ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শাহরিয়ার কবির

অভিজিত হত্যার তদন্ত ও চলমান সন্ত্রাস

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৬ মার্চ ২০১৫

অভিজিত হত্যার তদন্ত ও চলমান সন্ত্রাস

মুক্তচিন্তার লেখক ও ব্লগার অভিজিত রায় হত্যার উনিশ দিন পেরিয়েছে, প্রধান আসামি শফিউল আলম ফারাবীকে গ্রেফতার করে চৌদ্দ দিন রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তারপরও পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত হত্যার উদ্দেশ্য উদঘাটন করতে পারেননি। ১৩ মার্চ (২০১৫) পুলিশদের এক সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, হুমায়ুন আজাদ হত্যার যদি বিচার হতো তাহলে হয়ত অভিজিতকে এভাবে জীবন দিতে হতো না। অভিজিত হত্যাকাণ্ডের সময় অনতিদূরে দণ্ডায়মান পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেছেন, এরা পুলিশ বিভাগের কলঙ্ক, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেলসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রথাবিরোধী মুক্তচিন্তার লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ঘাতকদের বিচার না হওয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর প্রবীণ উপদেষ্টা ১৩ মার্চ যে মন্তব্য করেছেন একই কথা লিখেছিলাম ১ মার্চ দৈনিক ‘কালের কণ্ঠে’। ‘অভিজিত হত্যা : বাংলাদেশ কোন পথে’ শিরোনামে আমি লিখেছিলাম, ‘হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলাকারীরা যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেত, তাহলে রাজীব অথবা অভিজিত হত্যার আগে ঘাতকরা দশবার চিন্তা করত। এসব হত্যার বিচার না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবীরা শুধু নন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিরাপদ নন।’ অভিজিত হত্যার প্রধান আসামি গ্রেফতারকৃত ফারাবী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও হত্যার হুমকি দিয়েছে তার ব্লগে। শুধু হুমায়ুন আজাদ হত্যা নয়, ষোলো বছর আগে বরেণ্য কবি শামসুর রাহমানের ওপর হামলাকারী ‘হরকাতুল জিহাদে’র ঘাতকদেরও বিচার হয়নি। গত ষোলো বছরে মৌলবাদী ঘাতকরা যে সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে বা হত্যার উদ্দেশ্যে যাদের ওপর হামলা করেছে কোনটিরই বিচার হয়নি। এ কারণে অভিজিত হত্যার পর সুপ্রীমকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি, বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ক্ষুব্ধ হয়ে মন্তব্য করেছেন, বিচার বিভাগের হাতে অভিজিতের রক্ত লেগে আছে। অভিজিত হত্যার প্রধান আসামি ফারাবী এবং তার জঙ্গী মৌলবাদী জিহাদী ভাইরা অভিজিত রায়সহ প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের দীর্ঘকাল ধরে হত্যার কথা বলছে। কেন, কিভাবে হত্যা করতে হবে এ বিষয়ে বহু লেখা তাদের বিভিন্ন পুস্তিকা ও ব্লগে আছে। হুজি থেকে আনসারুল্লাহ টিম পর্যন্ত জঙ্গী মৌলবাদীরা কখনও তাদের কর্মকাণ্ডের কারণ বা উদ্দেশ্য গোপন করে না। যে বইমেলায় অভিজিত খুন হয়েছেন সেই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’-এর দ্বিতীয় বর্ধিত সংস্করণ। এই সংস্করণের ভূমিকায় অধিকাংশ পৃষ্ঠা অভিজিত ব্যয় করেছেন বিভিন্ন সময়ে ঘাতক ফারাবীর ব্লগ থেকে তার প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক এবং হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতি বিষয়ক উদ্ধৃতি দিয়ে। এসব আমাদের গোয়েন্দা বিভাগের অজানা থাকার কথা নয়। তবে ফারাবীকে গ্রেফতারে বিলম্ব না ঘটলেও চৌদ্দ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর যদি তাঁরা বলেন, অভিজিত হত্যার উদ্দেশ্য জানা যায়নি তাহলে বলতেই হবে তাঁদের এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে বছরের সেরা মশকরা বই আর কিছু নয়। জামায়াত-বিএনপি যুগল যখন ক্ষমতায় ছিল, যখন প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো শতাধিক জঙ্গী সংগঠন গজিয়েছিল, নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছিল মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবীদের, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের, পেশাজীবী ও সংস্কৃতিকর্মীদের, তখন জঙ্গীদের গ্রেফতার-প্রহসন ও বিচার-প্রহসনের বহু দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছি। সেই সময় জঙ্গীদের গ্রেফতার এবং কিছুদিন পর জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসা সম্পর্কে একাধিক লেখায় মন্তব্য করেছিলাম টেলিভিশনের