ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ফর্মুলা নিয়ে বেগম জিয়ার দরবারে হাজির

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ১৫ মার্চ ২০১৫

নতুন ফর্মুলা নিয়ে বেগম জিয়ার দরবারে হাজির

বাংলাদেশে রাজনৈতিক আন্দোলনের নতুন সংস্করণ চলছে। এই সংস্করণ একান্তভাবে জামায়াত-বিএনপির আবিষ্কার। অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে পেট্র্রোলবোমা মেরে নির্মমভাবে কোন বাছবিচার ছাড়া পুড়িয়ে মারা নতুন সংস্করণের বৈশিষ্ট্য। অবশ্য বেগম জিয়া হতে শুরু করে তাদের দলের নেতা-পাতি নেতারা বলেন, এই পেট্রোলবোমা নাকি সরকারী দল মারছে। আবার এও বলেন, সরকার যদি তাদের সব দাবি মেনে নেয় তাহলে পরদিন থেকেই এই সব সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যাবে। শুক্রবারের বেগম জিয়ার প্রেস ব্রিফিংয়েও তিনি একই কথা বললেন। আবার এসব নাশকতা চালাতে গিয়ে যারা ধরা পড়ছে তারা হয় জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসী অথবা ভাড়েটে দুর্বৃত্ত। মাঝে মধ্যে এই দুর্বৃত্তদের তালিকায় কিছু সরকারী দল সমর্থিত ভাড়াটেও দেখা যায়। তবে তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। তাদের এই উন্মত্ততা থেকে বাদ যাচ্ছে না আড়াই বছরের শিশু বা অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। নাহ, এতে বেগম জিয়ার কোন অনুশোচনা হবে তা মনে করার কোন কারণ নেই। পেট্রোলবোমায় এই পর্যন্ত কমপক্ষে তো একশ’ ত্রিশজন প্রাণ হারাল। তাতে বিএনপি-জামায়াত, তাদের পোষা বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়ার তেমন কিছু আসে যায় না। তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের হিসাব করা নিয়ে ব্যস্ত। পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা এটা তারা রাজনৈতিক অধিকার বলে মনে করে। বৈধপথে ক্ষমতায় যেতে বিএনপির সামনে একবার সুযোগ এসেছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময়। সে সময় তারা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে, কারণ তারা চাইছিল একটি অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে যা দেশের সর্বোচ্চ আদালত ইতোমধ্যে বাতিল করে দেয়। এই রায়ের ফলে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সরকার বেগম সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি সংবিধান সংশোধনী কমিটি করে দেয় এবং সেই কমিটি প্রায় আড়াই বছর কাজ করে। এই আড়াই বছরে উপস্থিত হয়ে সংশোধনীতে প্রস্তাব পেশ করার জন্য বিএনপিকে বহুবার তাগাদা দিলেও তা তারা তেমন আমলে নেয়নি। এরপর পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে গৃহীত হলে সেখানেও বিএনপি-জামায়াত জোট অনুপস্থিত থাকে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার চেষ্টা করেন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে। ব্যক্তিগতভাবে বেগম জিয়াকে তিনি ফোন করেন; কিন্তু বেগম জিয়ার কাছ হতে কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া তো যায়ইনি বরং তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে অত্যন্ত রূঢ় ব্যবহার করেন। শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে সেহেতু তারা মিলে একটি নির্বাচন ৫ জানুয়ারি করবেন এবং পরবর্তীকালে প্রয়োজনে আরও একটি মধ্যবর্তীকালীন নির্বাচন হতে পারে। বেগম জিয়া ঘোষণা করেন তিনি বা তার জোটের কোন শরিক দল ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো করবেনই না বরং তা প্রতিহত করবেন। সুতরাং শেখ হাসিনার মধ্যবর্তীকালীন নির্বাচনের আহ্বানের কোন কার্যকারিতা আর রইল না। নির্বাচন প্রতিহতের নামে সেই সময় পেট্রোলবোমার অভিষেক। সেবার মোট নিহতের সংখ্যা ছিল প্রায় দুইশ’। নির্বাচনের দিন স্কুল পুড়ল পাঁচ শতাধিক। পিটিয়ে মারা হলো রিটার্নিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আর নির্বাচন