ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এডিপি বাস্তবায়নে ২০ ভাগ পিছিয়ে পড়েছে বিদ্যুত বিভাগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৪ মার্চ ২০১৫

এডিপি বাস্তবায়নে ২০ ভাগ পিছিয়ে পড়েছে বিদ্যুত বিভাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়েছে বিদ্যুত বিভাগ। বেশিরভাগ প্রকল্পের অর্থ ছাড় হলেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খরচ করতে পারেনি বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুত কেন্দ্র, সঞ্চালন-বিতরণ লাইন এমনকি উপকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পিছিয়ে পড়ছে। এখন পর্যন্ত ৫৩ ভাগ কাজ শেষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও ৩৩ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২০ ভাগ পিছিয়ে রয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। বিদ্যুত বিভাগের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে হরতাল অবরোধের কারণে এখন কার্যক্রম একেবারে ঝিমিয়ে পড়েছে। ফলে ভবিষ্যতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন আরও পিছিয়ে পড়বে। এমনিতে হরতালে ডে টু যে এক্সটেনশন (হরতালের দিনগুলোর জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত সময়) পায়। বিশেষ করে যেসব প্রকল্পে বিদেশী প্রকৌশলীরা কাজ করেন তাঁরা হরতাল অবরোধে কাজ করতে চান না। এ কারণে প্রকল্পগুলো পিছিয়ে যায়। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, বছরের শুরুর দিকে এডিপি বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে বছরের শেষের দিকে চাপ বাড়ে। দ্রুত কাজ করতে গিয়ে কাজের মান বজায় থাকে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজ শেষ না হলেও বরাদ্দ নিয়ে কাজ টেনে নিয়ে যাওয়া হয় পরের বছরে। এতে পরবর্তী বছরের যে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা থাকে তার বাস্তবায়ন ঝুলে যায়। বিদ্যুত মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এডিপি বাস্তবায়ন বৈঠকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে। ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে বলা হয় প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত সময় লাগলে খরচও বাড়ে। এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। এ জন্য প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে এনে আরও দক্ষ, আন্তরিক ও নিরলসভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে ৬৭ প্রকল্প রয়েছে। এজন্য বরাদ্দ নয় হাজার ১৭১ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে তিন হাজার কোটির কম খরচ হয়েছে। পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয়ের পরও খরচ করতে না পারায় সম্প্রতি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীকে কাটছাঁট করতে হয়েছে সরকারের। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিদ্যুতের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে অর্থনীতিতে তা বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়টি বার বার আলোচনায় এলেও সব কাজই চলছে ঢিমেতালে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিদ্যুত সরবরাহ প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র দুই দশমিক ৬৮ ভাগ। খুলনা এবং কুমিল্লায় প্রিপেইড মিটার লাগানোর কথা থাকলেও কাজ শুরুই করা হয়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও রাজশাহীতে পল্লী বিদ্যুতের সম্প্রসারণ কার্যক্রম লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এতে নতুন গ্রাহক সৃষ্টির কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, অনেক দিন ধরে বিবিয়ানার বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নির্মাণে এক ধরনের স্থবিরতা চলছে। বেসরকারী একটি কোম্পানির ব্যর্থতার পর পিডিবি নিজেই এখানে ৪০০ মেগাওয়াটের একটি গ্যাসচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। বিদ্যুত উন্নয়ন তহবিলে গ্রাহকের দেয়া টাকাতে এই কেন্দ্র নির্মাণ হওয়ার কথা। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ ছাড় করা হয়েছে। কিন্তু কাজই শুরু করা সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত সাত কোটি টাকা ছাড় করা হলেও এক টাকাও খরচ হয়নি। পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে অন্য স্থানে গ্যাসের সঙ্কট থাকলেও বিবিয়ানাতে গ্যাস দেয়া সম্ভব। এখানকার বিদ্যুত পরিবহনের জন্য পিজিসিবি গ্রিডলাইনও নির্মাণ করেছে। কিন্তু সব সুবিধা থাকার পরও বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজে কোন গতি নেই। শাহজিবাজারে ৩৫ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন হলেও কোন টাকা ছাড় হয়নি। এছাড়া বাঘাবাড়ী ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের অবস্থা একই পর্যায়ে রয়েছে। শাহজিবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে। সরকারী এসব প্রকল্পের কাজ থমকে থাকায় মন্ত্রণালয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বড়পুকুরিয়া একটি ২৭৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের এখনও কোন টাকা খরচ হয়নি বা বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য চুক্তিও করা সম্ভব হয়নি। তারপরও বলা হচ্ছে ২০ ভাগ কাজ এর মধ্যেই শেষ হয়েছে। যদিও বিগত সরকারের শুরুর দিকেই এই কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১১ কেভি সুইচিং স্টেশন নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু ঘোষণা দিয়েও তা করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সংস্থা। সিটি কর্পোরেশনগুলোর রাস্তা সৌর বিদ্যুত স্থাপন করা প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ২৬ ভাগ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র চার দশমিক ২৩ ভাগ কাজ করা সম্ভব হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হলে রাস্তায় বাতি জ্বালাতে আর গ্রিড থেকে বিদ্যুত নিতে হবে না।
×