ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপত্তা জোরদার করায় সন্তোষ

জ্বালাও পোড়াও রোধে সরকারের সাফল্যে কূটনীতিকদের স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৫ মার্চ ২০১৫

জ্বালাও পোড়াও রোধে সরকারের সাফল্যে কূটনীতিকদের স্বস্তি

তৌহিদুর রহমান ॥ দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার সফল হচ্ছে বলে মনে করছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। এছাড়া দেশজুড়ে সহিংসতা কমে আসায় কূটনীতিকদের মধ্যে এখন স্বস্তি ফিরে এসেছে। পাশাপাশি বিরোধী জোটের জ্বালাও, পোড়াও, হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। তবে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে এখনও কোন কোন কূটনীতিকের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের বর্ষপূর্তি কেন্দ্র করে বিএনপির ডাকা চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী নিয়ে কূটনীতিকরা বরাবরই উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ ১২ মার্চ ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু’র বাসায় বৈঠক করেছেন বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিক। ওই বৈঠকে বিভিন্ন দেশের ছয়জন কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তারা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে সারাদেশে সহিংসতা কমে আসায় কূটনীতিকরা স্বস্তি প্রকাশ করেন। সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার সফল হচ্ছে বলেও অভিমত প্রকাশ করেন তারা। এদিকে রাজধানীর গুলশান-বারিধারায় কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের জন্য কূটনীতিকরা সরকারের কাছে বিভিন্ন সময় আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের বৈঠকে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি বার বার উঠে এসেছে। চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচীর মধ্যে একজন কূটনীতিকের বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে বলেও সরকারের কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল। তবে সরকারের তরফ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করায় কূটনীতিকরা এখন সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সূত্র জানায়, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণে কূটনীতিকরা বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন। বিশেষ করে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সংলাপে মধ্যস্থতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে সরকার থেকে ইতোমধ্যেই কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে, সরকার কোনভাবেই সংলাপে আগ্রহী নয়। কারণ, যারা পেট্রোলবোমা দিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, শত শত গাড়িতে আগুন দিয়েছে, সাধারণ জনগণের সম্পদ বিনষ্ট করেছে তাদের সঙ্গে সরকার সংলাপে যেতে চায় না। এছাড়া সাংবিধানিকভাবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে বলেও কূটনীতিকদের সামনে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কূটনীতিকরা এখন সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। এ কারণে প্রতি সপ্তাহে তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। সরকার বিরোধীপক্ষের টানা দুই মাস হরতাল-অবরোধ কর্মসূচীতে সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকার বিষয়ে তারা ইতোমধ্যেই পর্যবেক্ষণ করেছেন। সে কারণে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিজ নিজ দেশের বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয় এগিয়ে নিতেই কূটনীতিকদের এখন আগ্রহ বেশি। বিদেশী কূটনীতিকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা কঠোরভাবে দমনের জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। তারা মনে করেন সরকার বিরোধীপক্ষের আন্দোলনের অধিকার থাকলেও কোন ধরনের সহিংসতা করার অধিকার নেই। গণতন্ত্রে সন্ত্রাস ও সহিংসতার কোন স্থানও নেই। তাই যে কোন ধরনের সহিংসতা সরকারকে কঠোর হাতে দমন করা উচিত। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারও কূটনীতিকদের আহ্বান আমলে নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যেই দফায় দফায় ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সরকারের সঙ্গে বিদেশী কূটনীতিকদের বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, কানাডা, ব্রাজিল, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর কোরিয়া, সার্ক ও আসিয়ান, ওআইসিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। কূটনীতিকদের সঙ্গে সরকারের এসব বৈঠকে তাঁরা আন্দোলনের নামে সহিংসতা দমনের পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, সরকার বিরোধীপক্ষের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। তবে সেই আন্দোলন যেন কোন ধরনের সহিংসতায় না পৌঁছে। একই সঙ্গে গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ দেয়ার জন্যও আহ্বান জানান তাঁরা। সরকারের সঙ্গে বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় বিভিন্ন স্থানে প্রাণহানি, আহত ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। চলমান অবরোধে সহিংসতায় জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধের আহ্বানও জানিয়েছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। তারা বলেছেন, যেসব রাজনৈতিক দল নিরীহ মানুষ হত্যা করে, গাড়িতে আগুন দেয়, সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করছে, তাদের দ্রুত নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ওআইসির অন্যতম প্রধান সদস্য দেশ মিসর ও ফিলিস্তিনের কূটনীতিকরা সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানান। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে, আন্দোলনের নামে বিএনপি সারাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। সাধারণ মানুষের চলাফেরার অধিকারও বিঘিœত করছে তাঁরা। দেশের অর্থনীতিরও ক্ষতি করছে বিএনপি। সারাদেশে বিএনপির সহিংসতার বিভিন্ন চিত্রও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে, সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট রয়েছে। দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে সরকারের ইতোমধ্যেই কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। সেসব বৈঠকে কূটনীতিকরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সহিংসতা, জ্বালাও, পোড়াও চলছে, সেটা যেন সরকার কঠোর হাতে দমন করে। সাধারণ জনগণের জীবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
×