ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কিউইদের মোকাবেলায় প্রস্তুত টাইগাররা

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড আগুন লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৩ মার্চ ২০১৫

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড আগুন লড়াই আজ

মিথুন আশরাফ ॥ নিউজিল্যান্ডের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় কোনটি? এ প্রশ্ন যখনই উঠবে তখনই যেন ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম, ড্যানিয়েল ভেট্টরিরা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলবেন! বাংলাদেশই যে কিউইদের সেই দুঃসহ স্মৃতির বেদনা জড়িয়ে দিয়েছে। তাও আবার একবার নয়, দুইবার হোয়াইটওয়াশ করে! টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়ে নিচের সারির দল। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে কখনই হোয়াইটওয়াশ হয়নি নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে হয়েছে। পূর্ণ শক্তির দল নিয়েও বাংলাদেশের বিপক্ষে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। এখন এমন অবস্থা হয়েছে দুই দলের মোকাবেলায় সর্বশেষ ৭ ম্যাচের সাতটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ! আজ যখন হ্যামিল্টনে সকাল সাতটায় বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি হবে, এর আগে হার-জিতের হিসাবটা দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ ৭-০ নিউজিল্যান্ড। আর দ্বিপক্ষীয় সর্বশেষ দুই সিরিজের হিসাব টানলে দুই সিরিজেই নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। শেষ ৭ ম্যাচের হিসাবে তো বাংলাদেশই ফেবারিট। সেই দলের বিপক্ষে যখন খেলা, তখন কিউইদের ভেতর কি আর প্রতিশোধের আগুন না জ্বলে পারে? খেলাটি আবার নিজ মাটিতে খেলবে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশকে তো দুমড়ে-মুচড়ে দেয়ার পরিকল্পনাই থাকার কথা। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ম্যাককুলাম অনেক বড় তারকা ক্রিকেটার। এসব দিক নিয়ে ভাবেন না। তাই তো বলেছেন, ‘আমাদের অন্য কিছু ভাবার সময় নেই। শুধু জিততেই চাই। এটিই গুরুত্বপূর্ণ।’ বাংলাদেশকে যে খবর বানিয়ে ছাড়ার পরিকল্পনা আছে, তা যেন একটি কথাতেই বুঝিয়ে দিলেন, ‘আমাদের সামর্থ্য আছে ২০০ রানের নিচে বেঁধে ফেলার’ সঙ্গে আগে ব্যাটিং পেলে যে ৩০০ রানের ওপরে করার টার্গেট আছে তাও জানালেন কিউই অধিনায়ক, ‘যদি প্রথমে ব্যাটিং করি তাহলে ৩০০ রানের ওপরে করার সামর্থ্যও আছে।’ জ্বালা ম্যাককুলামেরই বেশি। ২০১৩ সালে যে বাংলাদেশে নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ তিন ম্যাচের সিরিজ হয়, সেই সিরিজের নেতৃত্বে ছিলেন ম্যাককুলামই। এমনই বাজে নৈপুণ্য ছিল ম্যাককুলামের তৃতীয় ওয়ানডেতে একাদশেই ছিলেন না। কী যে সমালোচনা হয়েছে। এমন সমালোচনা তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষেই খারাপ করায়। সেই সঙ্গে তাঁর দল টানা তিন ম্যাচে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। এবার যখন বাংলাদেশকে কাছে পাচ্ছে, তখন কী আর সেই সমালোচনার জবাবও না দিয়ে ছাড়বেন ম্যাককুলাম। আবার খেলা নিউজিল্যান্ডেই। বিশ্বকাপের স্বাগতিক দলও তারা। গ্রুপ পর্বে এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচও হারেনি। আজকের ম্যাচটি জিতলে আবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে অপরাজিত থেকেই পরের পর্বে খেলবে নিউজিল্যান্ড। এমন যখন পরিস্থিতি তখন নিউজিল্যান্ড স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচটি জিততে চাইবে। কিউইদের পক্ষে আবার নিজ মাটিতে খেলে বাংলাদেশকে তুলোধুনো করার ইতিহাসও আছে। ৬টি ম্যাচ বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডে খেলা হয়েছে। ৬টিতেই জিতেছে নিউজিল্যান্ড। তাও আবার বড় ব্যবধানেই জয় তুলে নিয়েছে। ২০০৭ সালে তো সেরা দল নিয়েও বাংলাদেশ মাত্র ৯৩ রানেই অলআউট হয়ে গিয়েছিল। সেই ম্যাচ জিততে নিউজিল্যান্ড মাত্র ৬ ওভার খেলেছে। যখন খেলা হচ্ছে নিউজিল্যান্ডে, তখন বাজেভাবে হারার বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। আবার ম্যাচটিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে বাংলাদেশ। সঙ্গে খানিক ইনজুরি, ঠান্ডায় গলা বসে যাওয়া ও আগের ম্যাচে সেøা ওভার রেটের জন্য জরিমানা হওয়ায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নাও খেলতে পারেন মাশরাফি। এ ম্যাচে সেøা ওভার হলে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন মাশরাফি। সঙ্গে না খেললে টানা খেলার ধকল কাটিয়ে একটু বিশ্রামেরও সুযোগ পাবেন। এ ম্যাচের চেয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকা অনেক বেশি দরকার। তাই মাশরাফির না খেলার সম্ভাবনাই বেশি। আজ যখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে খেলতে নামবে বাংলাদেশ, মাশরাফি না থাকলে তখন সাকিব আল হাসানের কাঁধে নেতৃত্বের দায়ভার পড়তে পারে। ম্যাচটিতে আবার বেশি সিরিয়াস হওয়ারও খুব দরকার নেই। জিতলে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে নামা যাবে। হারলেও খুব ক্ষতি হয়ে যাবে না। সেই তুলনায় নিউজিল্যান্ড অনেক বেশি সিরিয়াসই খেলবে। নিউজিল্যান্ড তো টানা ৫ ম্যাচেই জিতেছে। এ ম্যাচ জিতলে গ্রুপ পর্বে অপরাজিত থাকবে কিউইরা। তাই তারা জেতার প্রাণপণ চেষ্টাই করবে। সেই চেষ্টায় যদি আবারও হার হয়ে যায়, তাহলে তো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা ৮ ম্যাচই জিতে যাবে বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশ হারলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ২৪ ম্যাচ খেলে যে ১৬টিতে হার হয়েছে, আরেকটি হার যুক্ত হবে। তবে বিশ্বকাপে হারানোর কিছুই থাকবে না। ম্যাচটি কোয়ার্টার ফাইনালে নামার আগে প্রস্তুতি হিসেবে নিলেই হয়। তবে নিউজিল্যান্ড সেই হিসেবে ম্যাচটিকে নেবে না। কারণ, দলটি যে বাংলাদেশের বিপক্ষে একের পর এক ম্যাচে হেরেই আছে। হ্যামিল্টনের আকাশ ভারি, কাঁদছে; বৃহস্পতিবার বর্ষণ হয়েছে। যদিও আজ আবহাওয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী বৃষ্টি থাকার কথা না। আকাশ ভারি থাকার কথা না। আকাশে বৃষ্টি আজ না থাকলেও ম্যাচজুড়েই কি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটারদের মন ভারি হয়ে থাকবে না? যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে ১টি জয় না মিলবে, ততক্ষণ পর্যন্তই তো প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ফুঁসতে থাকবে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ এখন সেই প্রতিশোধ নেয়া রুখে দিতে পারলেই হয়। পারবে বাংলাদেশ?
×