ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শেষ গ্রুপ ম্যাচে লড়াই করে টাইগারদের ৩ উইকেটে পরাজয়, বিফলে গেল মাহমুদুল্লাহর শতক ও সাকিবের ৪ উইকেট, গ্রুপের চতুর্থ হিসেবেই শেষ আটে বাংলাদেশ, বৃহস্পতিবার প্রতিপক্ষ ভারত

অবশেষে বাংলাদেশকে হারাল নিউজিল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৪ মার্চ ২০১৫

অবশেষে বাংলাদেশকে হারাল নিউজিল্যান্ড

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিউজিল্যান্ডের কাছে হারতে ভুলে গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দীর্ঘ সাড়ে চার বছরে নিজেদের চেয়ে শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকা কিউইদেরই শুধু বার বার হারিয়েছে টাইগাররা। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে আগেভাগেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করায় এবারও স্বপ্ন ছিল কিউইদের হারিয়ে দেবে বাংলাদেশ। কিন্তু হলো না, নিজেদের মাঠে বাংলাদেশকে পেয়ে আক্ষেপটা মেটাল নিউজিল্যান্ড। শুক্রবার হ্যামিলটনের সেডন পার্কে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। অবশেষে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয়ের দেখা পেল নিউজিল্যান্ড। ২০১০ সালের পর থেকে আর কখনও টাইগারদের ওয়ানডেতে হারাতে পারেনি কিউইরা। উল্টো হেরে গিয়েছিল টানা ৭ ম্যাচ। টস হেরে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের টানা দ্বিতীয় শতকে ভর দিয়ে ৭ উইকেটে ২৮৮ রানের বড় সংগ্রহ গড়েছিল বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারসেরা ১২৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। বরাবরের মতো এবারও কিউইদের পেয়ে জ্বলে উঠেছিলেন আবার নেতৃত্ব পাওয়া সাকিব আল হাসান। চার উইকেট শিকার করে শেষ সময় পর্যন্ত সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছিলেন জয়ের। তবে মার্টিন গাপটিলের ১০৫ ও রস টেইলের ৫৬ রানে ৭ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেট হারিয়ে ২৯০ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। হ্যামিলটনে ‘এ’ গ্রুপে আগের ৫ ম্যাচ দুর্দান্তভাবে জেতার পরও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে কঠিন প্রতিপক্ষই বিবেচিত করা হচ্ছিল। তবে দেশের মাটিতে টাইগারদের কাছে কখনও না হারার রেকর্ডটাই অটুট রাখল তারা। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ গড়েও হারল বাংলাদেশ। ৬ ম্যাচেই জিতে ১২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ আটে উঠেছে নিউজিল্যান্ড। আর সমান ম্যাচে ৩ জয়, ২ পরাজয় ও পরিত্যক্ত এক ম্যাচ থেকে মোট ৭ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ হয়েছে চতুর্থ। শেষ আটে আগামী বৃহস্পতিবার মেলবোর্নে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ভারত অপরাজিত থেকে ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে কোয়ার্টারে উঠেছে। সেডন পার্কে আগের দিন ছিল বৃষ্টির দাপট। ম্যাচের আগের রাতেও বৃষ্টি হয়েছে। তাই উইকেটের আর্দ্রতা আর সিক্ত আবহাওয়া কাজে লাগানোর চিন্তা ছিল দুই অধিনায়কেরই। টস জিতলেই ফিল্ডিং এবং নিজেদের পেস আক্রমণ দিয়ে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরো। ইংলিশদের আগের ম্যাচে শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াইয়ে হারিয়ে শেষ আট নিশ্চিত করা বাংলাদেশকে নিয়ে সবারই আগ্রহ-উদ্দীপনা ছিল। তাই সকালের ভেজা আবহাওয়া, আর্দ্র পরিবেশ পেছনে ফেলে ঠিকই মাঠে এসেছিলেন অনেক দর্শক। এদিন বাংলাদেশ নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে বিশ্রাম দিয়ে স্পিনার তাইজুল ইসলামকে একাদশে নেয়। আরাফাত সানির জায়গায় আসেন নাসির হোসেন। ব্যাটিং বিভাগ শক্তিশালী করে একাদশ গড়াটা