ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ সংবাদ সম্মেলন

সরকারকে পাঁচ থেকে ৭ দিনের আলটিমেটাম দিচ্ছেন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৩ মার্চ ২০১৫

সরকারকে পাঁচ থেকে ৭ দিনের আলটিমেটাম দিচ্ছেন খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বিকেল চারটায় তার গুলশান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে সরকারকে পাঁচ অথবা ৭ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে কয়েক দফা প্রস্তাব পেশ করে এগুলো মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচী দেয়ার ঘোষণা দেবেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে থাকবে সালাহউদ্দিন আহমেদসহ আন্দোলন চলাকালে গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মীর মুক্তি, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলার বিষয়ে ফয়সালা করা, তারেক রহমানকে পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ দেয়া, সভা-সমাবেশের অবাধ সুযোগ দেয়া ইত্যাদি। এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটকের কথা অস্বীকৃতির ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ। আমি এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি।’ উল্লেখ্য, ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। আর ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ এবং ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সপ্তাহে ৫ দিন করে হরতাল পালন করে আসছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এ কর্মসূচী পালনকালে আর গুলশান কার্যালয়ের বাইরে আসেননি খালেদা জিয়া। এদিকে ৬৯ দিন ধরে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান ও ৬৬ দিন ধরে টানা অবরোধ এবং সপ্তাহে ৫ দিন করে হরতাল পালনকালে পেট্রোলবোমাসহ নাশকতা চালিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করায় এ নিয়ে দেশ-বিদেশে খালেদা জিয়া ও বিএনপি জোটের রাজনীতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। আন্দোলনে কোন সফলতা না আসায় খোদ বিএনপি নেতাকর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কি বলবেন এ নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। তবে খালেদা জিয়ার প্রেসউয়িং কর্মকর্তা সামসুদ্দিন দিদার জানিয়েছেন চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, যুগ্ম-মহাসচিব, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদকে গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে আটক করলেও আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে হাজির না করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আটক করার কথা অস্বীকৃতির ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও অন্যতম যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের পর থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের হয়ে কেউ কথা বললেই বর্তমান শাসক গোষ্ঠী তাকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়ার এক স্বৈররীতি চালু করেছে। সে কারণে সালাহউদ্দিন আহমেদ গ্রেফতার এড়িয়ে দল- জোটের পক্ষ থেকে বক্তব্য-বিবৃতি প্রদান ও কর্মসূচী ঘোষণা করে আসছিলেন। এতে ক্ষমতাসীনেরা যে তার ওপর প্রচ- ক্ষুব্ধ ছিল তা তাদের শীর্ষ পর্যায় থেকে ব্যক্ত ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট হয়েছে। বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গত মঙ্গলবার রাতের আঁধারে দরজা ভেঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদকে চোখ বেঁধে ও হাতকড়া পরিয়ে তুলে নেয়ার ঘটনায় ক্ষমতাসীনদের ক্রোধেরই বহির্প্রকাশ ঘটেছে। সালাহউদ্দিন আহমেদকে এভাবে তুলে নিয়ে যাবার ঘটনার ব্যাপারে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা অভিযোগ গ্রহণে পুলিশের অস্বীকৃতিরও আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এখন দেশে আইন যে স্বাভাবিক গতিতে চলছে না, এটা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। জাতীয় পর্যায়ের একজন রাজনীতিকের ক্ষেত্রে যেখানে এমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, সেখানে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা যে কতখানি অনিশ্চিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘জনপ্রতিনিধিত্বহীন শাসক গোষ্ঠীর স্বেচ্ছাচারিতা দেশে এখন এক চরম অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। যাকে যখন ইচ্ছা গ্রেফতার, অপহরণ, গুম ও খুন করা হচ্ছে। গ্রেফতারের পর অনেকের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের হদিসও মিলছে না। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমসহ সারাদেশে শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের পর অস্বীকারের উদ্বেগজনক প্রবণতাও এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সালাহউদ্দিন আহমেদের ঘটনায় আমরা দারুণভাবে উৎকণ্ঠিত। ক্ষমতাসীনরা এর দায় এড়াতে পারে না এবং তাদের কোন কৈফিয়ৎ কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য হবে না। খালেদা জিয়া বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদের যাতে কোন ক্ষতি না হয় আমি সেই মোনাজাত করছি। অনতিবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। বিবেকবান প্রতিটি নাগরিক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ করছি, এ ধরনের সীমাহীন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন।
×