ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দায়িত্বজ্ঞানহীন তামিম দলকে ডোবাচ্ছেন!

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১৪ মার্চ ২০১৫

দায়িত্বজ্ঞানহীন তামিম দলকে ডোবাচ্ছেন!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘তামিমকে দল থেকে বাদ দেয়া উচিত। মাঠে তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হয় খেলার প্রতি সে সিরিয়াস না। প্রায় ম্যাচেই এমন দেখা যাচ্ছে। অন্য কাউকে তাঁর বদলে সুযোগ দিলে ভাল করবে মনে হয়।’ বিরক্তি ও ক্ষোভের সুরে কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্তঃপ্রাণ শাহরিয়ার শুভ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর মতো বাংলাদেশের অগণিত ক্রিকেটপ্রেমীর মনের কথা এটি। তাদের মতে, তামিম ইকবাল ধারাবাহিকভাবে যেভাবে দলকে ভোগাচ্ছে তাতে তাঁর সাজা হওয়া উচিত! পরিসংখ্যানে চোখ মেলালে দেখা যাবে, তামিমের আসলে কপাল ভাল! প্রায় ম্যাচেই দলকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েও বহাল তবিয়তে নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন চট্টগ্রামের এই তরুণ। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার তামিম। ওপেনিংয়ে তাঁর বিকল্পও খুব একটা নেই। চলমান বিশ্বকাপেও তামিমের ব্যাটিংয়ের দিকে চেয়ে আছে গোটা বাঙালী। কিন্তু এখন পর্যন্ত গ্রুপ পর্বে ৫ মার্চ স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৯৫ রান করা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কিছুই করতে পারেননি ২৫ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। গ্রুপ পর্বে বাংলাদশের শেষ দুই ম্যাচে তামিমের ব্যর্থতা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। ৯ মার্চ এ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন তিনি। মাত্র ২ রান করে সাজঘরে ফেরেন। এরপরও বোলারদের অসাধারণ সাফল্যে ইংলিশদের হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ম্যাচটির শেষ দিকে একপর্যায়ে সহজ একটি ক্যাচ ছাড়েন তামিম। তাঁর কপাল ভাল যে, শেষ পর্যন্ত টাইগাররা ম্যাচটি জিতে নেয়। তা না হলে নিশ্চিত করে ওই ক্যাচ ড্রপটাই ম্যাচ হারের বড় কারণ হয়ে থাকত। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের শেষ আটে খেলার স্বপ্নও পূরণ হতো না। এমন হয়ে থাকলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে নিশ্চিত করেই ‘ভিলেন’ হয়ে থাকতেন তামিম। শেষ দিকে রুবেল হোসেনের বিস্ফোরক বোলিংয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পান বাঁহাতি এই ওপেনার। শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ গ্রুপ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। এই ম্যাচেও তাঁর ব্যাট হাসেনি। আনলাকি ১৩ রানে দ্বিতীয় সিøপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। অনেকেই মনে করছেন, টানা ব্যর্থতার মধ্যে থাকলেও দলের সাফল্যের কারণে তামিম ‘ছাড়’ পাচ্ছেন। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ যদি বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনালের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াত সেক্ষেত্রে দায়ভারটা বেশি পড়ত তামিমের ওপরই। এমন না হওয়ার কারণেই হয়ত তাঁর ব্যর্থতা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের খেলাপাগল মানুষের চোখে ব্যর্থতা এড়াতে পারেননি তামিম। তাদের কাঠগড়ায় এখন বাংলাদেশ দলের সাবেক এই সহঅধিনায়ক। টাইগার ভক্ত মাহমুদা জান্নাতের ভাষায়, ‘তামিমের মনে হয় খুঁটির জোর আছে। তা না হলে এমন নির্লজ্জ ব্যর্থতার পরও সে কিভাবে সুযোগ পায়। মাঠে তার দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখে অবাক হতে হয়। মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, রুবেলরা ভাল না করলে তো বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালেই যেতে পারত না। আমরা ভাগ্যবান যে, তামিমের ব্যর্থতার জন্য খুব একটা খেসারত দিতে হয়নি।’ ভক্তদের এমন বলাটা বাড়াবাড়ি নয়। মাঠে তামিমের শারীরিক ভঙ্গিও বিভিন্ন প্রশ্নের অবতারণা করছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তামিম যে ক্যাচটি ছাড়েন তার ঠিক আগ মুহূর্তে তাঁকে মাথায় হাত দিয়ে অন্যমনস্ক থাকতে দেখা যায়। যে কারণে ক্যাচটি ধরতে ব্যর্থ হন। নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড ছাড়াও শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও ব্যর্থ হন তামিম। লঙ্কানদের বিরুদ্ধে শূন্য রানে বিদায় নেন। আর আফগানদের বিরুদ্ধে করেন মাত্র ১৯ রান। তবে এটা ঠিক যে, ইনিংসের শুরুতে চট্টগ্রামের এই তরুণের ব্যাট হাসলে টাইগারদের জয়ের ভিত্তিটা মজবুত হয়। অনেকবারই এমন দৃশ্য দেখা গেছে। যার বড় দৃষ্টান্ত ২০১২ সালের এশিয়া কাপ। এশিয়ান ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের ওই আসরে টানা চার ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন তামিম। রানার্সআপ হয়ে বাংলাদেশও পেয়েছিল স্বর্ণালী সাফল্য। কিন্তু এর পরের সময়ে তেমন ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি ২০ মার্চ ২৬ বছরে পদার্পণ করতে যাওয়া তামিম। অবশ্য ঘাতক ইনজুরিও ভুগিয়েছে তাঁকে। টানা ব্যর্থতার মধ্যে থাকলেও বাংলাদেশী ভক্তরা আশা করছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠবে তামিমের ব্যাট। দেখা যাক, ব্যর্থতার বৃত্ত তিনি ভাঙতে পারেন কিনা।
×