ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইনের খসড়া তৈরি ॥ এখন থেকে কাউকে পাগলও বলা যাবে না

সম্পত্তিসহ মানসিক রোগীর ২৯ অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৫ মার্চ ২০১৫

সম্পত্তিসহ মানসিক রোগীর ২৯ অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে

বিকাশ দত্ত ॥ মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সম্পত্তিসহ ২৯ অধিকার নিশ্চিত করে আইন কমিশন একটি খসড়া আইন তৈরি করেছে। এপ্রিল মাসে এই খসড়া আইনটি আইন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হবে। এর ফলে এখন থেকে আর কাউকে পাগলও বলা যাবে না। দীর্ঘ ১০৩ বছর পর ব্রিটিশদের প্রণীত ‘দ্যা লুনাসি এ্যাক্ট’ সংযোজন ও বিয়োজন শেষে এই খসড়াটি করা হয়েছে। পাশাপাশি মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায়ও বেশ কিছু সুপারিশ ও আইনী প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিধান করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে দ- বা শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। কোন ব্যক্তি এই বিধান অনুসরণ না করে মানসিক হাসপাতাল অথবা মানসিক সেবালয় প্রতিষ্ঠা বা পরিচালনা করলে তিনি অনধিক দুই বছরের সশ্রম কারাদ- বা অনুর্ধ ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ- ভোগ করবেন। আইন কমিশন সূত্রে এ খবর জানা গেছে। এছাড়া মানসিক রোগ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান শর্ত ভঙ্গ করলে তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে। পাশাপাশি অনিচ্ছাকৃত ভর্তির ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসারের আবেদনের মাধ্যমে আদালত কর্তৃক ৯০ দিন পার হওয়ার পর চিকিৎসাধীন প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ বৃদ্ধি ও মানসিক রোগে আক্রান্ত কয়েদিদের ভর্তি, আটক, চিকিৎসা এবং নিরীক্ষা সংক্রান্ত বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ, ক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক আদালত, আমল যোগ্যতা, আপোসযোগ্যতা, জামিন যোগ্যতা, কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংগঠন, আইনগত সহায়তা, মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীর পেনশন সুবিধা, সরল বিশ্বাসে কৃত কাজকর্ম রক্ষণ, বিধি প্রণয়ন, আইনের ইংরেজী পাঠ প্রণয়ন এসব সংক্রান্ত বিধান রাখা হয়েছে। আইন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শাহ আলম জনকণ্ঠকে বলেছেন, গত ১০০ বছরে সমস্যার ধরন প্রকার অনেক বেড়ে গেছে। সেগুলোকে বিবেচনায় এনেই আইনটির পুরো পরিবর্তন করা হয়েছে। আশা করছি এক মাসের মধ্যেই আইনটির খসড়া মন্ত্রণালয়ে দেয়া হবে। এখন থেকে আর কাউকে পাগল বলা হবে না। এই আইনটি পরিবর্তন সংযোজনে শুধু চিকিৎসক নয় শিক্ষকসহ অন্যদের পরামর্শ নেয়া হয়েছে। ১৯১২ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় আইনী কাঠামোয় দ্যা লুনাসি এ্যাক্ট যে সব দেশে প্রচলিত ছিল সে সব দেশেও অনেক আগেই এই আইন বাতিল করে মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণীত হয়েছে। পাকিস্তানেও ২০০১ সালে মানসিক স্বাস্থ্য অর্ডিন্যান্স প্রণীত হয়। বাংলাদেশে এই আইনের যে সমস্ত বিষয় সংযুক্ত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কেবল জটিল মানসিক রোগী এবং তাদের সম্পর্কিত বিষয়াদিই নয় বরং এই আইনের বিষয়বস্ত হলো বাংলাদেশের জনগণের সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্য। আইন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত জেলা জজ ) ফউজুল আজিম এই খসড়াটি তৈরি করেছেন। আইন কমিশন মানসিক রোগীর যে সমস্ত অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ করেছে তার মধ্যে রযেছে, (১) স্বাভাবিক জীবন যাপন, (২) প্রকৃতির সময়ে সর্বক্ষেত্রে সমান আইনী সামর্থ্যরে স্বীকৃতি ও কর্তৃত্ব (৩) জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, ভিন্ন রাজনৈতিক বা ভিন্ন মতাদর্শ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অথবা অন্যান্য সামাজিক মর্যাদার ভিত্তিতে বৈষম্যের শিকার না হওয়া। (৪) মানসিক অসুস্থ হওয়া অথবা মানসিক অক্ষমতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে নাবালক, মহিলা, সংখ্যালঘু এবং অভিবাসী ব্যক্তিদের বৈষম্যের শিকার না হওয়া (৫) উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির অংশীদারিত্ব (৬) স্বাধীন অভিব্যক্তি ও মত প্রকাশ এবং বোধগম্য উপায়ে তথ্য প্রাপ্তি; (৭) ব্যক্তি স্বাতন্ত্র বজায় রেখে নিজ পছন্দের ভিত্তিতে মাতাপিতা অভিভাবক, সন্তান বা পরিবারের সঙ্গে সমাজে বসবাস, বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন ও পরিবার গঠন। (৮) রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত বা ভর্তুকিপ্রাপ্ত গৃহায়ন কর্মসূচীতে অগ্রাধিকারপ্রাপ্তি (৯) যানবাহন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে প্রবেশগম্যতা (১০) স্বাধীনভাবে জীবনযাপন এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পূর্ণ ও কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ (১১) প্রাক প্রাথমিক হতে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত মূলধারার শিক্ষার সকল স্তরে অধ্যয়নে এবং সর্বস্তরে একীভূত (১২) সমাজে অন্যদের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে কর্মে নিযুক্ত হওয়া, সমসুযোগ ও সমান কাজের জন্য সমান বেতন, ভাতা, পদোন্নতি, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নিপীড়ন হতে সুরক্ষা এবং অবসরকালীন সুবিধা প্রাপ্তি (১৩) কর্মজীবনে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের কর্মে নিয়োজিত থাকার, অন্যথায়, যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি (১৪) মানসিক চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজনে কর্মক্ষেত্রে কর্মঘণ্টা (১৫) সর্বাধিক অর্জনযোগ্য মানের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি। (১৬) মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে অমর্যাদা (শারীরিক অথবা মানসিক), নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ অথবা অসম্মানজনক আচরণ হতে সুরক্ষা (১৭) মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে চিকিৎসা শুরু করার পূর্বে রোগী অথবা তার আইনসম্মত অভিভাবক কর্তৃক ‘অবহিতকরণ সাপেক্ষে চিকিৎসার সম্মতিপত্র (১৮) মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নাবালক হলে,-(অ) ইচ্ছার বিরুদ্ধে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত সকল সামাজিক বিবেচনার প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ (আ) চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে তাদের বয়সের উপযুক্ত এবং মানসিক বিকাশের অনুকূল পৃথক অবস্থানের জায়গা করার নিশ্চিতা (১৯) মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মহিলা হলে, (অ) পর্যাপ্ত গোপনীয়তা এবং পুরুষদের থাকার জায়গা হতে ভিন্ন স্থানে অবস্থানের নিশ্চিত করা। (২০) কোন বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশে শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী হলে, বাংলাদেশের নাগরিকের মতোই মানসিক চিকিৎসা প্রাপ্তি (২১) শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রসহ প্রযোজ্য সকল ক্ষেত্রে ‘যুক্তিসাপেক্ষ ব্যবস্থায়ন নীতির সুবিধা পাপ্তি।
×