ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার সঙ্গে কোন সংলাপ নয় ॥ আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৪ মার্চ ২০১৫

খালেদার সঙ্গে কোন সংলাপ নয় ॥  আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যকে ‘নির্লজ্জ মিথ্যাচার’ আখ্যা দিয়ে তাঁর ওই মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে সঙ্কট নিরসনে খালেদা জিয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে দলটি বলেছে, কার সঙ্গে সংলাপ? খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন, সন্ত্রাস-নাশকতা চালাচ্ছেন। তিনি খুনী ও সন্ত্রাসের নেতা। তাঁর সঙ্গে কোন সংলাপ হবে না। শুক্রবার সন্ধ্যায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। আজ শনিবার বেলা ১১টায় আবারও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে আওয়ামী লীগ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হানিফ স্পষ্টভাবে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ হবে? হরতাল-অবরোধের নামে পেট্রোলবোমা মেরে যে মানুষ হত্যা হয়েছে, তার দায় কী খালেদা জিয়া নিয়েছেন? তাহলে তাঁর সঙ্গে সংলাপ কীভাবে হবে? আর দেশে কোন রাজনৈতিক বা সাংবিধানিক সঙ্কট নেই। গ্রেফতারী পরোয়ানা সত্ত্বেও খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারে বিলম্ব সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বড় রাজনৈতিক দলের নেতা। এ কারণেই যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতেই হয়তো বা দেরি হচ্ছে। আমরাও চাই না যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তাঁকে গ্রেফতার করা হোক। সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ‘নির্লজ্জ মিথ্যাচার’ দাবি করে ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে হানিফ বলেন, আমি প্রথমেই গোটা দেশবাসীর সঙ্গে অবাক হলাম বেগম খালেদা জিয়া ৬৭ দিন কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকার পর আজ যে কথাগুলো বললেন। এগুলো নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না। তিনি ইতোপূর্বে জাতির সামনে বহুবার মিথ্যাচার করেছেন। আজকেও উনি প্রত্যেকটা কথার মিথ্যাচার করে নিজেকে আরেক বার জাতির সামনে মিথ্যাবাদী হিসেবে তুলে ধরলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া একজন খুনী, মানুষ হত্যাকারী। তার সঙ্গে কোন সংলাপ হবে না। খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী-জঙ্গীবাদী কর্মকা- ঘটাচ্ছেন। আইনগতভাবে এসব সন্ত্রাস মোকাবেলা করা হবে। ‘দেশে গণমাধ্যমেরও কোন স্বাধীনতা নেই’- খালেদা জিয়ার এমন অভিযোগের জবাবে হানিফ বলেন, তাঁর (খালেদা জিয়া) মতো একজন ফেরারি আসামি, সন্ত্রাসী ও খুনী প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন। এরপরও তিনি কীভাবে এমন কথা বলেন! জিয়াউর রহমানকে ‘মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক’ আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা হত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে জিয়াউর রহমান ইতোমধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের খলনায়কে পরিণত হয়েছেন। সরকার জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে খালেদা জিয়ার এমন দাবির সমালোচনা করে হানিফ বলেন, জনগণের ভোটাধিকার হননের জন্য কেউ যদি অভিযুক্ত হন তাহলে তা খালেদা জিয়া হবেন। তিনি ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বানচালের জন্য বহু চেষ্টা করেছেন ভোট দিতে আসা মানুষের ওপর হামলা করেছেন, পাঁচ শ’র অধিক ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দিয়েছেন। আর এই ভোটাধিকার হননের জন্য খালেদা জিয়াকে একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলেও জানান তিনি। এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কথা বলেছিলেন খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যকে কল্পিত বানোয়াট দাবি করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনি প্রমাণ করুন প্রধানমন্ত্রী কোথায় কখন এই কথা বলেছেন? অন্যথায় এই কল্পিত বানোয়াট মিথ্যাচার জনগণ সহজভাবে নেবে না। বিএনপি হত্যার রাজনীতি করে না খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান রাজনীতি শুরু করেন খুন ও হত্যার মাধ্যমে। এবং বিএনপির রাজনীতি হলো হত্যা খুনের রাজনীতি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নিজেও একাধিক খুন ও হত্যার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বলছেন, বিএনপি হত্যার রাজনীতি বিশ্বাস করে না। তাদের এই কথা শুনে বলতে হয় ভূতের মুখে রাম নাম। শেখ মুজিবুর রহমান ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য আন্দোলন করা হচ্ছে এমন বক্তব্য দিয়ে সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করছে খালেদা জিয়ার এই দাবি প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, খালেদা জিয়া ভুলে গেছেন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। আর সিলেটসহ বিভিন্ন জনসভায় খালেদা জিয়া নিজে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দাবি জানিয়েছে। তার এই মিথ্যাচার আমরা প্রত্যাখ্যান করি জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। হানিফ অভিযোগ করেন, সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়া অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহতদের বিষয়ে একটা কথাও বলেননি। কারণ তিনি জানেন তাঁরা এসব হত্যাকা- ঘটাচ্ছেন। তাই আন্দোলনের নামে এসব হত্যার দায় খালেদা জিয়াকে নিতে হবে। এই হত্যার দায় থেকে তাঁর রেহাই পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সহিংসতার দায় সরকারের ওপর চাপিয়ে বিএনপি এসব ঘটনা ধামাচাপা দিতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সহিংসতার ঘটনায় প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর হাতে ধরা পড়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই পরিচয় ছাত্রদল, যুবদলের কর্মী। জনগণ দূরের কথা বিএনপির কর্মীরাই আন্দোলনে মাঠে নামেনি দাবি করে তিনি আরও বলেন, জনগণ এই আন্দোলন প্রত্যাখ্যান করেছে। সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। জনগণ প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদের ওপর এই পেট্রোলবোমা হামলা চালানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। আমরা এব তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এসব নাশকতার জন্য খালেদা জিয়াকে একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ডাঃ দীপু মনি, আহমদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, ফরিদুন্নাহার লাইলী, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম আমিন, এস এম কামাল হোসেন, একেএম এনামুল হক শামিম প্রমুখ।
×