ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পাঙ্গনে কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের চিত্র প্রদর্শনী যাতনা যাপন

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৬ মার্চ ২০১৫

শিল্পাঙ্গনে কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের চিত্র প্রদর্শনী যাতনা যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রং আর রেখায় ক্যানভাসে যাপিত জীবনকে মেলে ধরেন চিত্রশিল্পী কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে চিত্রপটে উঠে আসে প্রকৃতির সঙ্গে পারিপার্শ্বিকতা। সেই সূত্রে বর্ণিত হয় নারীর চলার পথের প্রতিবন্ধকতা। তেমনই কিছু ছবি নিয়ে ধানম-ির শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে চলছে শিল্পীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। পক্ষকালব্যাপী চলমান এ প্রদর্শনীর শিরোনাম যাতনা যাপন। কল্পিত কোন বিষয় নয়, যাপিত জীবনের অনুভূতিগুলোই যেন আশ্রয় পেয়েছে কৃষ্ণার ক্যানভাসে। তিনি যেন তাঁর রঙের পাত্র উল্টে দিয়ে চিত্রায়িত করেছেন ক্ষোভ ও যন্ত্রণা কিম্বা রঙ্গিন প্রকৃতি ও জীবনের প্রদাহ। মানুষ হিসেবে নিজের স্বপ্ন এবং নারী হিসেবে চলার পথে যেসব বাধার মুখোমুখি হয়েছেন সেসবের প্রতিবিম্ব যেন তাঁর চিত্রপট। সেই নারী কখনও ভাঙাচোরা মুখে বসে আছে, কখনও একাকী নিমগ্ন যেন সংকল্প করছে। কখনও সেই একাকী এগিয়ে চলেছে শুভ্রতার পথে। নারীর নানা পর্যায়ের এই ছবি মূলত উঠে এসেছে তাঁর ‘দহন’ সিরিজের ছবিগুলোতে। এই সিরিজে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে নারীর বিভিন্ন পর্যায়ের ছবিও। রয়েছে বীরাঙ্গনাদের কথা, বলেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের কথা। সেই সব ছবিতে আছে অপরিসীম বেদনার বার্তা ও তীব্র ক্ষোভের প্রকাশ। ক্ষোভগুলো যেন যুদ্ধোত্তর কালের অনেক পীড়নের দাগে আকীর্ণ। আবার কোন ছবিতে মানুষের ভয়ার্ত-বেদনার্ত মুখ, ছিন্নভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, এরই মধ্যে শেয়াল কুকুরের প্রলুদ্ধ দৃষ্টিÑসব মিলিয়ে পীড়নের এক তামসিক আবহ অনূদিত হয়েছে ছবিগুলোতে। বিশেষ করে ধর্ষিত নারীদের ছবি এঁেকছেন পরিমিত রেখার পরিমার্জনায়। একটি চিত্রকর্মে দেখা যায়, আনত মুখে বসে আছেন কয়েকজন নারী। বৃত্তাকারে বসে থাকা সেই নারীদের মুখাবয়ব মনে করিয়ে দেয় একাত্তরের পাকবাহিনীর নৃশংসতা। ধর্ষণের শিকার ওই নারীদের মুখগুলো যেন হানাদারদের বর্বরতার বয়ান দেয়। নতুন চিহ্ন ও সংকেতে যুদ্ধের অভিজ্ঞতায় অনুভুতিকে আপন চিত্র ভাষায় সাজিয়েছেন কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে শিল্পীর ৫৫টি চিত্রকর্ম। এর মধ্যে ‘দহন’ সিরিজের ছবি রয়েছে ১৮টি। ছবিগুলো চিত্রিত হয়েছে বেশ কয়েকটি মাধ্যমে। স্কেচ, এ্যাক্রেলিক, জলরঙ, ছাপচিত্র প্রভৃতি। প্রদর্শনী চলবে ২৮ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে মঞ্চায়িত তিন নাটক ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে দ্বিতীয় ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। সহিংসতার বিরুদ্ধে নাটক সেøাগানে অনুষ্ঠিত উৎসবে দেশের ২৩টি নাট্যদলের সঙ্গে ভারত, চীন ও যুক্তরাজ্যের ৫টি দলের সমন্বয়ে ২৮টি প্রযোজনা উপস্থাপিত হবে। দশ দিনব্যাপী চলমান এ উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল রবিবার। এদিন সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল ও স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় তিনটি নাটক। যৌথভাবে দশ দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজক ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) বাংলাদেশ কেন্দ্র ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হয় নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের ৪৪তম প্রযোজনা নাম-গোত্রহীন মান্টোর মেয়েরা। সাদত হাসান মান্টোর গল্প অবলম্বনে নির্মিত নাটকটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন