ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিসিং দ্য উড ফর দ্য ট্রি

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৬ মার্চ ২০১৫

মিসিং দ্য উড ফর দ্য ট্রি

দেশে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী কর্মকা- চালিয়ে অনায়াসে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সহযোগী জঙ্গীরা। কলকাতায় উর্দুভাষী মুসলিমদের মালিকানাধীন হোটেলগুলো তাদের নিরাপদ আশ্রয় ও ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। এদের বসবাসের জন্য বাংলাদেশ থেকে হুন্ডিতে টাকা পাঠানো হয়। এছাড়াও আইএসআই-এর অর্থায়নতো রয়েছেই। এই সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের সন্ত্রাসের নয়া কৌশল প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, এমনটাও জানা গেছে। ভারতে মেডিক্যাল চেকআপের জন্য কলকাতায় থাকাকালে এদের অবস্থান চোখে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এক সাবেক ছাত্রনেতার। তিনি দেখতে পান, হোটেলগুলোতে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা নিরাপদে অবস্থান করছে। এদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে স্পষ্ট হন যে, এখান থেকে জঙ্গীদের দেশের অভ্যন্তরে পাঠানো হয় নাশকতামূলক তৎপরতার জন্য। বোমাবাজি শেষে এরা নিরাপদে ভারতে প্রবেশ করে। এদের সীমান্ত পারাপারের ক্ষেত্রে দু’দেশেই নির্দিষ্ট গাইড রয়েছে। উর্দুভাষী হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি আরও স্পষ্ট হন যে, এই জঙ্গীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিতে কলকাতার উর্দুভাষীরাও বেশ আগ্রহী। এক হোটেল মালিক তো সাবেক ছাত্রনেতাকে জ্ঞানদানও করেন যে, পাকিস্তান ভেঙ্গে যে ভুল তারা করেছে, তার মাসুল তো দিতেই হবে বাংলাদেশের জনগণকে। খোঁজখবর নিয়ে তিনি জানতে পারেন, জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের অনেককে জঙ্গীপনায় নয়া কৌশল প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে ভারতীয় জঙ্গীদের তত্ত্বাবধানে। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের উর্দুভাষী মুসলিম সদস্যরাও এই জঙ্গীদের পৃষ্ঠপোষক। বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হরকাতুল জেহাদ, হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গে তাদের সংগঠনের সহযোগীদের সহায়তা ও আনুকূল্যে বেশ নিরাপদেই রয়েছে। আর বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত বিএনপি-জামায়াতের নেতারাও গ্রেফতার এড়াতে হোটেলগুলোতে অবস্থান করছে। অনেক সন্ত্রাসী জামিনে ছাড়া পেয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে পাকিস্তানেও যাচ্ছে। ভারতীয় পুলিশ বা গোয়েন্দাদের নজর তাদের দিকে না থাকায় এরা নিশ্চিন্তে অবস্থান করছে। এদের চেহারায় উদ্বেগের ছাপও নেই। জঙ্গীদের এই অনায়াসে দেশ থেকে দেশে যাতায়াতের সুবিধা সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার বিস্তার ও বিকাশ ঘটাতে পারছে পালিয়ে যাবার কারণে। তাদের গ্রেফতার করাও সম্ভব হচ্ছে না বাংলাদেশের পুলিশের পক্ষে। এইসব হোটেলের দৈনিক ভাড়া বারোশ’ টাকা থেকে দুই-আড়াই হাজার টাকা। এই অর্থের যোগানদাতারা নেপথ্যেই রয়ে গেছে। সাবেক ছাত্রনেতা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, বিএনপির কিছু নেতা চিকিৎসার নামে ভিসা নিয়ে ভারতে এসে অবস্থান করছে। এরা গ্রেফতার এড়াতে দেশে ফিরতে চায় না। বাংলাদেশ জঙ্গীদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের শিকার ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে। বাংলাদেশে জঙ্গী সংগঠনগুলোকে যারা অর্থ দিয়ে থাকে; তারাই বর্তমানে চলমান নাশকতায় অর্থ যোগান দিয়ে আসছে। হরতাল ও অবরোধের মধ্যে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষ হত্যার জন্য টাকা দেয়া হচ্ছে। আটক বোমাবাজরা স্বীকারোক্তিও দিয়েছে, টাকার বিনিময়ে তারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষ হত্যা করছে। এদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করছে অর্থযোগানদাতারা। তাদের তত্ত্বাবধানেই তারা ঘটনার পর পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এতে গ্রেফতার এড়ানো সহজ হয়ে গেছে। জঙ্গী অর্থায়ন রোধে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের টাস্কফোর্স জঙ্গীদের অর্থদাতাদের খুঁজে বের করার জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে কাজের গতি খুবই শ্লথ বলেই গত ক’ মাসেও তারা সেভাবে কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি। টাস্কফোর্স প্রধান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন অবশ্য জানিয়েছেন, টাস্কফোর্স তার কাজ ইতোমধ্যেই অনেকদূর এগিয়েছে। বর্তমানে আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা আর জঙ্গীদের পেছনের অর্থায়নের উৎস একই। বাংলাদেশকে জঙ্গীদের অভয়ারণ্য করার কাজটি অনেকদিন ধরেই পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর তত্ত্বাবধানে চলে আসছে। মানুষ হত্যার এই আন্দোলনে বেগম জিয়ার ব্যয় তেমন নেই। ‘লো-কস্টে’ই সারছেন। গুলশান অফিসের খানাপিনা, অন্যান্য উপকরণ বাবদ দৃশ্যমান ব্যয় ছাড়াও পেট্রোলবোমা, ককটেল, গান পাউডার ব্যবহার প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই ব্যয়ের অর্থ যোগানদাতারা খালেদাকে সামনে রেখেই নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা অর্থায়নে জড়িত ছিল বলে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আইএসআইসহ অন্যান্য জঙ্গী সংগঠন এই অর্থ বরাদ্দ করে আসছে। বিএনপির আয়ের উৎস এখন এই আইএসআই। জঙ্গীদের ভাবনায় বেগম জিয়া তার মানুষ হত্যার ও জঙ্গীবাদ বিকাশের আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে নিয়ে যাবার ঘোষণা দিতে পেরেছেন। দেশে একটি নির্বাচিত সরকার রয়েছে। যে সরকার জঙ্গীবাদীদের পৃষ্ঠপোষক দল জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে। এতে নাখোশ পাকিস্তানসহ জঙ্গীরা। কারণ এদেশে জঙ্গীরা জামায়াতের সাইনবোর্ডের নিচে অবস্থান করে নাশকতাকে ত্বরান্বিত করছে। এদের ভাবনায় বেগম জিয়া আইনকে নিজের স্বার্থে ক্ষমতায় থাকাকালে যেভাবে ব্যবহার করেছেন, ক্ষমতাহীন অবস্থায় এখনও তা করতে চান। তাই তিনি আইন কানুন শুধু নয়, আদালতকেও উপেক্ষা করে আসছেন। যদি সৎ হতেন, তবে আদালতে গিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সচেষ্ট হতেন। কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর বিরুদ্ধে বিশেষ আদালত সমন জারি করেছে। আগামী ৮ এপ্রিলের মধ্যে তাঁকে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদ- হবে। মনমোহন বলেছেন, সত্য উদঘাটিত হবেই। তথ্য প্রমাণ দিয়ে আদালতে কথা বলার সুযোগ পাব এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে সক্ষম হব। তিনি এই সমন বা আদালতের নির্দেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেননি। কিন্তু এই নির্দেশের প্রতিবাদে অবরোধ বা হরতাল ডাকেনি ভারতীয় কংগ্রেস। আদালতকে উপেক্ষা করার কথাও বলেনি। হাজিরা এড়াতে অজুহাতও খোঁজেননি। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে বেগম জিয়া আদালতকে এড়িয়ে চলছেন। মামলার যেদিন হাজিরার তারিখ, সেদিনই তিনি হরতাল ডেকে নিরাপত্তার অজুহাত তুলে হাজিরা এড়িয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। আর দাবি তুলছেন মিথ্যা মামলার। দুর্নীতির এই মামলা খালেদা-তারেক সৃষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেই হয়েছে। তিনি যদি নির্দোষ হন, তবে আদালতে দাঁড়িয়ে তা প্রমাণ করার সাহস প্রদর্শন করছেন না কেন? নিজেকে আইনের উর্ধে মনে করে সবকিছুকে তুচ্ছজ্ঞান করেন তিনি। এমনকি সংবিধানও মানেন না। আইনকে তিনি তাঁর প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চান, করেছেনও। যেমন তাঁর প্রয়াত স্বামী রাজাকার পুনর্বাসনকারী জেনারেল জিয়া শাসন ক্ষমতায় থাকাকালে ক্ষমতা করায়ত্ত রাখার জন্য শুধু আইন নয়, সংবিধানও সংশোধন করেছেন। যে সংশোধনীকে পরবর্তীকালে আদালত অবৈধ বলে রায় দিয়েছে। স্বামী-স্ত্রী এবং পুত্র’র আইনকে লঙ্ঘন করার উদাহরণ ভূরি ভূরি। অথচ তাঁরা আইন কানুন নিয়মনীতির কথা বেশ জোরেশোরেই বলেন এবং তা বলেন অন্যের জন্য আইন প্রয়োগ করতে। নিজেরা আইনের উর্ধে থাকবেন, কিন্তু আমজনতাকে আইন মেনে চলার নির্দেশ দিয়ে যাবেন- এই হচ্ছে তাঁদের বৈশিষ্ট্য। আর এই আদালত এবং মামলাকে এড়াতেই তিনি দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করে যাচ্ছেন। বেগম জিয়া নিজেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচয় দানের অধিকার অনেক আগেই হারিয়েছেন। দেশের মানুষকে তিনি নির্দেশ দিয়ে হত্যা করেছেন। মানুষ খুন করা যেহেতু রাজনীতির বিষয় নয় এবং নৈতিকতারও নয়, সেহেতু অনৈতিকতাক্রান্ত হয়ে তিনি হত্যাকারীতে পরিণত হয়েছেন। পাকিস্তানে ভুট্টোকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল একজন রাজনীতিককে হত্যার দায়ে। আর খালেদা তো শত শত হত্যা তথা গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। তা স্বীকারও করেন না। নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক মানুষের আছে দুটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা। একটি তার পরিবারের প্রতি, মাতা-পিতার প্রতি, স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি এবং অপরটি তার জনসাধারণ, তার সমাজ এবং তার দেশের প্রতি।” বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে এই দুটি বাধ্যবাধকতার রেশও নেই। অকালপ্রয়াত পুত্রের মৃত্যুতেও কাতর নন। এমনকি বিধবা পুত্রবধূ ও পিতৃহারা নাতনিদের ¯েœহবঞ্চিত করে প্রবাসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। মালয়েশিয়ায় তারা কিভাবে জীবনযাপন করে, কী তাদের আয়ের উৎস, কে তাদের দেখাশোনা করে- সেসব জনগণের অজানা। বেগম জিয়া যে তাদের দূরে ঠেলে দিয়েছেন তার নেপথ্য রহস্য একদিন প্রকাশ হবে। আরেক পুত্র ব্রিটেনে রিফিউজি হলেও আইএসআইসহ জঙ্গীদের ও পার করা অর্থে বিলাসবহুল জীবনযাপন করে আর দেশে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যার জন্য ফোনে ভাইবারে নির্দেশ দেয় বলে প্রচার রয়েছে। দেশ ও জাতির প্রতি তার বিন্দুমাত্র মমত্ববোধ কখনও দেখা যায়নি। স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি মানুষ হত্যায় নিখুঁত খুনীর সর্দারণীতে পরিণত হয়েছেন। মানুষ হত্যা করা তাঁর নিত্যকর্ম এখন। ২০০১ সালে ক্ষমতায় বসেই সারাদেশে হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপরে বর্বর, নিষ্ঠুর ও নির্মম নিপীড়ন, ধ্বংস, সবই চালিয়েছেন। সে সময়ের ঘটনা তদন্ত করে মহাজোট সরকার শ্বেতপত্র তৈরি করলেও তা প্রকাশ করেনি। এমনকি একটি মামলাও করেনি। বরং বলা হয়েছে, সরকার কোন মামলা করবে না। যারা আগ্রহী তারা করতে পারেন। সেদিন যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো, তাহলে আজকে খুন খারাবিতে জনজীবন সন্ত্রস্ত করে তুলতে পারতেন না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বেগম জিয়া এখনও সেই ২০০৬ সালেই অবস্থান করছেন। ওই বছরটি ছিল তার ক্ষমতায় থাকার শেষ বছর। তারপর আট বছর পার হয়ে গেছে। ক্ষমতা থেকে যেমন দূরে, তেমনি রাজনীতির ধারা থেকেও বিচ্যুত হয়ে পড়েছেন। তখন প্রধানমন্ত্রী না থাকলেও তার নির্দেশেই চলছিল ইয়াজউদ্দিন সরকার। সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করেছিলেন। বেগম জিয়া যে নির্দেশ ও কার্যাদেশ দিতেন, তা রোবটের মতো পালন করতে গিয়ে ইয়াজউদ্দিন লেজেগোবরে একসা করে ফেলেছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের স্রষ্টা বিএনপি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে কেন্দ্রীভূত করে ক্ষমতার মসনদ পুনর্দখল করার অভিপ্রায়ে যে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিলেন, সেই ষড়যন্ত্রের অবস্থান থেকে আজও সরে আসতে পারেননি। ভুয়া ভোটার বানিয়ে নির্বাচনকে নিজের মতো সাজাতে গিয়ে ব্যর্থ হন খালেদা। ২০০৬ সালের শেষ দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এমএ আজিজ একটি ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী প্রণীত ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ডের ভিত্তিতে তৈরি ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভোটার কম পাওয়া