ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা ধ্বংসের হরতাল অবরোধ

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১৩ মার্চ ২০১৫

শিক্ষা ধ্বংসের হরতাল অবরোধ

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত এবং তাদের প্রধান রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছে- পোড়াও বই, জ্বালাও দেশ। জেনেবুঝেই তারা এ পরিকল্পনা নিয়েছে। লক্ষণীয় হলো, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষাঙ্গনের। একটি বিদ্যাপীঠে যদি একজন শিক্ষার্থীও নাশকতার শিকার হয় তাহলে গোটা শিক্ষাক্ষেত্রেই তার বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। এই আশঙ্কা থেকেই কর্তৃপক্ষ কড়াকড়িভাবে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের শিক্ষালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম যতদিন অব্যাহত থাকবে ততদিন প্রায় রুদ্ধ থাকবে দেশের শিক্ষাঙ্গন, তথা শিক্ষার অগ্রযাত্রা। দুই মাসের অধিককাল ধরে চলা অবরোধ-হরতালে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এক কথায় বিপর্যস্ত। অথচ বছরটা শুরু হয়েছিল শিক্ষার্জনের সুন্দর এক স্বপ্নময়তার ভেতর দিয়েই। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরের বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের হাতে। বই উৎসবের দিনটিও সন্ত্রাসীদের ডাকা হরতালের কালো ছায়ার নিচে ছিল। তবু উৎসব, উদ্যম ও আগ্রহের সামান্যতম কমতি ছিল না নবীন-তরুণ শিক্ষার্থীদের ভেতর। কিন্তু এর কয়েক দিন পরেই টানা অবরোধ চাপিয়ে দেয়া হলে দেশের বেশিরভাগ বিদ্যালয় অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানীর বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিসেম্বরে ছিল শীতকালীন ছুটি। সেই ছুটির পর আর খোলা সম্ভব হয়নি অনেক স্কুল। অবশ্য গত দুটি সপ্তাহ ধরে ছুটির দুদিন শুক্র ও শনিবার স্কুল খোলা রাখা হচ্ছে। কিন্তু এভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া অসম্ভব। এরই ভেতর এসএসসি পরীক্ষা চলে এসেছে। পরীক্ষা শুরুর দিনটি থেকেই তারা টানা হরতাল দিয়ে আসছে সপ্তাহের প্রতিটি কর্মদিবসে। চলতি এসএসসির প্রায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী জানে না, তাদের পরীক্ষা কবে শেষ হবে। একই কারণে ১ এপ্রিল শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষাও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। পুরো শিক্ষাঙ্গনই ইতোমধ্যে সেশনজটের শিকার। বিএনপি-জামায়াত যে চায় না দেশে আধুনিক শিক্ষার ধারা অব্যাহত থাকুক, সেটা এখন প্রমাণিত। এখনও ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। আবার ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরেও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্লাস শুরু হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সঙ্গত কারণেই কম। এভাবে চলতে থাকলে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স কারিকুলাম কিভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে? এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ারও কি কোন পথ থাকবে! দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন রাজনীতি অবশ্যই পরিত্যাজ্য। সংশ্লিষ্ট দলগুলোর কাছে আবেদন-নিবেদন জানিয়ে যে লাভ নেই সেটা জাতি অনুধাবনে সক্ষম হয়েছে। তাই এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য দেশবাসী এখন সরকারের দিকেই তাকিয়ে আছে। সরকার কঠোরভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসতে পারে। একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের শেষ কামড়ের কথা মনে পড়ে যাবে যেতে পারে অবধারিতভাবে। বীর বাঙালীর হাতে পরাজয় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন অবশ্যম্ভাবী জেনে এই চক্র জাতিকে পঙ্গু করে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়। বেছে বেছে দেশের সেরা সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তারা সফল হতে পারেনি সেটা সবার জানা। স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর পরও তাদের দুরভিসন্ধি অব্যাহত রয়েছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা স্বাধীনতাবিরোধীদের অপতৎপরতা যে কোন মূল্যে নস্যাত করে শিক্ষাঙ্গনের প্রাণময়তা ফিরিয়ে আনা হবে।
×