ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

জয় অপহরণ চক্রান্তের দায় খালেদা-তারেক এড়াতে পারে না

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১৪ মার্চ ২০১৫

জয় অপহরণ চক্রান্তের দায়  খালেদা-তারেক এড়াতে পারে না

সজীব ওয়াজেদ জয়। আমেরিকার হার্ভার্ডসহ বিশ্বখ্যাত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রীধারী আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইটি উপদেষ্টা এবং মায়ের সঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার, নির্মাতা। এই তরুণ বয়সেই দেশের জন্য এ্যাডভান্স প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নের ক্ষেত্রে লিডারশিপ দিয়ে চলেছেন। বেগম খালেদা জিয়া দেশের গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে হেরে গিয়ে লন্ডনপ্রবাসী দুর্নীতিবাজ ছেলে তারেকসহ মিলে অন্যরকম এক ভয়ঙ্কর চক্রান্তে লিপ্ত। চক্রান্তের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সজীব ওয়াজেদ জয়কে সপরিবারে অপহরণ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টাকার বিনিময়ে লোক ভাড়া করা হয়। আর এ কাজটি করে যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের ফেয়ারফিল্ডে বসবাসকারী বিএনপির কালচারাল অর্গানাইজেশন (অঙ্গ) জাসাসের সহ-সভাপতি মুহম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সীজার (৩৬)। সে জোহানেস থালের নামে এক আমেরিকানের মাধ্যমে সেদেশের ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাসটিককে অর্ধমিলিয়ন বা পাঁচ লাখ ডলার ঘুষ দেয় এ জন্য যে, প্রথমত সজীব ওয়াজেদ জয়কে সপরিবারে অপহরণ করে তাদের ‘ক্ষতিসাধন’ করা এবং দ্বিতীয়ত খালেদাপুত্র তারেক ও কোকোর দুর্নীতির যত তথ্য (অল ক্রিমিনাল রেকর্ডস) আছে সব সরিয়ে ধ্বংস করে ফেলা। আল্লাহর অশেষ কৃপায় যথাসময়ে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তা ধরে ফেলে এবং চক্রান্তকারীদের ফেডারেল কোর্টে সোপর্দ করে। মামলা দিলে কোর্ট রিজভী আহমদকে সাড়ে তিন বছর বা ৪২ মাস কারাদণ্ড এবং রিজভীর সহযোগী জোহানেস থালেরকে আড়াই বছর বা ৩০ মাস কারাদণ্ড প্রদান করে। অপর অপরাধী মার্কিন ঝানুু এন্টি টেরোরিজম এফবিআই স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাসটিকের অপরাধের রায়ও অবিলম্বেই হবে। সাজাপ্রাপ্ত জাসাস নেতার পুত্র রিজভী আহমদ জানিয়েছে, বিএনপির ‘হাইকমান্ডের’ নির্দেশে সে এ কাজ করেছে। একজন অতিসাধারণ নাগরিকও জানেন এবং বোঝেন এই ‘হাইকমান্ড’ হলো খালেদা জিয়া ও তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র গ্রেফতারি পরোয়ানা ঘাড়ে নিয়ে লন্ডনে পলাতক, সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী তারেক রহমান। খালেদা যেমন নিষ্ঠুর তেমনি তাঁর ছেলেও ভয়ঙ্কর। এদের অবস্থান রাজনীতিতে হওয়া উচিত নয়। বিস্তারিত আলোচনার আগে জানা দরকার সজীব ওয়াজেদ জয় কে এবং কিভাবে আজকের পর্যায়ে এসেছেন। জয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাঙালী জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের দৌহিত্র এবং প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ আলী মিয়া ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পুত্র। জয়ের জন্ম মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে বন্দী অবস্থায়। ধানম-ির (সম্ভবত) ১৮ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে বেগম মুজিব জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা (সন্তানসম্ভবা) ও কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলসহ (৫) বন্দী হন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। এ অবস্থায়ও বেগম মুজিব দুই পুত্র শেখ কামাল ও শেখ জামালকে ভারতে পাঠিয়ে দেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে। বন্দী অবস্থায়ও মুক্তিযুদ্ধের খোঁজখবর নেন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে অবদান রাখেন। একদিকে দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ, অপরদিকে প্রসব বেদনায় কাতর শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী চোখের জল মুছতে মুছতে পার্লামেন্টে বলেছেন, ওই অবস্থায়ও ‘প্রহরীরা বেগম মুজিবকে কন্যার সঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে দেয়নি।’ আজকের মতো এ্যাম্বুলেন্স বা সেলফোনও তখন ছিল না যে, ফোন করে এ্যাম্বুলেন্স আনা যেত। এভাবে জয়ের জন্ম। তারপর সাড়ে তিন বছর মা-বাবা, নানা-নানি, দাদা-দাদির স্নেহ পেয়েছেন। তারপরই আসে সেই ভয়াল কালরাত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এক রাতে সবাইকে হত্যা করা হলো। ওই সময়টাতে মা ও একমাত্র ছোট বোন সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল এবং খালা শেখ রেহানাসহ পিতার গবেষণাস্থল জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান। তারপর ভারতের দিল্লীতে নির্বাসিত জীবন ৬ বছর। এরপর দুই ভাই-বোনের একা পথচলা, ভারত, লন্ডন ও আমেরিকায় লেখাপড়া। প্রথমে ভারতের নৈনিতাল, কোদাইকেনেল ও বেঙ্গালোর সেন্ট জোসেপ কলেজে এবং এরপর আমেরিকার হার্ভার্ডসহ বিভিন্ন খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়। আজ জয়ের মতো সায়েমা ওয়াজেদ পুতুলও আমেরিকার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেকর্ডসহ সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে অটিজমের ওপর কাজ করে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে চলেছেন। এই জয়কেই সপরিবারে অপহরণ এবং ‘ক্ষতিসাধন’ (এর অর্থ বোঝার জন্য ডিকশনারির দরকার পড়ে না) করার জন্য আমেরিকায় ডলার খরচ করে সন্ত্রাসী ভাড়া করা হয়েছিল খালেদা-তারেকের নির্দেশে। গত ৮ মার্চ জাতীয় সংসদে তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মঈনুদ্দিন খান বাদল, তারানা হালিম প্রমুখ যখন এর ওপর আলোচনা করছিলেন তখন শেখ হাসিনা বার বার চোখ মুছছিলেন, আবার চোখ বন্ধ করে দোয়া-দরুদ পড়ছিলেন। বাংলাদেশের প্রতিটি নারী, আপনারা নিজেকে মা শেখ হাসিনার আসনে বসিয়ে এবং জয়-পুতুলকে সন্তানের আসনে বসিয়ে একবার ভাবুন, দেখবেন কী যন্ত্রণা বুকে চেপে শেখ হাসিনা বাংলার ১৬ কোটি মানুষই কেবল নয়, বিশ্বের নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করে চলেছেন। এ পর্যন্ত ১৯ বার তাঁকে হত্যার জন্য গুলি, বোমা, গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে। তারেকের হাওয়া ভবনে গ্রেনেড হামলার চক্রান্ত হয়। আল্লাহ পাকের অশেষ কৃপায় তিনি আজও সেবা করে চলেছেন। এখন তো লড়াই করতে হচ্ছে পবিত্র ইসলামের নামে আন্তর্জাতিক টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেট, বোকো হারাম, মুসলিম ব্রাদারহুড, তালেবানদের বাংলাদেশী এজেন্ট বিএনপি, জামায়াত, শিবির, হুজি, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, হিযবুত তাহরীর প্রভৃতি সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে। কেউ কেউ মনে করেন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাসাস সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। হ্যাঁ, সন্ত্রাসী সংগঠন ছিল না। সে ওয়ান্স্ আপন এ টাইম। যেদিন থেকে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকার খালেদা এবং তাঁর দুই ছেলেকে গ্রেফতার করল এবং পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতাবিরোধীদের বিচার শুরু করলেন, সেদিন থেকে বিএনপি আর নিয়মতান্ত্রিক সংগঠন রইল না। খালেদা জিয়া জামায়াত-শিবির