ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালাও পোড়াও মানুষ হত্যা বন্ধ করলে আলোচনা হতে পারে ॥ সৈয়দ আশরাফ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৫ মার্চ ২০১৫

জ্বালাও পোড়াও মানুষ হত্যা বন্ধ করলে আলোচনা হতে পারে ॥ সৈয়দ আশরাফ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অবরোধ-হরতালের নামে জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যা বন্ধ হলেই বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হলেও হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, খালেদা জিয়া মানুষ হত্যা বন্ধ না করলে দেশে কোন সংলাপ হবে না। এখন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়া পথ নেই। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসী-জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ও জনগণকে জিম্মি করে কোন দাবি আদায় করা যাবে না। তাই সংলাপ চাইলে মানুষ হত্যাসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ করে দেশে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করুন। পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা করেনি, বরং তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, আমরাও তাই করব। জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যা বন্ধ করলে, আর শান্তির পরিবেশ এলে পরে আলোচনা হলেও হতে পারে। তাই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা হবে না। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংলাপ করলে তারা আরও দ্বিগুণ গতিতে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাবে। তাছাড়া সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা করলে তাঁদের প্রশ্রয় দেয়া হয়। তাই এখন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়া পথ নেই। সরকার এসব সন্ত্রাসীদের ভয় করে না। শনিবার ধানম-িস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। শুক্রবার খালেদা জিয়ার সাংবাদিক সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক জবাব দিতেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংলাপ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রক্তাক্ত বাংলাদেশে কিসের আলোচনা? এখন সময় বাংলার মাঠ থেকে সন্ত্রাসীদের বিতাড়িত করার। খুনীদের সঙ্গে কোন সংলাপ নয়। সৈয়দ আশরাফ বলেন, আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান, ইউরোপসহ পৃথিবীর কোথাও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আপোস করেনি কিংবা তাদের প্রশ্রয় দেয়নি। বাংলাদেশও দিবে না। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। সারাবিশ্বে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, আমরাও তাই করব। কারণ আওয়ামী লীগ আইন ও নিয়মে বিশ্বাসী। আর সন্ত্রাস বন্ধ করলে রাজনীতি কলঙ্কমুক্ত হবে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে। খালেদা জিয়াকে ওই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে যেমন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়েছে ঠিক তেমনিভাবে খালেদা জিয়া অংশগ্রহণ না করলেও আগামী নির্বাচন সঠিক সময়ে একইভাবেই হবে। নির্বাচনের ট্রেন কেউ বন্ধ করতে পারবে না। আশরাফ বলেন, আইএস, তালেবান, আল-কায়েদা এসব জঙ্গী সংগঠনগুলোর পক্ষের শক্তি হলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। উনি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চান। বাংলাদেশকে পোড়া মাটির দেশের পরিণত করাই তাঁর লক্ষ্য। খালেদা জিয়া গত দুই মাসের অধিক সময় ধরে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদী কর্মকা- চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছেন। তার এই কুৎসিত চেহারা কখনোই আড়াল করে রাখা যাবে না। বর্তমানে তারা আইএসের মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে সৃষ্টি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিএনপি নেত্রীর উদ্দেশে সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, হরতাল-অবরোধসহ সব ধরনের সহিংস কর্মকা- প্রত্যাহার করুন। মানুষের জীবনের স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করুন। জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা বন্ধ করলে, শান্তির পরিবেশ এলে আলোচনা হলেও হতে পারে। তবে এগুলো অব্যাহত থাকলে সংলাপ হবে না। তিনি বলেন, আজ যদি খালেদা জিয়া তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীকে সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করেন, মানুষ হত্যা বন্ধ করেন, তাহলে দেশে শান্তির পরিবেশ আসবে। আর সেই শান্তির পরিবেশে আলোচনা সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা জানি বিএনপি ও বিএনপি নেত্রীর অর্থ, শক্তি ও নির্দেশনা কোথা থেকে আসে। তাঁর (খালেদা জিয়া) শক্তি কোথা? কারা এই সন্ত্রাসী কাজকে প্রশ্রয় দিচ্ছে? কোথা থেকে নির্দেশ আসছে তাও সরকার অবগত। সৈয়দ আশরাফ বলেন, সাংবাদিক সম্মেলনে দেয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্য বস্তুনিষ্ঠ ছিল না। অবরোধে সারাদেশে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ১৫০ জন মানুষকে তাঁরা হত্যা করেছেন। মানুষ হত্যা করা গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনের জন্য তাদের আন্দোলন নয়। বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্য দেশে আইএসের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। খালেদা জিয়া শান্তির পক্ষে থাকলে বা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকলে এত মানুষ পুড়িয়ে মারতেন না। তাঁর কাছে বাংলাদেশের কোন মানুষ নিরাপদ নন। উনি চান শুধু ক্ষমতা। তাই এখন সময় এসেছে বাংলার মাটি থেকে এই সন্ত্রাসীদের চিরতরে নির্মূল করা। একাত্তরে পাকিস্তানীরা আমাদের ঠেকাতে পারেনি, খালেদা জিয়াও এখন পারবেন না। সবাইকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন সন্ত্রাসকে ‘না’ বলি। দুই নেত্রীকে এক পাল্লায় মাপার সুশীল সমাজের ভূমিকা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, তাদের ‘সুশীল’ নামটা কে দিল? উনারা নিজেরাই নিজেকে সুশীল বলে। বিজ্ঞরা পত্রিকায় কলাম লেখার মধ্য দিয়ে তাদের পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু কিছু দিন পর পর একেক জন যেভাবে আসে! এমনভাবে মনে হয় তিনিই বাংলাদেশের মুরব্বি। তিনি বলেন, পরিবেশ না থাকায় বর্তমানে টকশোতে ‘প-িত’ ব্যক্তিরা আসেন না। আর প-িত ব্যক্তিরা না আসায় তাদের নিয়ে এসে শূন্যতা পূরণ করে টিভিগুলো। এতে টেলিভিশনের মানও কমছে। পরিবেশ সৃষ্টি করলে অনেকেই টিভির টকশোতে আসবে। তিনি বলেন, নিউজও আগের মতো হয় না। হয়ত খবরের অভাব, না হয় আপনারা সঠিক খবরটা সেভাবে উপস্থাপন করেন না। ‘বুদ্ধিজীবীদের’ কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশটা বুদ্ধিজীবীরা এনে দেয়নি। বুদ্ধিজীবীরা সবসময় সুবিধাবাদী। তাদের বিভিন্ন সংগঠন, এক ব্যক্তি বিভিন্ন সময় একই দাবি নিয়ে আসেন। প্রতিনিয়তই বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আলোচনা করছেন, এ বিষয়টি কীভাবে নিচ্ছেন একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফ বলেন, তাঁদের সঙ্গে নির্বাচনের তারিখ বা সময় দেয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না। সবাই সহিংসতা বন্ধ করতে বলেছেন। বিদেশী বিশেষত পশ্চিমা কূটনীতিকদের প্রতি বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বাড়তি আগ্রহ দেখানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখানে অনেকেই আসেন যারা নিজ দেশে কোন মূল্য পায় না। অথচ আপনারা ৫০টি টিভি চ্যানেল গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। মনে হয় তারা আপনাদের ত্রাণকর্তা। তিনি বলেন, মনে রাখবেন মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিদের জন্য সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট। তবে তাতে ভারত ও বাংলাদেশ ভয় পায়নি। দেশ স্বাধীন হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ. ডাঃ দীপু মনি, আহমদ হোসেন, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ডাঃ বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, এস এম কামাল হোসেন, এনামুল হক শামিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×