ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টাকার পরিমাণ বাড়ানোর তাগিদ

সুফল মিলছে প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রকল্পের

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১২ মার্চ ২০১৫

সুফল মিলছে প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রকল্পের

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সুফল মিলছে প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রকল্পের। এটি চালু হওয়ার ফলে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার বেড়েছে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়া রোধেও ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি নাটোর এবং কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে। কিন্তু এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যে অর্থ দেয়া হয় তা অপ্রতুল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষার মান বাড়াতে নিয়মিত স্কুল পরিদর্শন, শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর উন্নতি, সকল স্কুলে ফিডিং কর্মসূচী চালু করা এবং স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে বলে স্থানীয় জনগণ, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী, স্কুল পরিচালনা কমিটি এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। অন্যদিকে সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) পরিচালিত সামাজিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন-২০১৩ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২১টি জেলার ৯৫ শিক্ষকের মতামত গ্রহণ করা হয় প্রশ্নোত্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এতে ৯০ শতাংশ শিক্ষক মনে করেন, সরকারের উপবৃত্তি প্রকল্প শিক্ষার সামগ্রিক মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। উপবৃত্তির অর্থের পরিমাণ কম হওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, যেহেতু সরকারীভাবে প্রাথমিক পর্যায়ের সকল বই সরবরাহ করা হয়, তাই তাদের কোন বই কিনতে হয় না। শুধু খাতা-কলম কেনার জন্য এ অর্থ অনেকটাই যথেষ্ট। তবে এটি দেয়া হয় মূলত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেয়ার জন্য। সরকারের সম্পদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও রয়েছে। তারপরও ধীরে ধীরে হয়ত এর পরিমাণ বাড়বে। সম্প্রতি নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার ইটালী ইউনিয়নের সিকিচোড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এ স্কুলের মোট ২৪১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৫ শতাংশ হারে উপবৃত্তি পাচ্ছে ১৪০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মেয়ে ৭২ এবং ছেলে ৬৮ জন। প্রত্যেককে মাসিক ১০০ টাকা হারে তিন মাস পর পর টাকা দেয়া হচ্ছে। উপবৃত্তি চালু হওয়ার পর থেকে এ স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার বেড়েছে এবং ঝড়ে পড়া কমে গেছে। এ চিত্র থেকে দেখা গেছে, ইটালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মৌ-গ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কুড়িগ্রাম জেলার কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সিকিচোরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে অবকাঠামো সমস্যা। বেঞ্চের অভাবে শিক্ষার্থীরা চট বিছিয়ে ক্লাস করছে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। খেলার মাঠের অবস্থা ভাল নয়। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, বিদ্যালয় ভবন অনেক পুরনো। ফলে বৃষ্টির সময় পানি পড়ে। বিদ্যুত থাকলেও এখনও সরকারীভাবে কোন কম্পিউটার পাওয়া যায়নি, তাছাড়া রয়েছে খাবার পানির সমস্যাও। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আক্তার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, প্রধান সড়ক থেকে স্কুলে আসার রাস্তাটির খুবই খারাপ অবস্থা। বর্ষার সময় বাচ্চারা স্কুলে আসতে অনেক সময় কাদায় পড়ে যায়, এটি সংস্কার করা জরুরী। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নানও প্রায় একই সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, উপবৃত্তির টাকার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র তৈমুর রহমান জানান, উপবৃত্তির টাকা দিয়ে সে খাতা-কলম কেনে, পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী হিয়ামণি জানায়, এ টাকায় সে স্কুলের পোশাক তৈরি করেছে। তবে শিক্ষার্থী আজিম আলী, সৈকত হোসেন, হুমায়রা জানায়, তারা কলম ও খাতা কিনে থাকে এ টাকায়। জেলাভিত্তিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির অভিজ্ঞতা থেকে সুপ্রর জেলা সম্পাদক ডেইজি আহমেদ এবং জেলা প্রচারাভিযান সহায়ক রাজু আহমেদ জানান, এই প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতে যেসব বিষয়ে চাহিদা রয়েছে তা হচ্ছে- প্রতিটি বিদ্যালয়ে খেলাধুলার ও আনন্দ বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদ্যালয়গুলোর আঙিনায় শিশুপার্কের-মিনি পার্কের ব্যবস্থা করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ফিডিং প্রকল্পের ব্যবস্থা করা, লাইব্রেরি ও কম্পিউটার থাকা জরুরী, বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর থাকা প্রয়োজন, প্রতিটি শিক্ষক ও অভিভাবককে বাচ্চাদের প্রতি সচেতন হওয়া প্রয়োজন, উপবৃত্তির ব্যবস্থাসহ উপবৃত্তির হার ১০০% থাকা দরকার। সুপ্রর সামাজিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন-২০১৪ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, উপবৃত্তির অর্থ পর্যাপ্ত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ অভিভাবক বলেছেন না, মোটামুটি চলে যায় বলেছেন ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ, পর্যাপ্ত বলেছেন ২ দশমিক ৫ এবং উত্তর পাওয়া যায়নি ২৯ দশমিক ১ শতাংশ অভিভাবকের। অন্যদিকে বর্তমান যে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে তা দিয়ে খাতা কেনেন ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ অভিভাবক।
×