ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই বিদেশী কোচের কাছে সালাউদ্দিনের প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৫ মার্চ ২০১৫

দুই বিদেশী কোচের কাছে সালাউদ্দিনের প্রত্যাশা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আসন্ন এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অনুশীলন শুরু হয়েছে ১০ মার্চ থেকে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে রোজ ঘাম ঝরাচ্ছেন ওয়াহেদ, হেমন্ত, তকলিস, লিটন, রায়হানরা। তাদের দায়িত্ব নিতে ইতোমধ্যেই আবারও ঢাকায় এসেছেন ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ। শনিবারই ছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে যুবদলের অনুশীলনের শেষদিন। এরপর কাল রবিবার দলকে নিয়ে চলে যাবেন সাভারের জিরানির বিকেএসপিতে। সেখানে অনুশীলন চলবে আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত। ক্রুইফ এবার সঙ্গে করে একজন গোলরক্ষক কোচ নিয়ে এসেছেন। মজার বিষয় হচ্ছেÑ জাতিতে ডয়েশ (জার্মানদের জাতীয়তা) এবং হল্যান্ডে কাজ করার কারণে বাফুফে প্রথমে এই কোচকে ডাচ্ ভেবেছিল! পরে এই ভুল ধরা পড়ে। ৩৬ বছর বয়স্ক (জন্ম : ১৯৭৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর) গোলরক্ষক কোচের নাম ক্রিস্টিয়ান শোয়েচলার। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী জার্মানির এই গোলরক্ষক কোচ ইউরোপিয়ান (উয়েফা), আফ্রিকান (সিএফ) এবং এশিয়ান (এএফসি) সংস্থাগুলোর ক্লাব ও জাতীয় দলগুলোতে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। কাজ করেছেন সুদানের আল-মেরিখ স্পোর্টিং ক্লাব (২০০৯-১০), লেবানন জাতীয় ফুটবল দল (২০১২-১৩) এবং সর্বশেষ সৌদি আরবের ইত্তিফাক ফুটবল ক্লাবে (২০১৩)। শনিবার বাফুফে ভবনে বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন বৈঠক করেন ক্রুইফ এবং শোয়েচলারের সঙ্গে। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে সালাউদ্দিন জানান, ‘আমি শোয়েচলারকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি আমাদের জাতীয় দল যেসব ম্যাচগুলোতে হারে, তার নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ফ্রি কিক এবং ক্রস থেকে গোলরক্ষক গোল হজম করছে। এক্ষেত্রে তার পজিশন সেন্সের অভাব প্রকট। তবে এক্ষেত্রে আমি রক্ষণভাগকেও দায়ী করব, কেননা ফ্রি কিকের সময় তারা ঠিকমতো প্রাচীর গড়ে তুলতে পারে না। শোয়েচলারকে আমি বলেছি, গোলরক্ষকের এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।’ শোয়েচলারকে আসলে কতদিনের জন্য এনেছে বাফুফে? সালাউদ্দিন জানান, আপাতত অনুর্ধ-২৩ টুর্নামেন্ট পর্যন্তই তার মেয়াদ। তারপর শোয়েচলার সিলেটে যাবেন বাফুফে ফুটবল একাডেমি পরিদর্শনে। তারপর সম্ভবত আমরা ১ বা ২ এপ্রিল তার সঙ্গে বসব। তারপর পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে তার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। অনুর্ধ-২৩ আসর শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশ দল কোন প্রস্ততি ম্যাচ খেলবে কি না, খেললে কয়টিÑ এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা সিঙ্গাপুর গিয়ে ওদের অলিম্পিক টিমের (অনুর্ধ-২৩) সঙ্গে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলব। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৬ মার্চ আমাদের যুবদল সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে।’ অনুর্ধ-২৩ আসরে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে প্রত্যাশা সম্পর্কে সালাউদ্দিন বলেন, ‘সিরিয়া, উজবেকিস্তান খুবই শক্তিশালী। উজবেকিস্তান তো ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপের মূলপর্বে অল্পের জন্য কোয়ালিফাই করতে পারেনি। সেক্ষেত্রে আমি চাই ওদের সঙ্গে বাংলাদেশ দল ভাল খেলে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। এই টুর্নামেন্টে ভাল খেললে আগামীতে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা অনেক সহজ হবে।’ শোয়েচলার বলেন, ‘বাফুফে সভাপতিকে ধন্যবাদ আমাকে এদেশের ফুটবল নিয়ে কাজের সুযোগ করে দেয়ার জন্য। আমি চেষ্টা করব গোলরক্ষকদের টেকনিক্যাল সমস্যাগুলো দূর করতে, তাদের পারফর্মেন্স-স্কিল-আত্মবিশ্বাস বাড়াতে। যদিও টুর্নামেন্টের আগে সময় হাতে বেশি নেই, তারপরও আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব।’ আল-মেরিখের হয়ে কাজ করা সময় শোয়েচলারের ক্লাব ২০১০ সালে জেতে ‘সুদান কাপ।’ এছাড়া দলটি সিএএফ চ্যাম্পিয়ন্স লীগের মূলপর্বে উত্তীর্ণ হয়। শোয়েচলার ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের মূলপর্বে লেবাননকে উন্নীত করার লক্ষ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত হন ২০১২ সালে। তবে মূলপর্বে লেবনান যেতে না পারলেও দলটি তাদের ইতিহাসের সেরা সাফল্য পায় বাছাইপর্বে ইরানকে ১-০ গোলে হারিয়ে। ইরানের পর্তুগীজ কোচ কালোর্স কুইরোজ লেবানন দলের গোলরক্ষক আব্বাস হাসানের ভূয়সী প্রশংসা করতে বাধ্য হন। প্রকৃতপক্ষে আব্বাসের এই প্রশংসার কৃতিত্ব যায় শোয়েচলারের ঝুলিতেই। শোয়েচলার নিজ দেশের জার্মান স্পোর্ট ইউনিভার্সিটি কলোগনে থেকে পড়াশোনা করেছেন স্পোর্টস সাইন্স বিষয় নিয়ে। জার্মান ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন (ডিএফবি) এবং রয়্যাল ডাচ্ ফুটবল একাডেমি এ্যাসোসিয়েশন (কেএনভিপি) থেকে গোলকিপিং বিষয়ে সনদপত্র লাভ করেন। ২০০৮-০৯ পর্যন্ত কাজ করেন জার্মান গোলকিপার স্কুলে। এছাড়া ২০০০-০৮ পর্যন্ত কাজ করেন জার্মান ফুটবল একাডেমিতে। শোয়েচলারের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ঘেটে জানা গেছে তার রয়েছে কোচ হিসেবে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। কিন্তু ২০০৯ সালের আগে কোথায় কাজ করেছেন, তার কোন বিবরণ নেই! এছাড়া ক্রুইফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে আমাদের দল যেভাবে খেলেছে, সেই দলের কিছু খেলোয়াড় যুবদলেও আছে। তাদের স্পিরিট অনেক কাজে লাগবে আসন্ন টুর্নামেন্টে। যদিও প্রতিপক্ষ হিসেবে সিরিয়া এবং উজবেকিস্তান অনেক কঠিন। তবে আমরাও যে ভাল দল, সেটা প্রমাণ করতে চেষ্টা করব। ভারত আমাদের সমমানের দল। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে, এ কারণে এবার ওখানে ঘরোয়া লীগ হয়নি। এ বিষয়টিকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।’ এখন দেখার বিষয়, ঘরের মাঠে এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ দলের মূলপর্বে যাওয়ার লক্ষ্য পূরণ হয় কি না এবং ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ এবং জার্মান গোলরক্ষক কোচ ক্রিস্টিয়ান শোয়েচলারের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে দল হিসেবে ভাল নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে পারে কি না যুবদল।
×