ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বোনম্যারো প্রতিস্থাপন

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১৫ মার্চ ২০১৫

বোনম্যারো প্রতিস্থাপন

সাম্প্রতিক সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য সুসংবাদ হলো বোনম্যারো (অস্থিমজ্জা) প্রতিস্থাপনে শতভাগ সফলতা অর্জন। ফলে ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। জনগণের দোরগোড়ায় অত্যাধুনিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার সরকারী উদ্যোগের বহির্প্রকাশস্বরূপ বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিট প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যে এই সাফল্য অর্জন বাস্তবিকই আশাপ্রদ দৃষ্টান্ত। এক সময় দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে রেডিওথেরাপি দেয়ার জন্য ভাল রেডিওথেরাপি মেশিন পর্যন্ত ছিল না। প্রতিবছর বহু ক্যান্সার রোগী সুচিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও অন্যান্য দেশে যেতেন। এখন আর সে সঙ্কট নেই। স্মরণযোগ্য, দেশে এক বছর আগে কোন অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন সেন্টার ছিল না। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিট প্রতিষ্ঠার পর তা দেশের রক্ত ক্যান্সারের রোগীদের চিকিৎসাব্যয়ও বহুলাংশে কমে গেছে। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করতে ব্যয় হয় সিঙ্গাপুরে ১ কোটি টাকার ওপরে, ভারতে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। আর বাংলাদেশে মাত্র ৫ লাখ টাকায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট (অটোলোগাস) করা সম্ভব। তবে এ্যালোজেনিক বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের খরচ এর দ্বিগুণ। বিশ্বে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে কোন কোন দেশের বিজ্ঞানী ল্যাবে বসেই মানুষের কোন কোন অঙ্গ তৈরি করছেন! শুধু তৈরি করাই নয়, রোগীর ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ কেটে কৃত্রিম অঙ্গ শরীরে বায়োটেকনোলজি বা জৈবপ্রযুক্তি এ অসাধ্য সাধন করছে। সম্প্রতি জাপানে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে যকৃত কোষ। কিডনি তৈরিও সম্ভব হয়েছে। স্কটল্যান্ডে কৃত্রিম রক্ত তৈরি করার অনুমোদন পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। হৃদরোগ, লিউকেমিয়া ও স্তন ক্যান্সারে এই থেরাপি প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া গেছে। অদূর ভবিষ্যতে অগ্নাশয়, হার্ট, নিউরন তথা মস্তিষ্কের মতো অপেক্ষাকৃত জটিল অঙ্গ উৎপাদন করার আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও চিকিৎসাসেবার অগ্রযাত্রার ধারায় রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য একেবারে কম নয়। অটিজমের জন্য দায়ী জিনসমূহের বৈশিষ্ট্য প্রকাশের ধরন চিহ্নিত করার কাজে সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানী। এতে অটিজমের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে চালু হয়েছে রোবটিক সার্জারি। প্রাথমিক অবস্থায় ইউরোলজি ও গাইনোকলোজি চিকিৎসায় এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। পাঁচ বছরের কম বয়সীদের জীবন রক্ষা, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, টিকাদান কর্মসূচী, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ- এসব ক্ষেত্রে আমাদের দেশের সাফল্য কম নয়। বিশ্বখ্যাত জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট বলেছে : ‘স্বাস্থ্যসেবায় কম বরাদ্দ, দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও ব্যাপক দারিদ্র্য সত্ত্বেও গত চার দশকে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অর্জন ব্যতিক্রমী। রক্ত ক্যান্সারের রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের আরও সম্প্রসারণ প্রয়োজন। বাড়াতে হবে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্ট। চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান জরুরী। সর্বোপরি চিকিৎসাক্ষেত্রে বাংলাদেশের ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রাখতে হলে চিকিৎসা গবেষণার পথ আরও প্রশস্ত করার লক্ষ্যে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
×