ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওদের এক এ্যাডমিন গ্রেফতার হলেও কয়েক হাজার শিবির কর্মী এ্যাডমিন হয়ে কাজ করছে দেশের বিরুদ্ধে

বাঁশেরকেল্লার অবাধ অপপ্রচার রোধে কী করছে বিটিআরসি

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৪ মার্চ ২০১৫

বাঁশেরকেল্লার অবাধ অপপ্রচার রোধে কী করছে বিটিআরসি

ফিরোজ মান্না ॥ বাঁশের কেল্লার এক এডমিন গ্রেফতার হলেও কয়েক হাজার এডমিন দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিচ্ছে মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক চেতনার গুরুত্বপূর্ণ মানুষ জনকে। বাঁশের কেল্লা, বাঁশের কেল্লা ইউএসএ, ‘আওয়ামী ট্রাইব্যুনাল, বাকশাল নিপাত যাক, বাঁশের কেল্লা ইউকে, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, আই অ্যাম বাংলাদেশী, ডিজিটাল রূপে বাকশাল, বিএএন বাঁশখালী নিউজ-২৪, ইসলামী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, তরুণ প্রজন্ম, ভিশন ২০২১সহ ৬০টির বেশি ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে এসব অপপ্রচার ও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। বাঁশের কেল্লার নির্দেশে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, বাস-ট্রেনে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন কর্মসূচী চলছে। দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত করতে সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, বাঁশের কেল্লা নামের ফেসবুক পাতাটি ক্রমাগত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। দেশে-বিদেশে তাদের কয়েক হাজার এডমিন কাজ করছে দেশের বিরুদ্ধে। কয়েক হাজার শিবির কর্মী এডমিন হিসাবে বাঁশের কেল্লার বিভিন্ন পেইজে বা সাইটে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তাদের সঙ্গে পাকিস্তান, তুর্র্কি ও ইন্দোনেশিয়ার সাইবার আর্মি একযোগে কাজ করছে। লন্ডন থেকে জামায়াত শিবিরের যে ফ্যান পেজটি পরিচালিত হয় তার নাম ইউকে বাঁশের কেল্লা। এখানে জামায়াত শিবিরের ৫শ’ দেশী-বিদেশী তথ্য প্রযুক্তিবিদ কাজ করে যাচ্ছে। এখান থেকেই নির্দেশ আসে কোথায় কখন আঘাত হানতে হবে। সম্প্রতি এই পেজের মাধ্যমে ১০ স্থানে আঘাত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশে টানা হরতাল অবরোধের মধ্যে কোথায় কোন সময় পেট্রোলবোমা, ককটেল ও রেললাইন উপড়ে ফেলা হবে সেই নির্দেশও বাঁশের কেল্লার মাধ্যমে আসছে। জামায়াত শিবিরের বাঁশের কেল্লা (বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত) পেজটি বিটিআরসি একাধিকবার বন্ধ করে দেয়ার পরও কোন লাভ হয়নি। কারণ বন্ধ করার অল্প সময়ের মধ্যেই শিবিরের লোকজন আবার একই নামে একটি করে নতুন পাতা চালু করে ফেলছে। তারপর বাঁশের কেল্লার টুইটার এ্যাকাউন্ট থেকে নতুন পাতাটির লিংক ছড়িয়ে দিচ্ছে। সিএনএন-এর আইরিপোর্ট বিভাগের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কিভাবে ইসলামকে অপব্যবহার করে সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে। বাঁশের কেল্লায় পোস্টকৃত ছবিগুলো, পাতাটির টুইটার এ্যাকাউন্টেও পোস্ট করা হচ্ছে। প্রতিটি ছবির সঙ্গে তারা হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা লাইভ, আলজাজিরা স্ট্রিম ও ইউএনকে যোগ করে নিচ্ছে। এভাবেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের আবাসিক এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ বাঁশের কেল্লার এডমিন ফাহাদকে গ্রেফতার করেছে। ফাহাদের মতো কয়েক হাজার এডমিন দেশে-বিদেশে দেশ, প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, সাহ্যিতিক, সাংবাদিক, মুক্তমনা অসম্প্রদায়িক মানুষসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষদের হত্যার হুমকি এবং অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বাঁশের কেল্লা থেকে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে জামায়াতপন্থি বিভিন্ন জঙ্গী বক্তব্য তুলে ধরা হয়। ফাহাদ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রচার বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে বর্তমানে নিয়োজিত। সে আসল ও ছদ্ম নামে ৬০টির বেশি ফেসবুক আইডি ও ই-মেইল আইডি খুলে এসব অপপ্রচার এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। ‘বিপ্লব দহন’ ও ‘ট্রুথ ফাইটার’ ছদ্ম নামে অনলাইনে প্রচার চালিয়েছে সে। জামায়াতের বাঁশের কেল্লা বন্ধ হলেও অপপ্রচার থেমে নেই। সম্প্রতি বাঁশের কেল্লা বন্ধ হলেও নতুন করে নিউ বাঁশের কেল্লা নামে একটি সাইটে রাষ্ট্রবিরোধী কথা প্রকাশ করা হয়। এই ফেসবুকে ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি লাইক পড়েছে। জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ফেসবুক সাইট বাঁশের কেল্লা রাষ্ট্রবিরোধী সাইবার অপরাধের কারণে বিটিআরসি কয়েক দফা বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু একটা বন্ধ করলে ১০টা নতুন সাইট তারা তৈরি করে ফেলে। এ যেন এ্যামিবার বংশবিস্তারের