ভারতের প্রথিতযশা নাট্য নির্দেশক উষা গাঙ্গুলী। উর্দু লেখক সাদত হাসান মান্টোর তিনটি উপাখ্যান নিয়ে আবর্তিত হয়েছে নাম-গোত্রহীন মান্টোর মেয়েরা। নাটকের তিনটি উপাখ্যানে রয়েছে প্রধান তিনটি নারী চরিত্র সুলতানা, নীতি ও সুগন্ধী। দেশ ভাগের হৈহুল্লোড়ে আমরা কীভাবে মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলি? কীভাবে নিজ স্বার্থ রক্ষার জন্য বৃহৎ স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিই তাই এ নাটকে উঠে এসেছে। মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলার খেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবচেয়ে দুর্বল নারীরা। সেই গল্পই বলার চেষ্টা করা হয়েছে নাটকে। একদল লোভী, স্বার্থান্বেষী সর্বহারা মানুষ যখন অবলীলায় নিজেদের বিকিয়ে বসে, তখন সমাজের নারীরা হয়ে পড়েন নাম-গোত্রহীন। এর ফলে সবচেয়ে নিষ্ঠুর পরিণতি হয় নারীদেরই! নাটকের তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন অপি করিম, শ্রিয়া সর্বজায়া ও সারা যাকের। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে আজ মঞ্চস্থ হয় পদাতিক নাট্য সংসদের ভিন্নধারার গল্পের নাটক ‘ম্যাকবেথ’। উইলিয়াম শেক্সপিয়র রচিত ও সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক অনূদিত নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন সুদীপ চক্রবর্তী। স্কটিশ সেনাপতি ম্যাকবেথ যুদ্ধ জয় করে ফিরে আসার পথে একদল রহস্যময় শক্তি তাদের পথরোধ করে ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করে বলেছিল, ম্যাকবেথ হবে কডোর প্রধান ও পরে রাজা এবং ব্যাংকো হবে রাজার আদি পিতা। ম্যাকবেথের চিঠি পেয়ে লেডি ম্যাকবেথ জানতে পারে বিস্তারিত, এতে উচ্চাকাক্সক্ষা জন্ম নেয়। ম্যাকবেথকে প্ররোচিত করে রাজা ডানকানকে হত্যায়। নিজ বাড়িতে রাজাকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন ম্যাকবেথ। রাজা হত্যার দায় কৌশলে এড়াতে একে একে হত্যা করেন ডানকানের দেহরক্ষীদ্বয়, ব্যাংকো, ম্যাকডাফের স্ত্রী-সন্তানকে। রহস্যময় শক্তিসমূহের বিভ্রান্তিতে ম্যাকবেথ ভুলে যায়, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। লেডি ম্যাকবেথ অনুতাপে দগ্ধ ও অসুস্থ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাখাওয়াত হোসেন শিমুল, শামছি আরা সায়েকা, হামিদুর রহমান পাপ্পু, ইকরাম, শুভ, জনি, রাসেল, ওয়ালিদ প্রমুখ। স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় নাট্যম রেপার্টরি প্রযোজনা সাইকেলঅলা। প্রখ্যাত নাট্যকার বিজয় টেন্ডুলকারের ‘দ্য সাইক্লিস্ট’ অবলম্বনে নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন আইরিন পারভীন লোপা। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন জুনায়েদ ইউসুফ, শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, জান্নাতুল ফেরদৌস, তাহমিনা খাতুন প্রমুখ। আন্তর্জাতিক নারী চলচ্চিত্র উৎসব ॥ ‘নারীর চোখে চলচ্চিত্র’ সেøাগানে উইমেন্স ফিল্ম সোসাইটির উদ্যোগে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে চলছে চার দিনব্যাপী ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী ফাউন্ডেশন ২য় আন্তর্জাতিক নারী চলচ্চিত্র উৎসব। বাংলাদেশসহ ৩০টি দেশের নারী নির্মাতের তৈরি ৭০টি চলচ্চিত্র নিয়ে চলছে এ উৎসব। শনিবার থেকে শুরু হওয়া উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল রবিবার। এদিন গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন ও সেমিনার হলের দুটি ভেন্যুতে প্রদর্শিত হয়েছে ২৬টি চলচ্চিত্র। নারীদের জন্য উন্মুক্ত এ প্রদর্শনীতে আজ সোমবারও প্রদর্শিত হবে দেশ-বিদেশের আরও ২৬টি চলচ্চিত্র। এছাড়া দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হবে নারীদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ক বিশেষ কর্মশালা। কোন রেজিস্ট্রেশন ফি ছাড়াই কর্মশালায় অংশ নিতে পারবেন নারী নির্মাতারা।
×