ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্রুত আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ

মাসে এক লাখ নতুন গ্রাহককে সংযোগ দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুত

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৫ মার্চ ২০১৫

মাসে এক লাখ নতুন গ্রাহককে সংযোগ দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুত

রশিদ মামুন ॥ প্রতিমাসে এক লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুত সংযোগ দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুত সমিতি। ইতোমধ্যে আবাসিক সংযোগের আবেদন করেছেন এমন সকল গ্রাহককে জুনের মধ্যে সংযোগ দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সকলের কাছে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার অঙ্গিকার রয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণে সব থেকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে আরইবির। যদিও যেসব এলাকায় সরবরাহ অবকাঠামো রয়েছে সেসব জায়গার অনেকেই বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছেন না। বিদ্যুতের লাইনে ওভারলোডজনিত সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন সংযোগ প্রদানে এক ধরনের স্থবিরতা ছিল। এতে আরইবিতে সংযোগ আবেদনের পাহাড় জমেছে। সম্প্রতি বিদ্যুত বিভাগ দ্রুত এসব আবেদন নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছে। জানা গেছে, ২০১০ এ সাময়িকভাবে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ বন্ধ করার পর আবেদনের পাহাড় জমে। নতুন বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার অনুমতি দিলেও আরইবি নিজস্ব বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে লক্ষ্য অনুযায়ী সংযোগ দিতে পারছিল না। যদিও এর সঙ্গে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুত সমিতিগুলোর দুর্নীতিও অনেকাংশে দায়ী। স্থানীয় বিদ্যুত অফিসে দালাল চক্রের মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার অভিযোগ রয়েছে। খোদ বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বিভিন্ন সময়ে এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন এরপরও একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণ করলে সকলেই এমনিতে বিদ্যুত পেয়ে যাবেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার পর আরইবিতে ৪৫ লাখ ৩১ হাজার ৯১৬টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৫ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৯ গ্রাহককে নতুন বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়েছে। এখনও সংযোগের অপেক্ষায় রয়েছে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৩৩৭টি আবেদন। এর অধিকাংশই আবাসিক সংযোগ। ফেব্রুয়ারিতে নতুন এক লাখ ২২ হাজার ১৫৭ জনকে নতুন বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়েছে। আরইবি বলছে তারা প্রতিমাসেই এখন থেকে এক লাখের বেশি গ্রাহককে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে। নতুন সকল আবেদনের জন্য প্রায় এক হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। প্রতিমাসে নতুন বিদ্যুত সংযোগ দেয়ায় ১০০ মেগাওয়াটের মতো নতুন বিদ্যুত প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ প্রতিমাসে আরইবির সমিতিগুলোর জন্য নতুন ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত চাহিদা তৈরি হচ্ছে। এখনও অনিষ্পন্ন আবেদনগুলোতে বিদ্যুত সুবিধা দিতে হলে প্রায় হাজার মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুত দরকার পড়বে। গ্রীষ্মে সরবরাহ সঙ্কট তৈরি হলে সংযোগ প্রদানের এই হার কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত মৌসুমেও এই প্রবণতা দেখা গেছে। শীতে যে পরিমাণ সংযোগ দেয়া হয় গ্রীষ্মে গিয়ে তা কমিয়ে দেয় বিতরণ সংস্থাগুলো। জানতে চাইলে আরইবির নির্বাহী পরিচালক শাহনেওয়াজ খান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি প্রতিমাসে এক লাখের বেশি সংযোগ দিতে। জুনের মধ্যে আবাসিক সকল গ্রাহক যারা এর মধ্যে সংযোগের আবেদন করেছেন তাদের সকলকে বিদ্যুত দেয়া হবে। তিনি বলেন, আরইবি এতদিন ওভারলোড সমস্যার কারণে বিদ্যুত সংযোগ দিতে পারেনি। এখন আমরা সেই সমস্যা অনেকটা দূর করে এনেছি। সমিতিগুলো নিজস্ব উদ্যোগে ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করছে। আমরাও চেষ্টা করছি আরইবি থেকে সহায়তা করতে। এছাড়া চীনের সহায়তায় আরও একটি বড় প্রকল্প হবে যা বাস্তবায়িত হলে ওভারলোড সমস্যা আর থাকবে না। তবে সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকায়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে জানান তিনি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সরবরাহ এবং সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রত্যেকটি কোম্পানিকে সুনির্দিষ্ট এই বিষয়ে সভা করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বৈদ্যুতিক স্থাপনায় যাতে কোনরূপ ভাংচুর হামলা না হয় এজন্য মানসম্পন্ন সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু আরইবিতে এখনও সব থেকে বেশি সমস্যায় রয়েছে। তাদের দীর্ঘ সরবরাহ লাইনের অনেকটাই এখনও ওভারলোডে চলছে। যদিও আরইবি থেকে দাবি করা হচ্ছে ওভারলোড সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এই ওভারলোড সমস্যা নিরসনের প্রক্রিয়া এগুচ্ছে ধীরে চল নীতিতে। গত দুই মাসের ওভারলোড পরিস্থিতি তাই বলছে। আরইবি মন্ত্রণালয়ে দেয়া প্রতিবেদনে বলছে জানুয়ারিতে তাদের বিতরণ ব্যবস্থায় ৬১ হাজার ৫২৫টি ট্রান্সফরমার ওভারলোডে চলছিল। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ২১০টিতে। অর্থাৎ একমাসে নতুন ট্রান্সফরমার বসানো হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৩১৫টি। এই হার না বৃদ্ধি করা গেলে কয়েক বছর লেগে যাবে সঙ্কট নিরসনে। আরইবি সূত্র বলছে এখন দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার জন্য গ্রাম এবং শহরের মানুষের বিদ্যুত ব্যবহারে খুব একটা পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। শহরের মানুষের মতো গ্রামেও টেলিভিশন, ফ্রিজ, কম্পিউটার, পাখা ব্যবহার হয়। এতে দ্রুততার সঙ্গে চাহিদা বেড়ে সরবরাহ ব্যবস্থায় ওভারলোড সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এজন্য কোন এলাকার জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
×