মতো। জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে এখন ‘নিউ বাঁশের কেল্লা নাম দিয়ে খোলা হয়েছে আরও কয়েকটি সাইট। নিউ বাঁশের কেল্লা থেকে প্রতি মুহূর্তে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার চালানো হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, বাঁশের কেল্লা সাইট থেকে নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়টি নিয়ে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের সাইট কোথা থেকে পরিচালিত হচ্ছে এই বিষয়টি কোনভাবেই নিশ্চিত হতে পারছিল না। তাদের সাইট বেশিরভাগই দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। দেশে থেকে যেসব সাইট চালানো হচ্ছে তার খুব গোপনভাবে চালিয়ে যাচ্ছিল তারা। এবার ফাহাদ গ্রেফতার হওয়ার পর বাঁশের কেল্লার অনেক এডমিনকে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তারা। অন্যদিকে, বাঁশের কেল্লা ইউকে থেকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে জামায়াত-শিবির সমর্থকেরা সরকার বিরোধিতায় উস্কানিসহ চলমান পরিস্থিতিতে ‘রাজপথে নেমে আসতে’ দলের নেতাকর্মী ও অন্যদের উৎসাহ দিয়ে আসছে। সরকার বিরোধী বলে পরিচিত বাঁশের কেল্লা থেকে ও ফেসবুক পেজ থেকে রেললাইন তুলে ফেলাসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। তবে পাতাটির প্রশাসকরা বলে আসছিল যে, সরকার বিরোধী জনপ্রিয় পাতা বলেই তাদের এতো বিরোধিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। খুবই কম সময়ে সোয়া লাখের বেশি ভক্ত পাতাটি পছন্দ করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই পাতায় আড়াই গুণ ফেসবুকিয়ান নানা বিষয়বস্ত নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। বাঁশের কেল্লার নতুন পাতা বা সাইট খোলার সঙ্গে সঙ্গে পাতাটিতে ভক্তের সংখ্যা খুব দ্রুত গতিতেই বাড়তে থাকে। বাঁশের কেল্লা’র নির্দেশনায় জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা দেশব্যাপী রেললাইনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা উড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দিয়ে আসছে। বাঁশের কেল্লা’য় লেখা হয়, ‘সকল লঞ্চ টার্মিনাল ও বাস টার্মিনালকে বিকল করতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত করতে হবে। আদালতগুলোতে বোমা এবং যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা মেরে দেশে ত্রাস সৃষ্টি করতে হবে। তাদের ওই নির্দেশ অনুযায়ীই দেশে বর্তমানে সন্ত্রাস চলছে। ঢাকাকে সব জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে এসব নির্দেশ একের পর এক কার্যকর করা হচ্ছে। প্রতিটি থানা ঘেরাও করতে হবে। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে ধর্মের নামে পক্ষে আনতে হবে। দালাল মিডিয়াগুলোতে হামলা করতে হবে। পুলিশের গুলির দৃশ্য আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সব দূতাবাস ঘেরাও করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাঁশের কেল্লার এডমিনরা জানিয়েছে, বিটিআরসি আমাদের ওয়েবসাইট ও ওয়েব পেজ বার বার বন্ধ করেছে। আমরা বিটিআরসিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বার বারই বাঁশের কেল্লা চালু করেছি। কারণ বিটিআরসিতেও আমাদের লোকজন কাজ করছে। যদি বিটিআরসিতে আমাদের লোকজনগুলো চিহ্নিত হয়ে পড়ে এজন্য বিকল্প হিসাবে লন্ডনে ও আমেরিকা থেকেও আমাদের পেজে পোস্ট দেয়া হচ্ছে। এই দু’টি দেশ থেকে পরিচালিত পেজগুলো বন্ধ করতে হলে বাংলাদেশে পুরোপুরিভাবে ফেসবুক বন্ধ করে দিতে হবে। তখন বিকল্প হিসাবে আমরা টুইটারে পোস্ট দেব। তাছাড়া বাঁশের কেল্লা নামের আরও কয়েক শ’ পেজ খোলা হয়েছে। এ দু’টি পেজে ইংরেজীতে পোস্ট দেয়া হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে রয়েছে-পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও তুর্কি সাইবার আর্মি। এদিকে অভিযোগ উঠেছে বাঁশের কেল্লা বন্ধ না করতে পারলেও বিটিআরসি প্রগতিশীল মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষদের ব্লগ, ফ্যান পেইজ, টুইটারসহ অনেক কিছুই তারা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বাঁশের কেল্লা একচেটিয়া তাদের কাজ চালিয়ে গেলেও জবাব দেয়ার মতো কেউ থাকছে না। এটাকে প্রগতিশীলরা দ্বৈতনীতি হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তাহলে কি বিটিআরসি জামায়াত শিবিরকে তাদের বক্তব্য প্রচার করা সুযোগ করে দিচ্ছে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন প্রগতিশীল ব্লগাররা। অভিজিত হত্যার ঠিক কিছুক্ষণ পরেই অভিজিতের মুক্তমনা ব্লগটি বন্ধ করে দিয়েছিল বিটিআরসি। অথচ জঙ্গী ফারাবী ও রানার ব্লগগুলো ঠিকই উম্মুক্ত ছিল। বিটিআরসির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও করা হয়েছে। বিটিআরসির ভেতরে কি এমন কোন শক্তি রয়েছে যারা জামায়াত শিবিরের হয়ে কাজ করছে। তাই যদি হয় তাহলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা চরমভাবে হুমকির মধ্যে পড়বে বলে গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
×