শিশুতোষ কার্টুন সিরিজ ‘টম এ্যান্ড জেরি’র খেলা হিসেবে। জঙ্গীরা জানত তাদের গ্রেফতার আসলে গ্রেফতার নয়, এক ধরনের খেলা। তাই তারা ধরা দিত এবং যথারীতি জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসত। সেই খেলা এখনও চলছে। তখন রিমান্ডে নিয়ে জঙ্গীদের কিভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো এ রকম অনেক মজার প্রহসনের সংবাদ খবরের কাগজেও বেরিয়েছে। জামায়াত বিএনপির পুলিশ আমাকে ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে মিথ্যা বলার জন্য কত ধরনের নির্যাতন করেছে উচ্চতর আদালতে তা বলেছি। সেই সময় দুর্ধর্ষ জঙ্গী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে কিভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সে বিষয়ে তখনকার এক লেখায় উল্লেখ করেছি জঙ্গী নেতাকে রিমান্ডে এনে তদন্তকারী কর্মকর্তা সসম্ভ্রমে প্রশ্ন করছেন হুজুর, আপনি নাকি অমুক দিন, অমুক জায়গায়, অমুকের সঙ্গে কথা বলেছেন? জঙ্গী নেতা জবাবে বললেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (২)। যতবার তাকে প্রশ্ন করা হয় প্রতিবার একই উত্তর দেয়া হয়। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে উক্ত ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এভাবেই জামাতুল মুজাহিদীনের ভয়ঙ্কর ঘাতক বাংলাভাই এবং তার মতো আরও অনেকে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েও বেরিয়ে গেছে। যেভাবে জামিন পেয়ে জেল থেকে বেরিয়ে কর্পূরের মতো উবে গেছে শামসুর রাহমানের ওপর হামলাকারী থেকে আরম্ভ করে রাজীব হত্যার আসামিরা। পুলিশের কাছে কর্পূর হলেও ঘাতকরা নিজেদের ও সংগঠনের নাম ঠিকানা পাল্টে নিষ্ঠার সঙ্গে নিয়োজিত থেকেছে তাদের নির্দিষ্ট কর্মযজ্ঞে। প্রশাসন তাদের বার বার ছাড়লেও তারা যে কাউকে ছাড়ে না তার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত অভিজিত হত্যাকাণ্ড। ২০১৪ সালে জামায়াতের এক নেতা পত্রিকান্তরে বলেছিলেন, পাঁচ বছরে সরকার জামায়াতের প্রায় এক লাখ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে, যাদের ভেতর পঁচানব্বই হাজার জামিন পেয়ে বেরিয়ে গেছে এবং বাকি পাঁচ হাজারও জামিনের প্রক্রিয়ায় আছে। জামায়াত নেতার এই দাবি ভিত্তিহীন মনে করার কোন কারণ নেই। প্রচলিত ফৌজদারি আইনে সাক্ষ্যপ্রমাণের মারপ্যাঁচে এভাবেই জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা বিচার ও শাস্তি থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। অভিজিত হত্যার প্রধান আসামি ফারাবী আগেও গ্রেফতার হয়েছিল এবং যথারীতি জামিন পেয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিত নিহত না হলে ফারাবী বহাল তবিয়তে তাদের ব্লগে ঘৃণা ও সন্ত্রাসের ভাইরাস বিতরণ করত, অভিজিতদের হত্যার জন্য তরুণ কর্মীদের জিহাদী উন্মাদনায় উদ্বুদ্ধ করত। অভিজিত হত্যা না হলে জামায়াতীদের বহুল প্রচারিত বাঁশের কেল্লার পরিচালকও বহাল তবিয়তে তার ব্লগে মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবীদের কুপিয়ে মারার ছুরি চাপাতিতে শাণ দেয়া অব্যাহত রাখত। গত ১২ মার্চ জামায়াতে ইসলামীর সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম ব্লগ ‘বাঁশেরকেল্লা’র এডমিন, জামায়াতের ছাত্র সংগঠনের অন্যতম নেতা জিয়াউদ্দিন ফাহাদকে আটকের পর দৈনিক জনকণ্ঠে এ বিষয়ে একটি দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘বাঁশেরকেল্লার অবাধ অপপ্রচার রোধে কী করছে বিটিআরসি’ শিরোনামে জনকণ্ঠের প্রতিবেদক ফিরোজ মান্না লিখেছেন, ‘বাঁশেরকেল্লা’র এক এডমিন গ্রেফতার হলেও কয়েক হাজার এডমিন দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিচ্ছে মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক চেতনার গুরুত্বপূর্ণ মানুষ জনকে। বাঁশেরকেল্লা, বাঁশেরকেল্লা ইউএসএ, আওয়ামী ট্রাইব্যুনাল, বাকশাল নিপাত যাক, বাঁশেরকেল্লা ইউকে, তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লা, আই এ্যাম বাংলাদেশী, ডিজিটাল রূপে বাকশাল, বিএএন বাঁশখালী নিউজ-২৪, ইসলামী অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট, তরুণ প্রজন্ম, ভিশন ২০২১সহ ৬০টির বেশি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এসব অপপ্রচার ও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। বাঁশেরকেল্লার নির্দেশে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, বাস-ট্রেনে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন কর্মসূচী চলছে। দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত করতে সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ‘সূত্র জানিয়েছে, বাঁশেরকেল্লা নামের ফেসবুক পাতাটি ক্রমাগত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। দেশে-বিদেশে তাদের কয়েক হাজার এডমিন কাজ করছে দেশের বিরুদ্ধে। কয়েক হাজার শিবিরকর্মী এডমিন হিসেবে বাঁশেরকেল্লার বিভিন্ন পেজে বা সাইটে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তাদের সঙ্গে পাকিস্তান, তুর্কি ও ইন্দোনেশিয়ার সাইবার আর্মি একযোগে কাজ করছে। লন্ডন থেকে জামায়াত-শিবিরের যে ফ্যান পেজটি পরিচালিত হয় তার নাম ইউকে বাঁশেরকেল্লা। এখানে জামায়াত শিবিরের ৫শ’ দেশী-বিদেশী তথ্য প্রযুক্তিবিদ কাজ করে যাচ্ছে। এখান থেকেই নির্দেশ আসে কোথায় কখন আঘাত হানতে হবে। সম্প্রতি এই পেজের মাধ্যমে ১০ স্থানে আঘাত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশে টানা হরতাল অবরোধের মধ্যে কোথায় কোন সময় পেট্রোলবোমা, ককটেল ও রেললাইন উপড়ে ফেলা হবে সেই নির্দেশও বাঁশেরকেল্লার মাধ্যমে আসছে। ‘জামায়াত-শিবিরের বাঁশেরকেল্লা (বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত) পেজটি বিটিআরসি একাধিকবার বন্ধ করে দেয়ার পরও কোন লাভ হয়নি। কারণ বন্ধ করার অল্প সময়ের মধ্যেই শিবিরের লোকজন আবার একই নামে একটি করে নতুন পাতা চালু করে ফেলছে। তারপর বাঁশেরকেল্লার টুইটার এ্যাকাউন্ট থেকে নতুন পাতাটির লিংক ছড়িয়ে দিচ্ছে। সিএনএন-এর আইরিপোর্ট বিভাগের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কিভাবে ইসলামকে অপব্যবহার করে সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে। বাঁশেরকেল্লায় পোস্টকৃত ছবিগুলো, পাতাটির টুইটার এ্যাকাউন্টেও পোস্ট করা হচ্ছে। প্রতিটি ছবির সঙ্গে তারা হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা লাইভ, আলজাজিরা স্ট্রিম ও ইউএনকে যোগ করে নিচ্ছে। এভাবেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।’ (জনকণ্ঠ, ১৪ মার্চ ২০১৫) অভিজিত হত্যার পর সারাদেশে এবং বিদেশেও হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষকে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। খালেদা জিয়ার চলমান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধের সাধারণ মানুষের ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। বিভিন্ন জায়গায় পেট্রোলবোমা নিক্ষেপকারী জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীদের ধরে মানুষ গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। গণপিটুনিতে একাধিক মৃত্যু সংবাদও পত্রিকায় দেখেছি। খালেদা জিয়ার প্রতিহিংসার আগুনে খেটে খাওয়া নিরীহ মানুষ যেমন অঙ্গারে পরিণত হচ্ছে, ভস্মীভূত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের যাবতীয় অর্জন ও স্বপ্ন। অভিজিতের হত্যাকাণ্ড এবং সরকার উৎখাতের জন্য চলমান সন্ত্রাস বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি আমাদের গোটা প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। দেড় শ’ বছরের পুরনো ঔপনিবেশিক সাক্ষ্য আইন এবং জামায়াত প্রস্তাবিত প্রশাসন জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাস নির্মূলে উপযুক্ত বলে আমরা মনে করি না। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে জাতিসংঘের সহযোগিতায় ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন’ প্রণয়ন করলেও এর প্রয়োগ এখনও দৃশ্যমান নয়। যদি প্রয়োগ হতো এই আইনের প্রতিটি ধারায় তাবত জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসের ধর্মপিতা, আল কায়েদা ও আইএস-এর জ্ঞাতি ভ্রাতা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি এতদিনে নিষিদ্ধ হতো। বাংলাদেশে সন্ত্রাসের রাজনীতি ও দর্শন মওদুদীবাদ ও ওহাবিবাদ যতদিন সক্রিয় থাকবে, অভিজিতের ভাষায় যতদিন তারা ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ সমাজদেহে ছড়াতে থাকবে, ততদিন মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন এবং বাঙালীর হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িকতার ঐতিহ্য নিরাপদ থাকতে পারে না। শামসুর রাহমান ও হুমায়ুন আজাদ তাঁদের ওপর হামলার জন্য জামায়াতের সহযোগী হরকাতুল জিহাদকে নয়, সরাসরি জামায়াতকে দায়ী করেছিলেন। জামায়াতকে বেলাগাম ছেড়ে দিয়ে খুচরো ফারাবী ফাহাদদের গ্রেফতার করে এসব হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাস নির্মূল দূরে থাক নিয়ন্ত্রণও করা যাবে না। ১৫ মার্চ ২০১৫
×