ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

১৫৪ কলেজে কর্মসূচী পালন হবে

হরতাল-অবরোধ বন্ধের দাবিতে আজ কলেজে কলেজে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৪ মার্চ ২০১৫

হরতাল-অবরোধ বন্ধের দাবিতে আজ কলেজে কলেজে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হরতাল-অবরোধ অবিলম্বে বন্ধের দাবিতে আজ সারাদেশের কলেজগুলোতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবে ২০ লাখ শিক্ষার্থীর আশ্রয়স্থল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বেলা ১১টায় সারাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত দুই হাজার ১৫৪ কলেজে একযোগে এ কর্মসূচী পালন করা হবে। গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয়ভাবে ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিন্ন ব্যানার হাতে একযোগে কর্মসূচীতে অংশ নেবেন। এদিকে অবরোধ-হরতালের প্রতিবাদ ও সহিংস রাজনীতি থেকে শিক্ষাঙ্গন বাঁচাতে আজ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবে বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস)। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ হরতালের নামে চলা নাশকতার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, যারা আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে মানুষ পুড়িয়ে শিক্ষাজীবন ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে তারা অমানুষ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি কলেজের শিক্ষক-ছাত্র-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ বেলা ১১টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত একযোগে অভিন্ন ব্যানারে মানববন্ধন করবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ফয়জুল করিম। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপাক ড. হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর অফিসের সামনে মানববন্ধন করবে। এছাড়া অন্যান্য কলেজেও একই সময়ে মানববন্ধন কর্মসূচী চলবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ জানিয়েছেন, আমরা সকাল ১১টা থেকে ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত নিঃশব্দ মানববন্ধনে অংশ নেব। এ কর্মসূচীর ব্যানারের বক্তব্য হবে- ‘শঙ্কামুক্ত জীবন চাই/নিরাপদে ক্লাস করতে পরীক্ষা দিতে চাই/শিক্ষা ধ্বংসকারী সহিংসতা বন্ধ কর’। এদিকে শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘পেট্রোলবোমা ও জঙ্গীবাদী সহিংসতায় জাতীয় শিক্ষাজীবন ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস)। গোলটেবিল বৈঠক থেকে কর্মসূচীর ঘোষণা করেন বাকবিশিস’র সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হক আলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান, তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মোঃ আবদুর রশীদ, শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মোহম্মদ আলী চৌধুরী, মাইলস্টোন কলেজের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইয়াদ আলী খান, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির বিলকিস জামান, জাতীয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশনের সভাপতি শাহীনুর আক্তার, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জুয়েল প্রমুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, হরতাল-অবরোধ দিয়ে বিএনপি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্যই এ আন্দোলন। এটি আমাদের সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। যারা আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে মানুষ পুড়িয়ে শিক্ষাজীবন ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে তারা অমানুষ। অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, যাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব আছে তারা দেশকে সহিংসতার আগুনে পোড়াতে পারে না। আন্দোলন নয়, চলমান সহিংসতায় দেশের ১০০ ভাগ মানুষই ক্ষতির মুখে পড়েছে। শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যয়ের পথে। এ অবস্থা থেকে শিক্ষাব্যবস্থাকে স্বাভাবিক জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। অমানুষদের কবল থেকে দেশরক্ষার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ সহিংসতার মূল উদ্দেশ্য গণতন্ত্র নয়। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মাধ্যমে দেশ ধ্বংস, মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোকে ধ্বংস ও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোই এ ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও শিক্ষার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তাই শিক্ষাব্যবস্থা রক্ষার মধ্যে দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শিক্ষাঙ্গনে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। এখন থেকেই এ সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি জোটের টানা ৬৬ দিনের হরতাল-অবরোধে এসএসসি পরীক্ষার সময়সূচী পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে সরকার। শিক্ষাঙ্গনকে হরতালের আওতামুক্ত রাখার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর একাধিক অনুরোধেও কাজ হয়নি। অধ্যাপক মোঃ আবদুর রশীদ বলেন, অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনাই শিক্ষার কাজ। কিন্তু এ কথা তথাকথিত কিছু ব্যক্তি বুঝতে চাইছেন না। সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থে তারা শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মাধ্যমে দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়েছেন। তিনি জানান, শিক্ষাব্যবস্থার স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ সকাল ১১টা থেকে ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্ব-স্ব ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হবে।
×