ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকারী জমিতে মার্কেট নির্মাণ

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৩ মার্চ ২০১৫

সরকারী জমিতে মার্কেট নির্মাণ

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ সরকারী খাদ্য গুদামের জায়গা দখল করে মাকের্ট নির্মাণ করেছেন নব্য আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন করীর। যখন যে সরকার, তখন সেই সরকারের ক্যাডার বনে গিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন এক সময়ের শিবিরের চিহ্নিত ক্যাডার হুমায়ুন কবীর। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মানিকখালী গ্রামের হাজী আবুল হোসেন গাজীর ছেলে হুমায়ুন কবীরের বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসী। তবে রমজান নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য হুমায়ুন কবীর তার বিরুদ্ধে সরকারী জমি দখল করার অভিযোগ অস্বীকার করে বৃহস্পতিবার তিনি জানান, তিনি সাতক্ষীরার আগড়দাড়ি আলিয়া মাদ্রাসায় ছাত্র হলেও কখনো শিবির করেননি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ঘের দখলের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এলাকায় টিকে থাকা যায় না। প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। তার এসব অন্যায় কাজের সহযোগিতায় করেন ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের নেতারা। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গেই তিনিও দলবদল করেন। এলাকাবাসী জানান, এলাকার সমাজ বিরোধীদের নিয়ে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে হুমায়ুন। তার দাপটে অতিষ্ঠ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। বারবার রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন করা বাহিনীপ্রধান হুমায়ুনের উত্থান শিবিরের হাত ধরে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। ফয়সলাবাদ মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ও সাতক্ষীরার জামায়াত নিয়ন্ত্রিত আগরদাড়ী মাদ্রাসায় পড়াকালীন ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। হিলফুল ফুজুল কমিটি সদস্য হিসেবে যোগ দিয়ে পরবর্তীতে তিনি শিবিরের মাদ্রাসা ও ইউনিয়ন শাখার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে বলে প্রচার রয়েছে। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত নেতা গাজী নজরুল ইসলাম শ্যামনগরের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ সদস্যের নিকটজন বনে যান হুমায়ুন। ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি নেতা গোলাম রেজা সাংসদ নির্বাচিত হলে হুমায়ুন রাতারাতি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পান রমজাননগর ইউনিয়নে বিভিন্ন প্রকল্প তদারকির কাজ। সম্প্রতি হুমায়ুন কবীর হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে স্থানীয় ভেটখালী সরকারী খাদ্যগুদামের জায়গা দখল করে নির্মাণ করেছেন মাকের্ট। অভিযোগ, মাকের্টের একটি দোকান দেয়ার শর্তে তাকে জায়গা দখলে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় রমজাননগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা। তবে হুমায়ুন কবীরের দাবি তার নির্মিত মার্কেট সরকারী গুদামের বাইরে। ভেটখালী খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর-ই-আলম জানান, সম্পূর্ণ ভুয়া কাগজ তৈরি করে হুমায়ুন কবীর গত বছর ওই সম্পত্তিতে কাটাতাঁরের বেড়া নির্মাণ করেন। উর্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশে গত বছর তার বিরুদ্ধে দখল সরিয়ে নিতে দু’দফা নোটিন জারি করা হয়। হাইকোর্ট ওই সম্পত্তিতে ৬ মাসের জন্য স্থিতাদেশ দেয়। কিন্তু হুমায়ুন নিজেই সেই আদেশ অমান্য করে দখলকৃত জায়গায় পাকা মাকের্ট নির্মাণ করেন। সরকারী সম্পত্তি রক্ষার আইনী পদক্ষেপ নেয়ায় হুমায়ুন কবীর ও তার সহযোগীরা গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে কর্মকর্তার অভিযোগ। গুদাম কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে কালীগঞ্জ পুলিশ হুমায়ুনকে দ্রুত স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলেও দীর্ঘদিনেও তা সরিয়ে নেয়া হয়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসিমা বেগম হেনা অভিযোগ করে বলেন, একাধিক সন্ত্রাসীর সহযোগিতায় গত মাসে তাদের চারটি ঘের দখল ও লুটপাট করে হুমায়ুন বাহিনী। হুমায়ুন ঘের দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘের নিয়ে বিরোধ তার চাচাতো ভাইদের মধ্যে। তার কোন বাহিনী নেই বলেও তিনি দাবি করেন।
×