ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধ বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাজ্যের এই ম্যাগাজিনটি প্রতিনিয়ত;###;নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে

উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যাচ্ছে দি ইকোনমিস্টের কাছে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৩ মার্চ ২০১৫

উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যাচ্ছে দি ইকোনমিস্টের কাছে

তৌহিদুর রহমান ॥ বাংলাদেশ সরকারের বিষয়ে প্রতিনিয়ত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশ করায় যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ‘দি ইকোনমিস্ট’-এর কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। ইকোনমিস্ট পত্রিকাকে খুব তাড়াতাড়িই এই চিঠি দেয়ার জন্য লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে সর্বশেষ ৫ মার্চ পত্রিকাটির ‘বাংলাদেশ জ্বলছে’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদপত্রও পাঠানো হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী ম্যগাজিন দি ইকোনমিস্ট উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রতিনিয়তই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। এসব প্রতিবেদন পক্ষপাতমূলক ও ভিত্তিহীন। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন প্রকাশের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যও প্রকাশ্যেই ইকোনমিস্ট পত্রিকার সমালোচনা করে আসছেন। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই ইকোনমিস্ট পত্রিকা এই বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। পত্রিকাটি প্রতিনিয়তই বলে আসছে, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই বিচার করছে। এছাড়া বিরোধী পক্ষের ওপর সরকার প্রতিনিয়ত দমন নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে বলেও ইকোনমিস্ট প্রতিনিয়ত খবর প্রকাশ করে আসছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ইকোনমিস্ট পত্রিকা সরকারবিরোধী বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। এসব প্রতিবেদনে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্বেষ ফুটে উঠেছে। যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে ইকোনমিস্ট শিরোনাম করে ‘প্রহসনের ট্রাইব্যুনাল’। এতে ট্রাইব্যুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিভিন্ন সমালোচনা করা হয়। ‘বাংলাদেশের রাজনীতি’ নিয়ে শিরোনামে ইকোনমিস্ট লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে গেছেন। এছাড়া ‘বাংলাদেশের বিষাক্ত রাজনীতি : হ্যালো দিল্লী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে ধ্বংসের হাত থেকে ঠেকাতে ভারতকে পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া ‘পিতার নামে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে পত্রিকাটি। ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে ইকোনমিস্ট প্রতিবেদনের শিরোনাম হয়, ‘নির্বাচনে জিতেছে ক্ষমতাসীনরা, হেরেছে দেশ’। এতে শেখ হাসিনার সরকারকে অজনপ্রিয় বলেও আখ্যা দেয় ইকোনমিস্ট। একইভাবে ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পত্রিকাটি লেখে ‘সন্ত্রস্ত গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণ নীরব রাখা হয়েছে’। এভাবে একের পর এক মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচার করে ইকোনমিস্ট। প্রতিনিয়ত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রকাশের অভিযোগে ইকোনমিস্ট পত্রিকার সমালোচনা করে চলেছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ইকোনমিস্ট পত্রিকার সমালোচনা করে বলেছেন, পত্রিকাটি বাংলাদেশের সরকার নিয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশ করে আসছে। পত্রিকাটি জামায়াতে ইসলামের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রকাশ করে থাকে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনারে কাজে হস্তক্ষেপ ও বিচারকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করায় ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছিল আদালত। ইকোনমিস্টের সম্পাদক ও দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো প্রধানকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতেও বলা হয়। তবে ইকোনমিস্ট সে বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দেয়নি। এদিকে সর্বশেষ গত ৫ মার্চ দি ইকোনমিস্ট পত্রিকা ‘বাংলাদেশ জ্বলছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের শেষের খেলা হয়ত শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এ সপ্তাহে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে খেলার শেষ হতে সময় নেবে। বেগম খালেদা জিয়া শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীই নন, তিনি কার্যত তার সরকারের সর্বশেষ প্রতিপক্ষ। দু’মাস ধরে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি অবস্থা যখন চরম উত্তেজনায় পৌঁছেছে। বেগম খালেদা জিয়ার অনানুষ্ঠানিক আটকাবস্থা ও তার মাথার ওপর এখন যাবজ্জীবন কারাদ-ের ঝুঁকি রয়েছে। তিনিই একমাত্র উল্লেখ করার মতো ব্যক্তি, যিনি এখনও কারারুদ্ধ নন। সম্প্রতি সিনিয়র অন্য অনেক নেতাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। গৃহবন্দী করা হয়েছে অথবা নির্বাসনে রয়েছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। যদি বাংলাদেশে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে পরিচিত সেনাবাহিনী বেসামরিক রাজনীতিবিদদের আচরণে অধৈর্য হয়ে যান এবং তাদের সমূলে উৎপাটিত করেন তবে এটিই প্রথম উদাহরণ হবে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ইকোনমিস্টের অন্যান্য প্রতিবেদনের মতো এই প্রতিবেদনকেও মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর মনে করে সরকার। সে কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশনকে এ বিষয়ে চিঠি পাঠাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে নিয়ে ভবিষ্যতে যেন মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক কোন খবর যেন প্রকাশ না করা হয়, সে বিষয়েও চিঠিতে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। যুক্তরাজ্য হাইকমিশন খুব দ্রুতই এ বিষয়ে ইকোনমিস্ট পত্রিকাকে চিঠি দেবে। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের প্রায় দেড় শ’ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ও প্রভাবশালী পত্রিকা দি ইকোনমিস্ট। লন্ডন থেকে প্রকাশিত এই ম্যাগাজিনের প্রচার সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। এছাড়াও পত্রিকাটির বর্তমান অনলাইন গ্রাহকের সংখ্যা ১০ লাখ।
×