ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এ মাসেই তিন সিটি নির্বাচনের তফসিল

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৩ মার্চ ২০১৫

এ মাসেই তিন সিটি নির্বাচনের তফসিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন মে মাসের প্রথম সপ্তাহে করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে ইসি। এ কারণে প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের জন্য এইচএসসি পরীক্ষার মাঝে ফাঁক রাখারও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ সময়ে কোন পরীক্ষা থাকলে তা পরে নেয়া যায় কিনা তা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন একসঙ্গে করার কোন পরিকল্পনা নেই বলে জানা গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ মাসেই তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণার পরও ৩৭ দিন সময় হাতে রেখে নির্বাচন করতে হবে। রোজার আগেই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য পরীক্ষার সময়ে নির্বাচন করা যায় কিনা তা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আবার রোজার আগেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া জুনের পরে নির্বাচনের অনুষ্ঠানে সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টির কারণে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব নাও হতে পারে। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে এবং নির্বাচনের সময় নির্ধারণে জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার জন্য প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেন। জানা গেছে কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব বিবেচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করার চিন্তাভাবনা করছে। এ আলোচনা অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করতে পাঁচ দিনের সময়ের প্রয়োজন। বিশেষ করে ভোট কেন্দ্র স্থাপন, ভোটার সরঞ্জাম কেন্দ্রে নেয়া, ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা বিধান ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য কম করে হলে পাঁচ দিন সময় প্রয়োজন। এ কারণে ভোটের সময় এই পাঁচ দিনের পরীক্ষার কোন সিডিউল না রাখার জন্য বলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, হরতাল অবরোধের কারণে এমনিতেই প্রতি শুক্রবার ও শনিবার পরীক্ষা গ্রহণ করতে হচ্ছে। ওই সময়ে যদি কোন হরতাল কর্মসূচী থাকে তবে পরীক্ষা এমনিতে পেছাতে হবে। আর কোন কর্মসূচী না থাকলেও নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনের ওই সময়ে পরীক্ষা সিডিউল পরিবর্তন করা হবে। সকাল ১১টায় নির্বাচন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে প্রাক-নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যলোচনা করতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আগামীতে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। তবে নির্বাচনের আগে জটিল কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হবে। বৈঠক শেষে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করা পবিত্র দায়িত্ব। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক খান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জে. আবু বেলাল মোঃ শফিউল হক, কোস্টগার্ডের ডিজি রিয়ার এ্যাডমিরাল মোঃ মকবুল হোসেন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক মে. জে. শামসুল হক, এসবির এডিশনাল আইজিপি ড. মোঃ জাবেদ পাটোয়ারী, পুলিশ সদরদফতরের অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ মোকলেসুর রহমান, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার আব্দুল জলিল ম-ল, বিজিবি মহাপরিচালক মে. জে. আজিজ আহমেদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সর্দার প্রমুখ। এদিকে বৈঠক শেষে কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিহত ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী জুনের আগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। এজন্য এপ্রিল মাস থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মাঝে ফাঁক খুঁজছে কমিশন। নির্বাচন করতে পাঁচ দিন সময় লাগবে। এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত প্রতি মাসেই পরীক্ষার ফাঁকে ছুটি আছে। ওই ছুটির ফাঁকে নির্বাচন হতে পারে। এপ্রিলে নির্বাচন করতে হলে এ মাসেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে বলে জানান তিনি। তফসিল ঘোষণার পর অন্তত ৩৭ দিন সময় হাতে রেখে ভোট গ্রহণের তারিখ ঠিক করা হবে। তিনি বলেন, বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নতি হবে। নির্বাচন করতে কোন সমস্যা হবে না। দেশে বিভিন্ন সময় যে হামলার ঘটনা ঘটছে, এ ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। প্রয়োজন হলে নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হবে বলে জানান কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আগামী ১ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে হরতাল, অবরোধের কারণে শুক্র ও শনিবারে পরীক্ষা নিতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শুক্র ও শনিবার বাদ দিয়ে উপযুক্ত সময়ে ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করার কথা বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি রয়েছে তাতে নির্বাচন না হওয়ার কোন কারণ নেই। সামনে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। ভোটের তফসিল ঘোষণার পরও অনেক সময় পাওয়া যাবে। এ সময়ের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এ সময় কমিশনের সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলি উপস্থিত ছিলেন।
×