ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভেট্টরি বনাম সাকিব অলরাউন্ড লড়াই

ব্যাটে-বলে জ্বলে উঠতে পারবেন কী সাকিব?

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৩ মার্চ ২০১৫

ব্যাটে-বলে জ্বলে উঠতে পারবেন কী সাকিব?

মোঃ মামুন রশীদ ॥ একাধারে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ এ তিন ফরমেটেরই এক নম্বর অলরাউন্ডার হওয়ার অভূতপূর্ব রেকর্ড নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। ব্যাটে-বলে এ তিন ফরমেটেই তিনি দীর্ঘদিন প্রতিপক্ষ শিবিরের জন্য অন্যতম হুমকি। তবে চলতি আসরে তাঁকে ওয়ানডে অলরাউন্ডারের শীর্ষস্থান থেকে হটিয়ে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার তিলকারতেœ দিলশান। ব্যাটে-বলে যুগপৎভাবে এখন পর্যন্ত ম্যাচজয়ী নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি বাংলাদেশের অন্যতম ভরসা সাকিব। তবে ব্যর্থ হয়েছেন তা বলা যাবে না মোটেও। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাকিবের রেকর্ড বেশ ভাল। আবার অপরদিকে সাবেক কিউই অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টরির রেকর্ড বেশ সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তাই আজ হ্যামিল্টনে এ দু’দলের মোকাবেলায় লড়াই হবে সাকিব-ভেট্টরির মধ্যে। আজ পারবেন সাকিব দলের হয়ে ম্যাচজয়ী নৈপুণ্য দেখাতে? অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে বিশ্রাম দেয়ার জোর সম্ভাবনা ইতোমধ্যেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় গ্রুপ পর্বের শেষ এ ম্যাচে। সেক্ষেত্রে ২০১১ সালের পর আবারও দলের নেতৃত্বভার নিতে পারেন সহঅধিনায়ক সাকিব। দলকে দীর্ঘদিন পর নেতৃত্ব দিয়ে আরেকটি জয় উপহার দিতে পারবেন সাকিব? সবার উৎসুক দৃষ্টি তাঁর ওপরেই। চলতি বিশ্বকাপে দারুণ, এখন পর্যন্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ গ্রুপ ম্যাচে নামার আগে একেবারেই চাপমুক্ত আছে টাইগাররা। কারণ আগেভাগেই কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার স্বপ্নটা বাস্তব হয়েছে। ৫ ম্যাচ খেলে তিন জয়ের বিপরীতে মাত্র একটি পরাজয়। টিম বাংলাদেশ তাদের গর্জনটা ভালভাবেই শুনিয়ে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। তবে শুরু থেকেই সাকিবের দিকে আলাদা দৃষ্টি ছিল প্রতিপক্ষ শিবিরগুলোসহ বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদের। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনটি জয়ের পেছনে মূল নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেননি সাকিব। ৪ ম্যাচে ব্যাট হাতে ৫৪.৩৩ গড়ে ১৬৩ রান করেছেন আর বল হাতে নিয়েছেন ৩ উইকেট। কিন্তু বিশ্বসেরা সাকিবের কাছে প্রাপ্তির আশাটা এর চেয়েও বড়। ম্যাচ জয়ের অন্যতম নায়ক হিসেবে সাকিবকে দেখতে চায় বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকরা। আজই শেষ সুযোগ তাঁর গ্রুপ পর্বে নিজেকে সেই ভূমিকায় আবির্ভূত করার। কারণ ‘এ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচ আজ স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ৭ ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডকে পর্যুদস্ত করার দারুণ এক সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে ২০১০ সালে প্রথমবার যখন কিউইদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ, সেবার পুরো সিরিজে একাই তাদের ধসিয়ে দিয়েছিলেন সাকিব। সে বছর অক্টোবরে হওয়া ওয়ানডে সিরিজের ৪ ম্যাচে ৭১.০০ গড়ে ২১৩ রান করার পাশাপাশি ১৫.৯০ গড়ে ১১ উইকেট শিকার করেছিলেন সাকিব। হয়েছিলেন সিরিজসেরা। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৪ ম্যাচ খেলে ২৭.৪১ গড়ে ৩২৯ রান করার পাশাপাশি ২২.২৫ গড়ে ২৪ উইকেট দখল করেছেন তিনি। এর মধ্যে দু’বার প্রত্যক্ষভাবে দলকে জিতিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। আর একবার সিরিজের সেরা। এ কারণে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড হওয়াতে সাকিবের দিকেই আরেকবার প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে থাকবে টাইগার শিবির। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নতুন করে আরেকটি গুরুদায়িত্ব আরেকবার চাপতে পারে সাকিবের ওপর। অধিনায়ক মাশরাফিকে বিশ্রাম দেয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে আজ দলকে নেতৃত্ব দেবেন সাকিবই। কারণ গত ডিসেম্বরে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে হোমসিরিজ থেকেই তিনি দলের সহঅধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মাশরাফির অবর্তমানে তাঁর ঘাড়েই সেজন্য ন্যস্ত হবে দায়িত্বটা। ২০১১ সালের আগস্টে জিম্বাবুইয়ে সফরে দলকে সর্বশেষবার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব। ওই সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে হেরে ফেরার পরই সাকিবকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। আবারও সেই দায়িত্বটা আজ হ্যামিল্টনে চলতি বিশ্বকাপের অন্যতম হটফেবারিট নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে চাপার জোর সম্ভাবনা সাকিবের কাঁধে। বাড়তি দায়িত্বের এ চাপের মধ্যেও অন্য এক লড়াই হবে তাঁর নিউজিল্যান্ডের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার ভেট্টরির সঙ্গে। চলতি বিশ্বকাপে স্পিনারদের মধ্যে সাবেক কিউই অধিনায়ক নৈপুণ্যে এগিয়ে সবার চেয়ে। পেসনির্ভর উইকেটে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে ঘূর্ণিবলে তিনি শিকার করেছেন ১২ উইকেট। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও বেশ ভাল রেকর্ড ভেট্টরির। টাইগারদের বিরুদ্ধে তিনি ১৯ ম্যাচ খেলে ২৫.৩০ গড়ে ২৫৩ রান করার পাশাপাশি বল হাতে মাত্র ১৮.৭০ গড়ে শিকার করেছেন ৩০ উইকেট। সাকিবকে তিনি ৪ বার আউট করেছেন মাত্র ৯৯ বল করে ৬৪ রান খরচায়। তবে ম্যাচসেরা হতে পেরেছেন মাত্র একবারই। কিন্তু পরিসংখ্যান বিবেচনায় এটা স্পষ্ট হয়েছে আজ হ্যামিল্টনে সাকিব-ভেট্টরির মধ্যে একটি আলাদা লড়াই থাকবে। সে লড়াই মূলত স্পিনের হলেও অলরাউন্ড নৈপুণ্যের লড়াইটাই বড়, এতে কোন সন্দেহ নেই।
×