ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পিতা অজয় রায় গণমাধ্যমকে জানান, বুয়েটের এক শিক্ষক ওই দাওয়াত দিয়ে নিজে আসেননি

চায়ের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিতকে

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৬ মার্চ ২০১৫

চায়ের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিতকে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক, ব্লগার ছেলে অভিজিত রায়কে। আর চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন বুয়েটের এক শিক্ষক। সেখানে যাদের থাকার কথা ছিল তারা ছিল না। তারা নেই কেন? এই ধরনের প্রশ্নও তুলেছিলেন অভিজিত। তারপরই ঘটে অভিজিত নির্মম হত্যাকা-টি। ছেলের হত্যাকা-ের ক্লু খুঁজে পেতে পুলিশকে সাহায্য করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক বাবা অজয় রায়। অধ্যাপক অজয় রায় গণমাধ্যমকে বলেছেন, এই খুনের ক্লু হতে পারে, ‘ বইমেলার একটি স্টল’ ও ‘দু’জন লেখকের নাম‘। অভিজিত রায়কে হত্যাকান্ডের আগে ডেকে নেয়া হয়েছিল বইমেলায়, সেখানে গিয়ে একটি স্টলে আড্ডা দিয়েছিলেন, দু’জন লেখক থাকার কথা ছিল। বই মেলার সেই স্টল ও দু‘জন লেখকের নাম অভিজিত হত্যাকান্ডের ক্লু খুঁজে পেতে সাহায্য করবে পুলিশকে। অভিজিতকে হত্যার হামলার আগে সর্বশেষ একটি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন অভিজিত ও তার স্ত্রী বন্যা। বৈঠকটি বই মেলার ভেতরেই আয়োজন করা হয়। বইমেলার ঠিক কোন্্ অংশে সেটি হয়েছিল তা জানা না গেলেও ‘অবসর’ নামে একটি স্টলের কাছেই তা হয়েছে বলে পুত্রবধূ বন্যার উদ্বৃতি দিয়ে জানান অজয় রায়। ওই বৈঠকটি ডেকেছিলেন বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী। তিনিই ফোন করে অভিজিতকে সেখানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, সেখানে অভিজিতের পরিচিত আরও দুই-একজন বিজ্ঞান লেখক উপস্থিত থাকবেন। অভিজিত ও তার স্ত্রী বন্যা সেখানে গিয়ে পরিচিত ওই লেখকদের দেখতে পাননি। ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী ছাড়া আর কেউ তাদের পরিচিত ছিলো না। অভিজিত অন্যদের কথা জানতে চাইলে ফারসীম বলেছিলেন, তারা আসবেন। কিন্তু পরে আর আসেননি। ওই বৈঠকেই স্থত কয়েকজন তাদের বৈঠক শেষে চা পানের জন্য নিয়ে যান। আর সেখানকার দাওয়াতের ঘটনায়ই অভিজিত হত্যাকা- ঘটে। ওই সময় গুরুতর আহত হন অভিজিত রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। বাবা অজয় রায় গণমাধ্যমকে বলেছেন, হত্যাকা-টি পুরোপুরি পরিকল্পিত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষকের নাম জানাবেন তিনি যে হত্যাকা-ের ক্লু বের হতে সাহায্য করতে পারে। হত্যাকারীরাই ডেকে নিয়ে চা খাওয়ার নাম করে তার ছেলেকে হত্যা করেছে। অজয় রায় বলেন, যে দুজন লেখকের কথা বলে সেখানে অভিজিতকে ডাকা হয়েছিল তারা তাকে জানিয়েছেন, তারা আসলে ওই বৈঠকটির কথা জানতেনই না। আর এসব কারণেই বুয়েটের ওই শিক্ষকের ওপর ড. অজয় রায়ের সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা আগে সংবাদমাধ্যমে কথা বললেও ওই শিক্ষকের পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ আসেনি। এমনকি ওই শিক্ষক ড. অজয় রায়ের সঙ্গে কথাও বলেননি। বাবা অজয় রায় পুলিশের কাছে জানানোর আগে নিজেই একবার বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীর সঙ্গে কথা বলতে চান। তিনি বলেন, হতে পারে তিনি ভয় পেয়ে কথা বলছেন না। তবে তিনি রাজি হলে আমি তার সঙ্গে দেখা করতে চাই। প্রসঙ্গত: গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে ফেরারপথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দুর্বৃত্তরা অভিজিত রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর অভিজিতের মৃত্যু ঘটে। গুরুতর আহত বন্যা দু’দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের উদেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। অভিজিত ও তার স্ত্রী দু’জনেই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং অভিজিত হত্যাকান্ডের তদন্তে ঢাকায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআই।
×