যায়। এ বিপুল পরিমাণ ভোটারই মূলত বিএনপি সরকারের ভুয়া ভোটার। এ ধরনের প্রতারণার জন্য এমএ আজিজ ও তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আইনগত ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যুক্তিসঙ্গত ছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তীতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত ‘মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কের’ শাসনামলে আমরা স্মরণ করতে পারি, ঢাকার রাস্তার পার্শ্বে বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ডে কোরান শরীফের আয়াত শোভা পেত। ১৯৭৯ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাইয়ের বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে সরকারী উদ্যোগে শহরের সকল রাস্তা থেকে ওইসব আয়াত সংবলিত বিলবোর্ড গায়েব হয়ে যায়। অথচ রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের ক্ষমতাগ্রহণের আড়াই মাসের মাথায় ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করাতে সক্ষম হন। এটা কি আধিপত্যবাদের কাছে মাথা নত করা নাকি কোরান শরীফের আয়াত গায়েব করা আধিপত্যবাদের কাছে নিজেকে সমর্পণ করাÑ কোনটা? জিয়ার আহ্বানে বেগম জিয়া পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আশ্রয় ছেড়ে স্বামীর কাছে ফিরে যাননি। মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন নিজে এসেছিলেন বেগম জিয়ার কাছে, মুক্তাঞ্চলে নিয়ে যেতে। কিন্তু সেদিন তিনি যাননি জিয়ার কাছে। নয় মাস পাকিস্তানীদের আশ্রয়ে থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এই মহানায়কই সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন করেন। আবার তিনিই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সংবিধানে নিষিদ্ধ ঘোষিত মদ, জুয়া ও ঘোড়দৌড়ের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। বিসমিল্লাহ সংযোজন করে একদিকে ধর্মানুরাগীদের খুশি করাÑঅপরদিকে মদ্যপ ও জুয়াড়িদের সমর্থন আদায় করে নেন। ধর্মের বেশধারী এসব রাজনীতিকরা যেন ‘মিসিং দ্য উড ফর দ্য ট্রি’। সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে অন্তঃপুরবাসিনী খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছেন তিনি খাদ্যাভাবে ভুগছিলেন না। এমনকি সরকারীভাবেও অবরুদ্ধ নন। অফিস কাম রেসিডেন্সে বসে দেশ ধ্বংসের জয়গান গাইতে গাইতে তিনি বেরিয়ে এসে ক্ষমতার মসনদে বসতে চান। আন্দোলন নামক অদৃশ্য বস্তুকে তিনি ‘ জাগ্রত দেবী’র মতো খাড়া রাখতে চান। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি যে পথে ছুটে চলছেন ঘোড়ার পিঠে নয়, গাধার পিঠে চড়ে, সে গাধা গন্তব্যে পৌঁছবে না কখনও। মহাজোট সরকারের প্রতিপক্ষ হওয়ার মুখে ২০ দলীয় জোট পতনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। তাই সংবাদ সম্মেলনে একা খালেদা ও তার কর্মচারীরা ছাড়া তার নিজ দলের এবং অন্য ১৯ দলের কোন নেতার দেখা মেলেনি। দেশের জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর একক নেত্রী হিসেবে তিনি নিজেকে উপহাসপাত্র করে দেশজুড়ে নাশকতা অব্যাহত রাখার যে আহ্বান জানিয়েছেন, যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছানো পর্যন্ত, তা হয়ত পৌঁছবে। তবে বুমেরাং হয়েই। জঙ্গীবাদ দমন হলেই খালেদা জিয়াও নিঃশেষিত হয়ে যাবেন। দেশ তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। কারণ জঙ্গীপনা দিয়ে, মিথ্যাচার দিয়ে, চালাকি দিয়ে বেশি দূর যাওয়া যায় না। দেশ ধ্বংসের সব প্রচেষ্টা নস্যাত হবে। কারণ বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি। দুর্বৃত্তেরা তা কখনও বোঝেনি। যেমন বোঝেনি খালেদার আশ্রয়দাতা একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনী। নাশকতা, সহিংসতা, সন্ত্রাস, জঙ্গীপনার দিন ফুরিয়ে আসছে। বোমা মেরে মানুষ হত্যার বিচার শুরু হলে, যা খালেদা জিয়াও চেয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে, সব খুনীরা শাস্তি পাবে। মানুষ হত্যার উৎসব চিরতরে বন্ধ হতেই হবে। সভ্যতা, আইন, দেশ ও জাতির স্বার্থে।
×