ও তাদের সন্ত্রাসী জঙ্গী সহযোগীদের কাছে ১০০ ভাগ আত্মসমর্পণ করলেন। অবশ্য বিএনপি প্রথম থেকেই পাকিস্তানের আইএসআইয়ের এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে রাজনীতি করছে। তারা বিদেশে যত অর্থ পাচার করেছিল তার মধ্যে ২১ কোটি টাকা কানাডার আদালতের বিচারের রায় নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেশে ফেরত এনেছে। শোনা গেছে তারেক নাকি দুবাইভিত্তিক আন্তর্জাতিক মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। কত অর্থ তারা বিদেশে পাচার করেছিল যে, তারেক ব্যয়বহুল লন্ডন শহরের এক অভিজাত এলাকায় বসবাস করছে। আরাফাত রহমান কোকো মারা গেছে। তার স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে মালয়েশিয়ায় বসবাস করছে। খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেকের নিষ্ঠুরতা এসেছে তাদের পারিবারিক কালচার এবং শিক্ষার অভাব থেকে। একজন মানুষ যখন অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক এবং সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মালিক হন, তখন সুশিক্ষাই তাঁকে সংবেদনশীল সঠিক পথে চলতে সাহায্য করে। যার শিক্ষার অভাব থাকে, পারিবারিক ঐতিহ্য থাকে না, সে সবকিছু করতে পারে। বোমা-পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে। সে মানুষ খুন, বাস-ট্রেন-টেম্পোর যাত্রীই হোক না কেন, চালক হোক না কেন, কর্মক্ষেত্রে গমনকারী শ্রমজীবী-কর্মজীবীই হোক না কেন, পুরো ২০১৪-এর নির্বাচনের পূর্বে বা ওই নির্বাচনের এক বছর পূর্তি ৫ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে একই চিত্র দেখা গেছে। এজন্য খালেদার কোন আফসোস নেই, অপরাধবোধ নেই। অশিক্ষিত-অল্পশিক্ষিত মানুষই কেবল পারে ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ সাড়ে ৪ কোটি ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করতে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীরা বাংলাদেশে মাটি চেয়েছে, মানুষ চায়নি। খালেদা চাচ্ছে আওয়ামী লীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে শক্তিবিহীন পাকিস্তানী প্রেতাত্মার বাংলাদেশ। এটা করতে গিয়ে তিনি সাধারণ গরিব খেটে খাওয়া মানুষ মারছেন। কত নিষ্ঠুর হলে এ কাজ করা যায় খালেদা তার প্রমাণ। শোনা যায় লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানকে ঘিরে আছে একাত্তরের রাজাকার-আলবদর-আলশামস (পলাতক) এবং তাদের ছাওয়ালরা। তারাই তারেককে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হল ভাড়া করে বলার ব্যবস্থা করে দেয়। অবাক হই এবং নিজেকে বড় ছোট মনে হয় যখন দেখি বাংলাদেশের মিডিয়া-প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক (দু-একটা বাদে) তারেক লন্ডনে হাঁচি দিলেও গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে। অথচ ভবিষ্যত যোগ্য নেতৃত্বদানকারী জয়ের অপহরণ ও হত্যা প্রচেষ্টার খবর কোথাও গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়নি। অথচ এটি আমেরিকার ফেডারেল কোর্টের জাজমেন্ট। বিশেষ করে দুটি বড় কাগজ নীরব ভূমিকা পালন করেছে। ট্যাবলয়েট কাগজও। কয়েকদিন আগে ইংরেজী ডেইলি স্টার যখন নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর একটি পোস্টার ছাপে (পত্রিকার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ) তিন-এর পাতার টপে, যাতে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা গ্রহণের আহ্বান ছিল। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বক্তব্য দানকালে এ ব্যাপারে ওই পত্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। দেখা গেল একদিন পরই স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম একখান মন্তব্য প্রতিবেদন (কমেন্টারি) প্রথম পাতায় ছেপে কেবল প্রধানমন্ত্রী নয়, গোটা জাতিকেই সাংবাদিকতার ইথিক্স, নীতি-নৈতিকতার সবক দিলেন। অথচ জয় কিডন্যাপ চক্রান্তের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করলেন। এমনকি কলামিস্ট সোহরাব হাসানÑ হেন সাবজেক্ট নেই যে, লেখেন না। তিনিও কোন মন্তব্য করলেন না। কেবল দৈনিক জনকণ্ঠ প্রথম পাতায় গুরুত্ব দিয়ে ছেপে মিডিয়ার ইজ্জত রক্ষা করেছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মধ্যে দু-একটা চ্যানেলে স্ক্রলে কিংবা টকশোতে কেউ কেউ বিষয়টি উত্থাপন করলেও গুরুত্ব পায়নি। গয়রহভাবে দায়সারা হয়েছে। পত্রিকায় লেখার কারণে বেশকিছু সুশীল বাটপাড়কে টকশোতেও অনুপস্থিত দেখা যাচ্ছে। তবে এখনও কিছু আছে- যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শহীদুজ্জামান (শরীফুজ্জামানও হতে পারে) নামে এক শিক্ষককে ইদানীং টকশোতে খুব দেখা যাচ্ছে। ড. ফেরদৌস হোসেনকেও। এদের মুখেও আসিফ নজরুলদের মতো একই কথা- পেট্রোলবোমা, ককটেল মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারা এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম নয়, বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন। কখনও বলেন এসব বিএনপি করছে না। সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হন পুলিশের গুলিতে কোন সন্ত্রাসী হতাহত হলে। কারণ তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। প্রশ্ন করিÑ এই যে সাধারণ নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত অরাজনৈতিক মানুষগুলোকে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে, দেড় বছরের শিশু, ১৩-১৪ বছরের কিশোরী মাইশাদের যখন আগুনে পুড়িয়ে অঙ্গার করা হলো, তাদের কি মানবাধিকার নেই? যে শতাধিক মানুষ বিগত দুই মাসাধিককালে জ্বলে-পুড়ে অঙ্গার হলো, যে শত শত মানুষ (অধিকাংশই সাধারণ খেটে খাওয়া গরিব) বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন, তাঁরা কি আল্লাহর বান্দা নন? বুধবার রাতে আরটিভিতে টকশো দেখছিলাম। তাতে এককালের ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা কে এম ওবায়দুর রহমানের কন্যা শ্যামা ওবায়েদ বলছিলেন, তাঁর বাবা নাকি গণতন্ত্রের সংগ্রাম করার জন্য আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে গিয়েছিলেন। শ্যামা মেয়েকে একটা ইনফরমেশন দিতে চাই, ওবায়দুর রহমান-শাহ মোয়াজ্জেমরা খুনী খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে চক্রান্তে লিপ্ত ছিলেন বলেই একসঙ্গেই আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেছিলেন এবং পরবর্তীতে একই সুবাদে বিএনপিতে যোগ দেন। ওই টকশোতেও একই কথাÑ ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি জনসভা করতে দিলে হরতাল-অবরোধ হতো না। ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এবং তখন সরকার থেকে বলা হয়েছিল ওটা নিয়মরক্ষার নির্বাচন। প্রথম কথা হলো বিএনপিকে নির্বাচন করতে কেউ বাধা দেয়নি। খালেদা যখন দলের সভাপতি হন তখনও তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই হন। প্রধানমন্ত্রী নিয়মরক্ষার নির্বাচন বলায় আজ তারা ইনক্লুসিভ নির্বাচন চাচ্ছে। কিন্তু সেদিন তো বিএনপিও নির্বাচন করেছে, প্রতিরোধ নাম দিয়ে ৫৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ভোটকেন্দ্র) পোড়ানো হয়, প্রিসাইডিং অফিসারকে হত্যা করা হয়, তারপরও জনগণ তাদের নির্বাচন প্রতিরোধ করতে দেয়নি। অর্থাৎ খালেদা প্রতিরোধের নামে সন্ত্রাস করেও ২০১৪’র নির্বাচনে হেরে গেছেন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছেন নিয়মরক্ষার নির্বাচন, এখন সেই নিয়মই রক্ষা করা হচ্ছে। ঢাকা, ১৩ মার্চ ২০১৫ লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
×