ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মংলায় সিমেন্ট ফ্যাক্টরির নির্মাণাধীন ভবন ধস ॥ ৬ লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৩ মার্চ ২০১৫

মংলায় সিমেন্ট ফ্যাক্টরির নির্মাণাধীন ভবন ধস ॥ ৬ লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট/ নিজস্ব সংবাদদাতা, মংলা ॥ বাগেরহাটের মংলা বন্দরের শিল্প এলাকায় সেনাকল্যাণ সংস্থার এলিফ্যান্ট ব্রান্ডের মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরির নির্মাণাধীন ৫ তলা ভবনের ছাদ ধসের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আরও দু’জনের লাশ দেখা গেছে। এরপরও নিখোঁজ রয়েছে আট জন। নিহতদের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার আলামিন, আমির আকঞ্জি ও মাহফুজ হাওলাদার। আহত অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৪৭ জনকে। বিভিন্ন হাসপাতালে ২৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। মংলাবন্দর হাসপাতাল থেকে ১২ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনায় পাঠানো হয়েছে বলে জানান মংলাবন্দর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ এনামুল কবির। এদের মধ্যে তিনজনকে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। অবশিষ্ট ১১ জনের মধ্যে সাত জন মংলা পোর্ট হাসপাতালে এবং চার জন রামপালের ঝনঝনিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্থানীয় বুড়িরডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান অনির্বাণ হালদার জনকণ্ঠকে জানান, সাড়ে ১৪ মিটার উঁচু নির্মাণাধীন এই ভবনের ছাদ ধসে কমপক্ষে ৫০ -৬০ শ্রমিক চাপা পড়েছে। তাঁর মতে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ফায়ার সার্ভিসের খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, এখনও ২৫ থেকে ৩০ নির্মাণ শ্রমিক নিহত বা আহতাবস্থায় ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে। উদ্ধার অভিযান শেষ করতে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান। ভবনের ছাদ ধসের পর থেকেই মংলার নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বাগেরহাট-মংলার ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিকেলে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনীর একটি দল। দুর্ঘটনার পর পরই পুলিশ ও র‌্যাব গোটা এলাকা ঘিরে রাখে। এদিন বিকেল পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থলে গণমাধ্যম কর্মীদেরও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ডেপুটি ম্যানেজার ক্যাপ্টেন সৈয়দ হেলাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এই নির্মাণাধীন ভবনের ছাদের কাজে প্রায় এক শ’ শ্রমিক কাজ করছিল। তবে কি কারণে ছাদ ধসের ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে সেনাকল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে খবর পেয়ে দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে আসা স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী তালুকদার আব্দুল খালেক বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, সেনাকল্যাণ সংস্থার নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার ও তদারকির অভাবে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ও আহত নির্মাণ শ্রমিকদের দায়ভার সেনাকল্যাণ সংস্থাকে নিতে হবে বলে তিনি জানান। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ৫ তলা ভবনের ৩ নং বলরুমের ছাদ নির্মাণাধীন অবস্থায় আকস্মিক ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক দাবি করেছে, এ সময় প্রায় দেড় শ’ শ্রমিক ওই নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই ধস ঘটে। খবর পেয়ে মংলা নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এদিকে এই ভবন ধসের পর পরই এই ফ্যাক্টরির প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। ভবনের ছাদ ধসের খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে নিহত ও আহত শ্রমিকদের স্বজনরা ফ্যাক্টরির সামনে এসে আহাজারি করতে থাকে। ছুটতে থাকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। সন্ধ্যায় এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু উদ্বিগ্ন অবস্থায় তাদের স্বজনদের অপেক্ষায় মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরির প্রধান ফটকের বাইরে অপেক্ষা করছিল। এ্যাম্বুলেন্সে করে আহত বা নিহত নির্মাণ শ্রমিকদের ফ্যাক্টরির প্রধান ফটক দিয়ে বের করার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
×