ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নীতিমালা জারি ॥ কাজ শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশন

আগামী অর্থবছরে ৯৬ হাজার কোটি টাকার সর্বোচ্চ নতুন এডিপি

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৬ মার্চ ২০১৫

আগামী অর্থবছরে ৯৬ হাজার কোটি টাকার সর্বোচ্চ নতুন এডিপি

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আগামী অর্থবছরের (২০১৫Ñ১৬) জন্য ৯৬ হাজার কোটি টাকার নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। এটি হবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়নসহ। অন্যদিকে নিজস্ব অর্থায়ন বাদ দিলে নতুন এডিপি হতে পারে ৯০ হাজার কোটি টাকার। এমনই আভাস পাওয়া গেছে অর্থমন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে। ইতোমধ্যেই নতুন এডিপি তৈরির কাজও শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ে উত্তরণের লক্ষ্য সামনে রেখে এডিপি প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে এডিপি তৈরির নীতিমালা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর লক্ষ্যসমূহ নতুন এডিপিতে গুরুত্ব পাবে। তাছাড়া দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মুদ্রানীতি, সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগ চাহিদা, সম্পদের লভ্যতা, স্থানীয় সম্পদ সংগ্রহ, বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তি ও এর ব্যবহারের সক্ষমতা এবং অগ্রগতির ধারাবাহিকতা নতুন এডিপি হাতে নেয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তিনি জানান, বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটি এডিপির আকার নির্ধারণ করবে। এর পরবর্তী অনেক প্রক্রিয়া রয়েছে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে (২০১৪Ñ১৫) মোট ৮৬ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে মূল এডিপি হচ্ছে ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। মূল এডিপির মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫২ হাজার ৬১৫ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সম্প্রতি এ এডিপি কমিয়ে এনে সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ৫০ হাজার ১০০ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। মূল এডিপি থেকে বরাদ্দ কমে গেছে ৫ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপি তৈরির যে নীতিমালা জারি করা হয়েছে তার মধ্যে নতুন এডিপি তৈরিতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করছে পরিকল্পনা কমিশন। শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতেই এ সতর্কতা বলে জানা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আগামী অর্থবছরের নতুন এডিপিতে প্রকল্পভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে চলতি প্রকল্পসমূহের অনুমোদিত প্রকল্প দলিলে উল্লিখিত প্রাক্কলিত ব্যয় এবং এ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতির ভিত্তিতে সম্ভাব্য যৌক্তিক ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে নতুন এডিপিতে ব্যয়ের প্রস্তাব করতে হবে। প্রকল্প সাহায্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী দেশ বা সংস্থার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির মেয়াদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরে প্রাপ্য বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারের জন্য পরিপূরক স্থানীয় মুদ্রা (ম্যাচিং ফান্ড) বরাদ্দের দাবি অগ্রাধিকার পাবে। এলাকা বা অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে এডিপিতে গৃহীত প্রকল্পসমূহের বরাদ্দ প্রদানও নিশ্চিত করতে হবে। আগামী ২০১৫Ñ১৬ অর্থবছরের এডিপিতে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে নীতিমালায় বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের এডিপি বা এডিপিভুক্ত স্থগিত বা শূন্য বরাদ্দ দেয়া অথবা বরাদ্দহীনভাবে সংযুক্ত অননুমোদিত প্রকল্পসমূহ আগামী অর্থবছরের এডিপিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে না। তবে বিশেষ যৌক্তিকতা (যদি থাকে) সাপেক্ষে নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য তা প্রস্তাব করা যাবে। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে একান্ত অপরিহার্য এবং উচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত না হলে সরকারী অর্থায়নে সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব পরিহার করতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের আগামী অর্থবছরে সমাপ্য প্রকল্প সংখ্যা, এডিপি বাস্তবায়নের দক্ষতা ও সংশ্লিষ্ট সেক্টরের প্রবেশাধিকারের সঙ্গে নতুন প্রকল্প সংখ্যা সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। ক্ষুদ্র প্রকল্প পৃথকভাবে প্রণয়ন না করে একটি গুচ্ছ প্রকল্পের আওতায় এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) সহায়ক নতুন প্রকল্প অগ্রাধিকার পাবে। বেসরকারী উদ্যোগে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে এমন প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পরিহার করতে হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সফিকুল আজম নীতিমালায় বলেছেন, উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের সুষম উন্নয়ন ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য নিরসন ও কর্মসংস্থান, আঞ্চলিক দারিদ্র্য ও আয় বৈষম্য দূরীকরণ, খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন উন্নয়ন (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি), কৃষি পানিসম্পদ ও পল্লী অবকাঠমো উন্নয়ন, নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিস্কাশন, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, রফতানি প্রসার ও শিল্পায়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো আগামী অর্থবছরের নতুন এডিপিতে গুরুত্ব পাচ্ছে। সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের এডিপি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় আগামী অর্থবছরই হচ্ছে এযাবতকালের সর্বোচ্চ এডিপি। ২০০৯Ñ১০ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২৮ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা, ব্যয় হয়েছিল ২৫ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা, বাস্তবায়ন হার ছিল ৯১ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরের এডিপি ছিল ৩৫ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, ব্যয় হয়েছিল ৩৩ হাজার ৭ কোটি টাকা, বাস্তবায়ন হার ছিল ৯২ শতাংশ। ২০১১Ñ১২ অর্থবছরের এডিপি ছিল ৪১ হাজার ৮০ কোটি টাকা, ব্যয় হয়েছিল ৩৮ হাজার ২৩ কোটি টাকা, বাস্তবায়ন হার ছিল ৯৩ শতাংশ। ২০১২Ñ১৩ অর্থবছরের এডিপি ছিল ৫৫ হাজার কোটি টাকা, বাস্তবায়ন হয়েছিল ৯৬ শতাংশ। ২০১৩Ñ১৪ অর্থবছরে এডিপি ছিল মোট ৭৩ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪২ লাখ টাকার। বাস্তবায়ন হয়েছিল ৯৫ শতাংশ।
×