরা নগর পরিকল্পনা করেছেন তাঁদের ‘ভিশন ন্যারো’ ছিল। তাঁরা মনে করেননি ঢাকা এত বড় হবে। কৃষিজমিতে আবাসন বন্ধে সংসদে বিল আনতে কৃষিমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, পূর্বাচল সিটিতে বাড়ি নির্মাণে আগ্রহীদের আগামী ১ জুলাই থেকে নকশা অনুমোদন দেয়া হবে।
×