কেন্দ্রে আসা ভোটারকে। নির্বাচনের পূর্বে অনেক বিদগ্ধজন এই বলে বিএনপিকে নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন যে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের পরাজয় অবধারিত। তাদের কাছে তখন ‘গণতন্ত্রের’ প্রধান ও একমাত্র ‘ভিলেন’ একজন শেখ হাসিনা। আসতে থাকে নানা ফর্মুলা- শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে কিভাবে নির্বাচন করা যায়! বেগম জিয়া, যার প্রজ্ঞা সম্পর্কে কখনও আমার ধারণা খুব উঁচু ছিল না তিনি একটি ফর্মুলা দিয়ে বসলেন। বললেন এর আগের দু’মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যারা ছিলেন তাদের নিয়ে এমন একটি সরকার গঠন করা সম্ভব তবে সেখানে বিচারপতি খায়রুল হক থাকতে পারবেন না। এদের অনেকেই ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন অথবা বয়সের ভারে ন্যুব্জ। জামায়াত-বিএনপি ও তাদের ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীদের সামনে তখন বিচারপতি খায়রুল হক একজন জাতীয় বিশ্বাসঘাতক কারণ তাঁর নেতৃত্বাধীন সুপ্রীমকোর্টের ফুল বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছেন। অথচ সেই রায় ও তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ যদি কেউ ধৈর্য ধরে পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন সেই বেঞ্চ আর বিচারপতি খায়রুল হকের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা আর পাণ্ডিত্য। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে যে ক’জন বিচারপতি দায়িত্ব পালন করেছেন নিঃসন্দেহে বিচারপতি খায়রুল হক তাঁদের মধ্যে একজন উজ্জ্বল ব্যক্তি। বেগম জিয়ার ডাকে যখন দেশের মানুষ সাড়া দিচ্ছে না, পেট্রোলবোমায়ও যখন তিনি জনগণকে পরাস্ত করতে পারছেন না, তখন তার বুদ্ধিজীবীদের কয়েকজনকে তিনি মাঠে নামিয়েছেন নতুন ফর্মুলা দিয়ে। এদের অন্যতম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন। অনেকে বলেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তারই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নাম বিভ্রাট আর কিছু মানুষের ইচ্ছাকৃত ভুলের কারণে এমাজউদ্দীনের স্থলে ইয়াজউদ্দিন রাষ্ট্রপতি হয়ে গিয়েছিলেন। তবে সার্বিক বিচারে মেরুদ-হীন ইয়াজউদ্দিনের স্থলে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন রাষ্ট্রপতি হলে খারাপ হতো না। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন সম্প্রতি বিএনপির একাধিক মঞ্চে বলেছেন, দেশের চলমান সন্ত্রাস এড়াতে শেখ হাসিনার অধীনেই সংসদ নির্বাচন হতে পারে। তবে সেই নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি ভাল করে জানেন নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন, সরকার নয়। নির্বাচন কমিশন চাইলেই সেনাবাহিনীকে নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করতে পারে। ২০০১ সালের নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে যেভাবে নির্বাচন কমিশন ব্যবহার করে তাকে কলঙ্কিত করেছে তা কী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন ভুলে গেছেন? অথবা ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে বেগম জিয়ার রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসকে দিয়ে সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা তা তো ভুলে যাওয়ার কথা নয়। আসলে নির্বাচন কমিশনকে যদি আরও দায়িত্বশীল ও শক্তিশালী করার কথা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বলতেন তা হলে তাতে জাতি অনেক উপকৃত হতো। রাজনৈতিক দলগুলো যদি দায়িত্বশীল না হয় তা হলে সেনাবাহিনী দিয়ে কিছুই হবে না। আর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকুক বা অন্য কেউ, নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার কথা তো সংবিধানেই লেখা আছে। তার এই ফর্মুলা তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে কেন বেগম জিয়াকে বুঝাননি। নাকি কোন এক অদৃশ্য শক্তি এসে বেগম জিয়াকে ক্ষমতাসীন করবেন এমন সুযোগের জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের মতো তিনিও অপেক্ষা করছিলেন? ড. এমাজউদ্দীনের ফর্মুলার রেশ না ফুরাতেই এলো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ফর্মুলা। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বেগম জিয়া ডা. চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন। কিন্তু তার আচার-আচরণ বেগম জিয়ার আজ্ঞাবহ ভৃত্যের মতো না হওয়াতে তাকে এক কাপড়ে তিনি বঙ্গভবন থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। ‘বিকল্পধারা’ নামের একটি নতুন দল করতে চাইলে বেগম জিয়ার পুত্র তারেক রহমান তার পেটোয়া বাহিনী পাঠিয়ে সেই সভা ভ-ুল করে তার ওপর মোটরসাইকেল তুলে দিয়েছিল। তাতেও তৃপ্ত না হয়ে তার বারিধারার বাড়িতে আগুন দিয়ে তাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়। সেই বদরুদ্দোজা এখন তার হোন্ডা পার্টি ‘বিকল্পধারা’ নিয়ে বেগম জিয়ার ২০ দলীয় জোটের অংশীদার। তিনিও অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের মতো একই কথা বলেছেন। তার ওপর তিনি গত ৭ মার্চ তার ভাষায় সঙ্কট সমাধানের তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। তার এই প্রস্তাবগুলো হলো- প্রথমত. বর্তমান রাষ্ট্রপতির অধীনে একটি জাতীয় সরকার গঠন; যাঁরা নবম জাতীয় সরকারে সংসদ সদস্য ছিলেন তাঁরা জাতীয় সরকারের মন্ত্রী হতে পারবেন; কিন্তু আগামী নির্বাচনে তাঁরা অংশ নিতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত. সরকার প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কাজ হবে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন। এই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে। তৃতীয়ত. এই নির্বাচন হতে হবে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে। এই শর্তগুলো মেনে নিলে চলমান সঙ্কট নিরসনে স্থায়ী সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন। ডাঃ চৌধুরী একজন বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন, এখনও আছেন তা বলা যাবে না। তার পিতা কফিল উদ্দিন চৌধুরী একজন সফল রাজনীতিবিদ ছিলেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এ কে ফজলুল হকের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীও হয়েছিলেন (আইন ও বিচার)। তাঁর ছেলে একজন চিকিৎসক হিসেবে যতটুকু সফল রাজনীতিবিদ হিসেবে ততটুকু নন। তার এই যে ফর্মুলা তা তো বর্তমান সংবিধানের অধীনে সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশ একটি সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ। এখানে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাহী ক্ষমতা দেয়া সম্ভব নয়। বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অন্যতম দুর্বলতা ছিল প্রধান উপদেষ্টার হাতে সব ক্ষমতা দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছিল রাষ্ট্রপতির অধীনে যার ফলে ১৯৯৬ সালে বেগম জিয়ার নির্দেশে রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেবার প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমানের ত্বরিত হস্তক্ষেপে একটি বড় ধরনের সঙ্কট এড়ানো সম্ভব হয়েছিল। ডা. চৌধুরীর কাছে হঠাৎ নবম সংসদের কদর বেড়ে গেল। তাহলে দশম সংসদকে তিনি কী অস্বীকার করছেন? ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে? তিনি কী জানেন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ১৬২ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন (৩০ জন মহিলা আসন ছাড়া) এবং ১৬টি সংসদীয় এলাকায় কোন সংসদ সদস্যও ছিল না। বিশ্বাস না হলে নির্বাচন কমিশনের রেকর্ড দেখে নিতে পারেন। সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নির্ধারিত আছে। সেটি সংশোধন করতে পারে জাতীয় সংসদ। তা যদি হয় তা হলে এই সংসদকে তো স্বীকৃতি দেয়া ছাড়া ডা. চৌধুরীর কোন বিকল্প নেই। আর সংসদ যদি বৈধ হয়ে থাকে, যা অবশ্যই বৈধ তা হলে তার মেয়াদ তো পাঁচ বছর, যদি না সরকার কোন কারণে তার আগে তা ভেঙ্গে দেয়। আর তিনি যদি মনে করে থাকেন যে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করে জনগণ, সংসদ ও সরকারকে জিম্মি করে এই সব উদ্ভট পরামর্শ অনুযায়ী সরকার কাজ করবেন তা হলে তা খুব সুবিবেচনাপ্রসূত হবে বলে মনে হয় না। ডা. চৌধুরীদের উচিত এখন রাজনীতি হতে অবসর নিয়ে নিজের আত্মজীবনী লেখা । তাতে জনগণ উপকৃত হবে। ব্যারিস্টার রফিকুল হক। দেশের মানুষ তাঁকে খুব শ্রদ্ধা করে। অনেক সময় উচিত কথা বলতে দ্বিধা করেন না। আবার মাঝে মধ্যে তাঁর কিছু বক্তব্য জনগণকে বিভ্রান্ত করে। তিনি গত ৭ তারিখ বলেছেন মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে একটি ‘হ্যাঁ’-‘না’ কিসিমের গণভোট হতে পারে। এমন একটি কা- জেনারেল জিয়া করেছিলেন। তার আগে পাকিস্তানে তাঁর উর্ধতন কর্মকর্তা জেনারেল আইউব খান করেছিলেন। এমন রেফারেন্ডাম সংবিধানের কোন্ ধারা-বলে করা সম্ভব তা বলে দিলে ভাল হতো। জিয়ার পঞ্চম সংশোধনীতে রেফারেন্ডামের বিধান ছিল। দেশের সর্বোচ্চ আদালত জিয়ার সামরিক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করার পর এই পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে এই বিধান এখন সংবিধানে নেই। ব্যারিস্টার রফিকুল হক ২০১৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার নিজেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এতে তাঁর সম্মান বাড়েনি। একটি বিষয় পরিষ্কার, যারা এই সব ফর্মুলা নিয়ে এখন হাজির হচ্ছেন তাঁরা কেউ কিন্তু পেট্রোলবোমা সন্ত্রাসের কথা বলছেন না। মনে হতে পারে তাদের একটি অভিন্ন লক্ষ্য হচ্ছে বেগম জিয়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে না গিয়ে যে ভুলটা করেছেন তাকে সেই ভুল হতে শিক্ষা না নিতে দিয়ে সেখান হতে উদ্ধার করা। বেগম জিয়া বিনা কারণে টানা ৬৭ দিন নিজের অফিসে অবস্থান করার পর শুক্রবারে সাংবাদিকদের সামনে তার বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। মাঝখানে গত ১৯ জানুয়ারি একবার তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়েছিলেন। দু’বারই সঙ্গে দলের তেমন কোন সিনিয়র নেতা ছিলেন না। এবার সাংবাদিকদের সামনে তিনি একটি বক্তব্য পড়ে শোনালেন। তার চিরাচরিত রেওয়াজ অনুযায়ী তিনি সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের জবাব দিলেন না। তবে উঠে যাওয়ার সময় তিনি একজন সাংবাদিকের একটি প্রশ্নের দায়সারা গোছের জবাব দিলেন। মানুষ প্রত্যাশা করেছিল তিনি নতুন কিছু বলবেন। তাদের তিনি হতাশ করে সেই পুরনো মদ নতুন বোতলে ঢাললেন। তার এই বক্তব্য গণমাধ্যমে পাঠিয়ে দিলে কোন অসুবিধা ছিল না। তিনি মানুষকে আরও একটু কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করার অনুরোধ করলেন। অর্থাৎ আরও কিছু মানুষ পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হতে হবে। অবশ্য তিনি বলেছেন আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ক্ষতি পুষিয়ে দেবেন। এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি করতে পারেন তা অবিশ্বাস্য। স্যুটেড বুটেড ভদ্রলোকরা বেগম জিয়াকে পছন্দ করবেন, তার ছেলে তারেক রহমানকে ছলে বলে কৌশলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানাবেন তাতে আশ্চর্য হওয়ার তেমন কিছু নেই। কিন্তু এই স্যুটেড বুটেড ভদ্রলোকদের কোন ছেলেমেয়ে স্ত্রী ভাই ব্রাদার পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে মারা যাবেন বা হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আর্ত চিৎকার করবেন না। বেগম জিয়ার অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ বর্তমান সরকার করে দেবে কী-না তা একান্তভাবে তাদের এখতিয়ার।
×