বেশ কার্যকর হয়েছে তা বোঝা গেছে ম্যাচ শুরুর পরই। উইকেটের সুবিধা নিয়ে টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের শুরু থেকেই চেপে ধরে অগ্নিঝরা বোলিং করেন টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্ট। ব্যাটে ঠিকভাবে বল আসছিল না এবং দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসও অস্বস্তিতে ছিলেন। তবে মাটি কামড়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত মাথা গরম করে স্টাম্পের ওপরে থাকা বলকে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ইমরুল (২)। প্রথম ৭ ওভারে মাত্র ৮ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। আর এখানেই বাংলাদেশ ইনিংসের সর্বশেষ সংগ্রহটা কম পড়ে গেছে যা পরাজয়ের পেছনে বড় একটি কারণ হিসেবে কাজ করেছে। তবে এরপর সৌম্য সরকার এসে উইকেটের চারদিকে পেটাতে থাকেন। যদিও তামিম মাথা ঠা-া রেখেছিলেন, কিন্তু বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি (১৩)। দুই ওপেনার ফিরে গেলেও তৃতীয় উইকেটে ৯০ রানের জুটি গড়েন সৌম্য ও দারুণ ধারাবাহিক মাহমুদুল্লাহ। তবে মাহমুদুল্লাহকে ব্যক্তিগত ১ রানেই সাউদির বলে সিøপে ওঠা ক্যাচটা ছেড়ে জীবন দিয়েছেন কোরি এ্যান্ডারসন। এরপর আর এ জুটিকে থামানো যায়নি। বাধ্যতামূলক পাওয়ার প্লে (১০ ওভার) থেকে ২ উইকেটে ২৯ রান তুললেও এ দু’জনের আক্রমণাত্মক মেজাজে চাপ কেটে যায়। ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক পান সৌম্য। ৫৮ বলে ৭ চারে ৫১ করেই ফিরে যান তিনি। এরপর সাকিব-মুশফিকরাও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তবে দু’জনের সঙ্গেই ছোটখাটো জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতকটা পেয়ে যান টানা দ্বিতীয় ম্যাচে। শতক পাওয়ার পর তা-ব চালানো শুরু করেন তিনি ও সাব্বির রহমান। শেষ ১০ ওভারে যোগ হয় ১০০ রান। ৭ উইকেটে ২৮৮ রানের বড় সংগ্রহ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। কিউইরা বরাবরই বাংলাদেশী স্পিনারদের কাছে মাথানত করেছে। আর সাকিবের রেকর্ডটাও ভাল কিউইদের বিরুদ্ধে। সে কারণে গোড়াতেই ম্যাককুলামের ঝড় ঠেকাতে তিনি নিজে এবং তাইজুল আক্রমণে আসেন। দুই প্রান্ত থেকেই নতুন বলে দুই স্পিনার বেশ কার্যকর ভূমিকাই রেখেছে। বিশেষ করে সাকিব। দলীয় ৩৩ রানের মধ্যেই তিনি ম্যাককুলাম ও কেন উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। তবে এরপর ১৩১ রানের জুটি গড়ে চাপ কাটিয়ে ফেলেন গাপটিল ও টেইলর। বিশ্বকাপে প্রথম এবং ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ শতক হাঁকিয়ে ১০০ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১০৫ রান করে সাকিবের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন। আর টেইলর খুব ধীর গতিতে খেলে ৯৭ বলে ৫ চারে ৫৬ রান করে নাসিরের বলে আউট হন। তখনও জিততে ৪৮ বলে ৬৬ রান প্রয়োজন ছিল নিউজিল্যান্ডের। তবে গ্র্যান্ট ইলিয়ট ও এ্যান্ডারসন ঝড়ো দুটি ইনিংস খেলে জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। রুবেল হোসেন ও নাসির এ দু’জনকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেন। ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই এ্যান্ডারসনকে আউট হয়ে গেলে ম্যাচে টানটান উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তবে মাত্র ৯ বলেই ২১ রান তুলে নিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্ন ধূলিসাত করে দেন ড্যানিয়েল ভেট্টরি ও সাউদি। রুবেল আগের ম্যাচে ভয়ানক এক ওভার বোলিং করে ধসিয়ে দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডকে। সে কারণে শেষ ওভারের অপেক্ষায় না থেকে সাকিবের ওপর চড়াও হয়ে সাউদি ১১ রান তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন কিউইদের।
×