ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিয়ানমার সীমান্তে পাঁচ হাজার একর বনায়ন ছাই ॥ আহত ১

পাহাড়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১২ মার্চ ২০১৫

পাহাড়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

নিজস্ব সংবাদদাতা,উখিয়া, ১১ মার্চ ॥ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ২ জন অগ্নিদগ্ধসহ ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া অগ্নিকান্ডে একের পর এক পাহাড়, বনায়ন, সবজি ক্ষেত পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন, উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি অগ্নি নির্বাপক দল, পুলিশ যৌথভাবে বুধবার দিন ভর চেষ্টা করেও আগুন পারেনি নিয়ন্ত্রণে আনতে। পার্শ্ববর্তী সীমান্তের আমতলী ও তুয়াইংগা ঝিরি বিজিবি ক্যাম্প ঝুঁিকর মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে। সরজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৩৯, ৪০ ও ৪১ নং সীমানা খুটির মাঝামাঝি শিলের বাঁধ, দক্ষিণের ও উত্তরের পাহাড়, নজির আহমদের বাগান, জামাল সিকদারের রাবার বাগান, অলী ফকিরের ছনখোলা, আলিদ্দিন বুইজ্জার খামার, শিখকুমের পাহাড়, সবুজের সেগুন বাগান, মাষ্টার নূরুল আমিনের আম বাগান, প্রতিবন্ধি আব্দুর রহমানের কলা বাগান, ডাঃ ছুরুত আলমের বনায়ন, সিরাজ মিয়ার কলা বাগান, বদিউর রহমান, মেহের আলী, ছৈয়দ নূরের ছনখোলা সহ অন্তত ৭ হাজার একরের বেশি পাহ,াড়ী এলাকার বনায়ন ও অন্যান্য ক্ষেত খামার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। টেকনাফ সাব ষ্টেশন থেকে পাহাড়ের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রণে দু’টি গাড়ি সহ অগ্নিনির্বাপক দল আসলেও পাহাড়ী দূর্গমতা ও যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় ফায়ার বিগ্রেডের গাড়ি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দুরে অবস্থান করছে। এমনিতে শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ের, বনের গাছ-পালা থেকে ঝড়ে পড়া শুকনো পাতা, সমতলের ছেয়ে পাহাড়ী তাপমাত্রা অধিকতর হওয়া এবং থেমে থেমে বয়ে চলা হালকা-মাঝারি দমকা হাওয়ার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে টেকনাফ সাব ষ্টেশনের লিডার সেলিম উদ্দিন জানান। আমতলী বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্দুল বারিক বলেন, আমার ও পার্শ্ববর্তী তুয়াইংগা ঝিরি বিজিবি ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ অগ্নিকান্ডস্থল এ ক্যাম্প দু’টোর প্রায় কাছা-কাছি হওয়া, যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্গম হওয়ায় বিজিবি সদস্যরা নিজেদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষনিক সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। উখিয়ার রাজাপালংয়ের দরগাহপালং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূরুল আমিন (৪০) ও তুলাতলী গ্রামের মৃত অলী ফকিরের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩৮) নিজেদের বাগানের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে কক্সবাজার ডিজিটাল হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে তাদের প্রতিবেশী আব্দুল গফুর সওদাগর জানিয়েছেন। ভয়াবহ অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালাতে গিয়ে স্থানীয় আব্দুর রহমান (৪০), ফকির আহমদ (৩৮) আব্দুল নবী (৪৫), নাছির হোসেন (৫৫), সাহাব উদ্দিন (৩০) বাদশা মিয়া (৩০), নূরুল ইসলাম (৩৬), মোহাম্মদ ইসলাম (২৫) আহত হয়েছে বলে ডাঃ ছুরুত আলম জানিয়েছেন। পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাফায়েত মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্তের ৩৯, ৪০ ও ৪১ নং খুঁটির মধ্যবর্তী জনৈক অলি ফকিরের ছনখোলা থেকে এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮৮ কিলোমিটার দুরে অগ্নিকান্ডস্থল দুর্গম এ পাহাড়ী জনপদে প্রায় ৭ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি, অগ্নিনির্বাপক দল ও স্থানীয় লোকজন গতকাল সকাল থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করে আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এবং বাতাসের দমকা থাকায় আগুন ৪০ নং সীমান্ত পিলার সংলগ্ন দিয়ে মিয়ানমারের দিকে ধাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ বাগান ও সবজি খামারের মালিক, গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে সার্বক্ষনিক পাহাড়ায় থেকে সনাতন পদ্ধতিতে আগুনের বিস্তৃতি যাতে গঠতে না পারে সে ব্যাপারে সর্তক থাকতে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৫ হাজার একর সরকারী খাস জমির উপর বিভিন্ন শ্রেণীর সৃজিত বনায়ন ও সবজি ক্ষেত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আশা করছি সন্ধ্যার মধ্যে আগুন প্রায় পুুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
×