শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রস্তুতিটা ভালমতোই সেরে নিল ভারত। শনিবার পুল পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে জিম্বাবুইয়েকে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে ধরাশায়ী করল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। ৪৮.৫ ওভারে অলআউট হলেও ২৮৭ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে জিম্বাবুইয়ে। অবশ্য সুরেশ রায়না ও মহেন্দ্র সিং ধোনির (৮৫*) ধুরন্ধর ব্যাটিংয়ে সে চ্যালেঞ্জ আর চ্যালেঞ্জ থাকেনি! ৪৮.৪ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। ১১০ রানের অপরাজেয় ইনিংস খেলে নায়ক রায়না। অকল্যান্ডে জীবনের বিদায়ী ম্যাচে ১৩৮ রানের দুরন্ত ইনিংস উপহার দিয়েও হার দেখতে হয় জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলরকে। ছয় ম্যাচের সবটিতে জিতে ১২ পয়েন্ট নিয়ে পুল ‘বি’এর শীর্ষে থেকেই শেষ করল ধোনি বাহিনী। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় কোয়ার্টারে তাদের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ।
৬ উইকেটের ফল দেখে যতটা মনে হয়, অকল্যান্ডের ম্যাচ আসলে ততটা একতরফা ছিল না। আগেই বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়ায় এই ম্যাচে হারানোর কিছু ছিল না জিম্বাবুইয়ের। তাই নির্ভার হয়ে মরণকামড় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন টেইলর। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে একপর্যায়ে ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল তারা। মনে হচ্ছেল চ্যাম্পিয়নরা ধুলোয় মিশিয়ে দিতে যাচ্ছে তাদের। সেখান থেকেই বুক চিতিয়ে হাল ধরেন অধিনায়ক। চতুর্থ উইকেট জুটিতে শন উইলিয়ামসকে নিয়ে ৯৬, এরপর পঞ্চম উইকেটে ক্রেইগ অরভিনকে সঙ্গী করে মাত্র ১৩.২ ওভারে ১০৯ রান যোগ করে উল্টো ভারতীয়দের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেন টেইলর! ৪২তম ওভারে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন সাজঘরে ফেরেন নামের পাশে জ্বলজ্বলে ১৩৮, দলের সংগ্রহ ২৩৫। ১১০ বলে ১৫ চার ও ৫ ছক্কা দিয়ে বিদায়ী ইনিংসটি সাজান তিনি।
এ নিয়ে প্রথম জিম্বাবুইয়ান ও ইতিহাসের নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকান টেইলর। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচে করেছিলেন ১২১ রান। সাবেক অধিনায়ক এ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলকে টপকে ওয়ানডেতে জিম্বাবুইয়ের সর্বাধিক ৮ সেঞ্চুরির মালিক হয়েই বিদায় জানালেন টেইলর। ২ সেঞ্চুরি ও ১ হাফ সেঞ্চুরিতে চলতি বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বাধিক ৪৩৩ রান তার, জিম্বাবুইয়ান হিসেবে এটিও রেকর্ড। আগের সর্বাধিক ছিল নেইল জনসনের; সাবেক এই অলরাউন্ডার ১৯৯৯ বিশ্বকাপে করেছিলেন ৩৬৭ রান। শন উইলিয়ামসের ৫৭ বলে ৫০, শেষদিকে সিকান্দার রাজার ১৫ বলে ২৮ উল্লেখ্য। ভারতের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন তিন পেসার মোহাম্মদ সামি, উমেশ যাদব ও মোহিত শর্মা। স্পিনার রবিচন্দ্রন আশ্বিনের শিকার ১টি।
জবাবে ২১ রানেই দুই ওপেনার রোহিত শর্মা (১৬) ও শিখর ধাওয়ানকে (৪) হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। এরপর কোহলি (৩৮), রাহানের (১৯) প্রতিরোধও দীর্ঘ হয়নি। চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে বড় তারকা বিরাট কোহলি যখন সাজঘরে ফেরেন ২২.৪ ওভারে চ্যাম্পিয়নদের রান তখন ৯২! ভারতীয়রা তখন পঁচা শামুকে পাঁ কাটা ভয়ে...। পরের গল্পটা কেবলই রায়না-ধোনির। অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে জিম্বাবুইয়ের আশার বুকে ছুড়ি বসিয়ে দেন তারা। পঞ্চম উইকেটে ২৬ ওভারে অবিচ্ছিন্ন ১৯৬ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান দুইজন। ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পথে ১০৪ বলে ১১০ রানে অপরাজিত থাকেন রায়না। ছিল ৯ চার ও ৪টি ছক্কার মার। ক্যাপ্টেনকুল ধোনি ছিলেন আরও আগ্রাসী। ৭৬ বলে ৮৫ রানের পথে ৮ চার ও ২ ছক্কা হাঁকান তিনি। আবারও প্রমাণ করেন কেন তিনি আধুনিক ক্রিকেটের সেরা ফিনিশার!
বিশ্বকাপে রান টপকাতে গিয়ে ১৯৬ রানই ভারতের নতুন রেকর্ড জুটি। আগে যা ছিল ধাওয়ান-রোহিতের দখলে, এবারই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭২ রান করেছিলেন তারা। চলতি বিশ্বকাপেও রায়না-ধোনি জুটির এই রান ভারতের সর্বোচ্চ। কেবল তাই নয়, সফলভাবে ২৮৮ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়াও দলটির জন্য নতুন ইতিহাস। বিশ্বকাপে এর আগে সর্বোচ্চ ২৭৭ রান করে জিতেছিল ভারত, গতবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শক্তিধর প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেয়ার পথে আগের ম্যাচগুলোতে দুর্দান্ত খেলেছেন বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মারা। এবার কোয়ার্টারের আগের ম্যাচে জ্বলে উঠলেন রায়না-ধোনি। যার অর্থ চ্যাম্পিয়নদের প্রত্যেক ব্যাটসম্যান এখন ফর্মে, বাংলাদেশের জন্য এটিই না কাল হয়ে দাঁড়ায়!
দারুণ জয়ে খুশি হলেও চাপের কথা অস্বীকার করেননি ভারত সেনাপতি। ধোনি বলেন, ‘শুরুতে ব্রেন্ডন টেইলরের ব্যাটিং এবং পরবর্তীতে ১০০ রানের মধ্যে শীর্ষ চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে আমরা কিছুটা চাপে পড়ে যাই। ওই অবস্থায় রায়না চমৎকার খেলেছে। আমি আগেও বলেছি, পাঁচ নম্বরে নেমে রায়নাই সেরা ব্যাটসম্যান; ও সেটি আবারও প্রমাণ করেছে। আমরা কেবল রানই করিনি, চাপকেও জয় করেছি। কোয়র্টারের আগে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: