ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইসিটি খাতে চার পুরস্কার, বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম বৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৬ মার্চ ২০১৫

আইসিটি খাতে চার পুরস্কার, বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম বৃদ্ধি

এমদাদুল হক তুহিন ॥ ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়ায় আইসিটি খাতের অসাধারণ অগ্রগতিতে চারটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে বাংলাদেশ। পুরস্কারগুলো হলোÑ সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড ২০১১, সাউথ সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি এ্যাওয়ার্ড-২০১৪, ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) প্রাইজ ২০১৪ ও গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড (ডব্লিউআইটিএসএ)-২০১৪। প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া পুরস্কার দুটির মধ্যে শেখ হাসিনা নিজ হাতে গ্রহণ করেছেন একটি, অন্যটি তাঁর পক্ষে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। বাকি দুটি গ্রহণ করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আইসিটি খাতে পরপর চারটি পুরস্কার প্রাপ্তিতে বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে ডিজিটাইজেশনের যে জোয়ার বইছে তার গতি বৃদ্ধি করতে পুরস্কারপ্রাপ্তির বিশেষ অবদান রয়েছে বলে দাবি করা হয়। বিশেষ কোন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্যেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। কৃতকর্মের আনুষ্ঠানিক সম্মাননা পাওয়ার পর নব উদ্যমে এগিয়ে যায় তারা। বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগেও এমনটি ঘটেছে। আইসিটি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই খাতে আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জনের পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। নব উদ্যমে নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে তারা অধিক মনোনিবেশ করেছেন। জনগণের কল্যাণে সাধ্যমতো সব রকম সেবা দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সূত্র মতে, বাংলাদেশ আইসিটি খাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মোট চারটি পুরস্কার লাভ করে। পুরস্কারগুলো হলোÑ সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড ২০১১, সাউথ সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি এ্যাওয়ার্ড-২০১৪, ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) প্রাইজ ২০১৪ ও গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড (ডব্লিউআইটিএসএ)-২০১৪। এর মধ্যে দুটি পুরস্কারে ভূষিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার একটি তিনি নিজ হাতে গ্রহণ করেন। জানা যায়, এমডিজি অর্জনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে সাফল্যের দিক বিবেচনা করে জাতিসংঘ ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের হোটেল ওয়ালড্রফ এ্যাস্ট্রোরিয়াতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সম্মানজনক পুরস্কার সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড তুলে দেয়া হয়। সেদিনের ওই পুরস্কারপ্রাপ্তিতে আন্তর্জাতিক পরিম-লে দেশের সুনাম বৃদ্ধি পায়। ডিজিটাল উদ্ভাবনী প্রযুক্তির প্রয়োগ ও ব্যবহারের ফলে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্যখাতের ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। অনলাইনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। এ সব কারণেই আন্তর্জাতিক ওই পুরস্কারপ্রাপ্তি। দাবি করা হয়ে থাকে, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানজনক ওই পুরস্কার পাওয়ার পর থেকেই দেশ আরও দ্রুত ডিজিটাল হতে থাকে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সূত্র মতে, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে অন্যতম আরেকটি অর্জন সাউথ সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি এ্যাওয়ার্ড। ডিজিটাল ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেয়া এবং শিক্ষা প্রসারে বৈপ্লবিক ধ্যান-ধারণার সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাউথ সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ২০১৪ সালের ২১ নবেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে গ্লোবল সাউথ সাউথ ডেভেলপমেন্ট এক্সপোর সমাপনী দিনে ওই পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ওই পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। জনজীবনে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও আইসিটি খাতে বাংলাদেশের অতুলনীয় অবদানের জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড ২০১১, সাউথ সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড-২০১৪ প্রদান করায় একদিকে বিশ্বে দেশের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারী তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ওয়াসিম সাজ্জাদ, তিনি অনলাইন ব্যবহার করে নানারকম সরকারী সেবা গ্রহণ করেন। এই শিক্ষার্থী জনকণ্ঠকে বলেন, আইসিটি খাতে বিভিন্ন পুরস্কারপ্রাপ্তির পর দেশ-বিদেশে আমাদের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ খাতে দিন দিন উন্নয়ন হচ্ছেÑ পুরস্কারগুলো তারই স্বীকৃতি। বর্তমানে এমন কোন কর্মকা- নেই যা ইন্টারনেট ব্যবহার করে করা যায় না। দিনের অধিকাংশ সময়ই ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডেই কাটাতে হয়। এর সব কিছুই এ খাতের উন্নয়নের ফলে সম্ভব হয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্তির পূর্বে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার কোন স্বীকৃতি ছিল না, বর্তমানে আছে। যা অত্যন্ত ইতিবাচক ও আইসিটি খাতের ক্রমাগত উন্নয়নেও ফলদায়ক। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সূত্র মতে, বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ আরও একটি বড় পুরস্কার হচ্ছে ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) প্রাইজ-২০১৪। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে গত বছর ওই আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন এ্যাওয়ার্ড জয় করে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক ই-গবর্নমেন্টে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগের দক্ষতাস্বরূপ অবদানের জন্যে বাংলাদেশকে ওই পুরস্কার দেয়া হয়। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ২০১৪ সালের ১০ জুন সুইজারল্যন্ডের জেনেভায় ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) প্রাইজ গ্রহণ করেন। দেশে ডিজিটাল উন্নয়ন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছেÑ একের পর এক পুরস্কারপ্রাপ্তি যেন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের একাধিক ব্যক্তিবর্গের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশে ডিজিটাইজেশনের ওই জোয়ার। সংশ্লিষ্ট এ খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দেশের সাধারণ জনগণের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণেই আইসিটি খাতে বাংলাদেশের এ সব পুরস্কারপ্রাপ্তি। অন্যদিকে, তথ্য প্রযুক্তি খাতে অবদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিস্বরূপ আরও একটি বড় প্রাপ্তি হচ্ছে ‘গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’। তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমাজের অগ্রগতিতে অবদানের জন্যে বাংলাদেশ ওই পুরস্কার অর্জন করে। ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিসেস অ্যালায়েন্সের ৮০ সদস্য রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ কমিটি তথ্য প্রযুক্তি খাতের উদ্ভাবনী কাজের জন্যে এ পুরস্কার দিয়ে থাকে। প্রতি দু’বছর অন্তর ওই পুরস্কার দেয়া হয়। ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর ওই পুরস্কার গ্র্রহণ করেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। মেক্সিকোর গুয়াদালাহারা শহরে তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই পুরস্কার প্রদান করা হয়। যা বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের অবদানের অনন্য স্বীকৃতি। সরকার, আইসিটি মন্ত্রাণালয় ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড অন্যতম একটি স্বীকৃতি। আইসিটি খাতের সরকারের এ সাফল্য ও পুরস্কারপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে ব্লগার অনিমেষ রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ সবখাতেই এগিয়ে চলছে। আইসিটি একটি উঠতি খাত। এর ভবিষ্যত অনেক ভাল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এ সব পুরস্কারপ্রাপ্তি দেশের সুনাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের তরুণ প্রজন্মকে স্বনির্ভর করে তুলবে। ফ্রিল্যান্সিংসহ নানাভাবে তারা বিদেশী মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে। বিগত কয়েক বছরে আইসিটি খাতে বাংলাদেশের মোট চারটি পুরস্কারপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভিশন-২০২১ নির্ধারণ করেছিলেন, তা প্রতিনিয়তই সফলতার মুখ দেখছে। আমরা সঠিক পথেই আছি তার স্বীকৃতি হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে প্রাপ্ত ওসব পুরস্কার। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে ভিশন নিয়েছিলাম, তা ক্রমাগত সফল হচ্ছে, পুরস্কারপ্রাপ্তির মাধ্যমে তাই প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদশে বিনির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছি। পলক বলেন, পুরস্কারপ্রাপ্তির কারণে আইসিটি খাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে বিনোয়োগে আগ্রহী হবে। হাইটেক পার্কসহ উন্নত আইটি কেন্দ্র ক্রমাগত বিদেশী বিনোয়োগ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদশ বর্তমানে একটি কান্ট্রি ব্যান্ডিংয়ে পরিণত হয়েছে, এটি একটি বড় রকমের ইতিবাচক প্রচার হতে পারে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম বর্তমানে এখাতে তাদের পেশা নির্ধারণে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এখাতের ভবিষ্যত উজ্জ্বল ও সাফল্যম-িত হবে পুরস্কারপ্রাপ্তি তারই দৃষ্টান্ত।
×