ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার অফিসের সামনে ঝুলানো হলো বোমায় দগ্ধদের ছবির ব্যানার

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৫ মার্চ ২০১৫

খালেদার অফিসের সামনে ঝুলানো হলো বোমায় দগ্ধদের ছবির ব্যানার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলমান হরতাল-অবরোধে পেট্রোল-বোমাসহ নাশকতার প্রতিবাদে এবং নেতিবাচক আন্দোলন কর্মসূচী প্রত্যাহার করে জঙ্গী, মৌলবাদ, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ নিরাপদ এবং অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ার দাবিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে সচেতন তরুণ প্রজন্মের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা সেখানে পেট্রোলবোমায় দগ্ধদের ছবি সংবলিত একটি বড় ডিজিটাল ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়। শনিবার দুপুর পৌনে ১২টায় গুলশান ৮৬ নম্বর সড়কে খালেদা জিয়ার সামনে সংগঠনের কয়েক শ’ নেতাকর্মী জড়ো হয়ে আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমাসহ বিভিন্ন নাশকতার বিরুদ্ধে লেখা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন বহন করে তারা এ মানববন্ধন করে। এ কর্মসূচীতে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ২ শতাধিক ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। এদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সালাউদ্দিন আহমেদের পর এবার গায়েবি বিবৃতি দেয়া শুরু হয়েছে দলের আরেক যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলুর নামে। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো তার নামে দেয়া বিবৃতিতে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে আজ রবিবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত টানা ৭২ ঘণ্টা হরতাল পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। প্রসঙ্গত, ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপি জোটের টানা অবরোধ কর্মসূচী শুরুর পর থেকে অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি দিতেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি দিতেন দলের অপর যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার রাত থেকে সালাউদ্দিন নিখোঁজ হন বলে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ জানিয়েছেন। এর পর শনিবার থেকে গায়েবি বিবৃতি দেয়া শুরু করেন বরকত উল্লাহ বুলু। খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে ছাত্রছাত্রীদের হাতে থাকা ব্যানার ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘আর কত মানুষের বুক খালি হলে খুনী খালেদার রক্ত পিপাসা মিটবে?, ‘ধ্বংসের রাজনীতি বন্ধ কর’, ‘জঙ্গি ও মৌলবাদমুক্ত বাংলাদেশ চাই’, ‘জঙ্গীবাদকে না বলুন’, ‘শিক্ষার ওপর আঘাত কেন?’ আমরা তরুণ, আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই’, ‘আমার পথ চলায় বাধা কেন?‘ ‘আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন’ ‘নিরাপদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে চাই‘ ইত্যাদি। মানববন্ধন শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বিপরীত দিকে গাছের সঙ্গে চলমান আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমাসহ বিভিন্নভাবে সহিংসতায় নিহত ও আহতদের ছবিসংবলিত একটি বড় ডিজিটাল ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়া হয়। রঙিন এ ব্যানারে লেখা ছিল এদের কী অপরাধ ছিল? পরে সচেতন তরুণ সমাজের নেতাকর্মীরা ব্যানারের কাছে ফুল দিয়ে আন্দোলনের নামে নাশতায় হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশান ২ নম্বর থেকে মিছিল করে সচেতন তরুণ সমাজের শতাধিক নেতাকর্মী ৮৬ নম্বর সড়কের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ গুলশান মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে তাদের প্রথমে বাধা দেয়। এ সময় তরুণ সমাজের নেতারা পুলিশকে উদ্দেশ করে বলেন, আমাদের কর্মসূচী শান্তিপূর্ণ। আমরা ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে বলতে এসেছি হরতাল-অবরোধের নামে নিরীহ ও সাধারণ মানুষকে পেট্রোলবোমা মেরে হত্যা করবেন না। আমাদের সবাইকে শান্তিতে থাকতে দিন। এর পর তারা আস্তে আস্তে গুলশান কার্যালয়ের সামনে চলে যায় এবং সেখানে প্রায় আধাঘণ্টা মানববন্ধন করে। মানববন্ধন চলাকালে সচেতন তরুণ সমাজের আহ্বায়ক ও ঢাকা কলেজের ছাত্র আসাদুজ্জামান উজ্জ্বল সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, আন্দোলনের নামে দেশে যারা সহিংসতা চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করুন। হরতাল-অবরোধের নামে সহিংসতা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি আন্দোলনের নামে সহিংসতা বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দিন। দেশকে ধ্বংস করবেন না। আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের স্কুল-কলেজে যেতে দিন। মানবন্ধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সচেতন তরুণ সমাজের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও তিতুমীর কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা আছেন আমাদের সঙ্গে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আন্দোলন করার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু সেই আন্দোলনে সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হলে আমরা তরুণ প্রজন্ম ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমরা এখানে এসেছি পেট্রোলবোমাসহ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বন্ধের দাবি নিয়ে। আমরা চাই, আমাদের শিক্ষাজীবন যাতে হরতাল ও সন্ত্রাসের কারণে ব্যাহত না হয়। খালেদা জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই আমরা এখানে মানববন্ধন করতে এসেছি। উল্লেখ্য, ৬ জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়ার নির্দেশে সারাদেশে টানা অবরোধ ও ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন হরতাল পালন করে আসছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। আর হরতাল-অবরোধ সমর্থকরা প্রতিদিনই যাত্রীবাহী বাসসহ যানবাহনে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের নাশকতা চালিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করছে। হরতাল-অবরোধকারীদের সহিংসতায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৩০ জন মানুষের প্রাণ গেছে। এ ছাড়া পেট্রোলবোমায় দগ্ধ অনেকে এখনো বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। বুলুর নামে গায়েবি বিবৃতিতে ৭২ ঘণ্টা হরতাল পালনের ঘোষণা ॥ এবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলুর নামে গণমাধ্যমে গায়েবি বিবৃতি পাঠানো শুরু হয়েছে। শনিবার ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে তার নামে পাঠানো বিবৃতিতে চলমান টানা অবরোধ কর্মসূচীর মধ্যে সারাদেশে আজ রবিবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত হরতাল পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
×