ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুই বছরেই বর্জ্যরে পরিমাণ বেড়ে এক কোটি টনের ওপরে

যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ই-বর্জ্য ॥ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১৪ মার্চ ২০১৫

যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ই-বর্জ্য ॥ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি

মশিউর রহমান খান ॥ দেশে ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ই-বর্জ্য। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এসব ই-বর্জ্যরে পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণ। জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ তথা পরিবর্তন আনতে সেলফোন, কম্পিউটার, টিভি, ফ্রিজসহ প্রয়োজনীয় অনেক ধরনের যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ব্যবহারের পর নষ্ট হয়ে যাওয়া এসব পণ্য ও পণ্যের যন্ত্রপাতি ফেলে দেয়া হচ্ছে যেখানেসেখানে, যা প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ই-বর্জ্যরে পরিমাণ। কিন্তু আজ পর্যন্ত ই-বর্জ্য সংক্রান্ত কোন নীতিমালা তৈরি করতে পারেনি সরকার। অতি শখের ই-পণ্যটি কেনার আগে বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানসমূহ পণ্যটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তা কোথায় ও কিভাবে রিসাইকেল বা ডিসপোজাল করতে হবে সে সম্পর্কে কোন প্রকার ধারণাই প্রদান করে না। বাজার সম্প্রসারণে মনোযোগী হলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোন উদ্যোগ নেই উৎপাদন ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর। ফলে ক্রেতা পণ্যটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা যত্রতত্র ফেলে রাখেন। এর ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। প্রতিনিয়ত এ বর্জ্য আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেলেও সরকার বা পণ্য ব্যবহারকারীর এ নিয়ে কারও যেন কোন মাথাব্যথা নেই। এসব বর্জ্য থেকে সীসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়ামসহ বিভিন্ন ভারি ধাতু পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, যা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষ এসব ভারি ধাতুর সংস্পর্শে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুরোগ এমনকি ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়। প্রকৃতপক্ষে ই-বর্জ্যরে স্বাস্থ্যঝুঁকি বা ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানে না অধিকাংশ মানুষ। ৮৩ শতাংশ বাড়ির লোকজন জানায়, ই-বর্জ্যে কোন সমস্যা নেই। এছাড়া ৫ শতাংশ মাথাব্যথা ও ৫ শতাংশ চামড়ার সমস্যার কথা জানিয়েছে। ৪ শতাংশ জানিয়েছে চোখের সমস্যার কথা। আর ৩ শতাংশের কোন ধারণা নেই ই-বর্জ্যরে ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে। গবেষণার জরিপে অংশ নেয়া ৮১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তারা ই-বর্জ্যে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় না। ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে পরিবেশ ও অন্যান্য সমস্যার কথা। আর কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা, তা জানা নেই ১২ শতাংশের। পরিবেশবিষয়ক বেসরকারী সংস্থা এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) করা ২০১৫ সালের ম্যাগনিটিউড অব দ্য ফ্লো অব ই-ওয়েস্ট ইন বাংলাদেশ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১১-১২ সালে দেশে ই-বর্জ্যরে পরিমাণ ছিল ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৪০০ টন। গত ২ বছরের ব্যবধানে ২০১৩-১৪ তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১ লাখ ৫ হাজার ৫৭০ টনে। অর্থাৎ ২ বছরেই দেশে ই-বর্জ্যরে পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। জানা গেছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিপজ্জনক বর্জ্য ও জাহাজ ভাঙ্গা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১১ ও চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াকরণ) বিধিমালা-২০০৮ প্রণয়ন করেছে পরিবেশ অধিদফতর। সিএফএল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নীতিমালায় পরিবেশ অধিদফতর মতামত দেয়ার পর বিদ্যুত বিভাগে খসড়াটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এর পরও কমছে না বর্জ্যরে পরিমাণ। যেখানে সেখানেই ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন ই-বর্জ্য, এমন তথ্য পাওয়া গেল নতুন এ গবেষণায়। নষ্ট হওয়ার পর এসব পণ্য ফেরত নেয়ার ব্যবস্থাও রাখছে না কোন বাণিজ্যিক কোম্পানি। জানা গেছে, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করতে ২০১২ সাল থেকে কাজ করছে পরিবেশ অধিদফতর। ঐ বছর এটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংশোধনের জন্য তা আবার ফেরত আসে; যা এখনও কার্যকর করতে পারেনি সরকার। উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুরনো ব্যবহৃত ও নষ্ট হয়ে যাওয়া পণ্য উৎপাদনকারী বা পরিবেশকরা ফেরত নেন। এক্ষেত্রে যে গ্রাহক নষ্ট ই-পণ্য ফেরত দেন, তাকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। অন্যথায় পরবর্তীতে ওই কোম্পানির কোন পণ্য ক্রয় করার সময় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে ডিসকাউন্ট পায়। বাংলাদেশে কোন নীতিমালা ছাড়াই এ ধরনের পণ্য ক্রয়ের পর ডিসকাউন্টের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে ব্যবহারকারীরাও ব্যবহারের পর ই-পণ্য যেখানে সেখানে ফেলে দিচ্ছেন।
×