অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে উৎপাদিত সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম সরকার কমিয়ে দিচ্ছে এমন খবরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সকাল থেকেই শেয়ারটি দরপতনের সর্বনিম্ন সার্কিট স্পর্শ করে। দিনশেষেও যা অব্যাহত ছিল। কোন রকম ঘোষণা ছাড়াই সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে বিপাকে পড়েছেন বাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীরা। আগামীতে ওই সব কোম্পানির মুনাফাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এমন আশঙ্কাতে অনেকেই হাতে থাকায় শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন। তবে দাম কমলেও বুধবার শাহজিবাজার পাওয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়। এদিন ডিএসইতে ১০ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এর মূল্য ছিল ২৩ কোটি টাকা।
এর আগে গত বছরে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু পর মাত্র ৩৭ টাকা থেকে শাহজিবাজারের দর বাড়তে বাড়তে ৩৩০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে। শুরুতে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ নিশ্চুপ ছিল। এই সুযোগে টানা কিছু দিন এটির দর সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একাধিক দফা তদন্ত কমিটি গঠন করে। দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময়ের জন্য কোম্পানিটিকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় স্পট মার্কেটে রাখা হয়। এ কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতার প্রয়োজনীয় তথ্য বিএসইসিতে জমা দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দেয়। তার পরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পায়নি এটি। ঠিক কবে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে সেটি নিশ্চিত নয় কেউই। এর মাঝেও আবার উৎপাদিত তেলের দাম কমানোর ঘোষণা আসল সরকারের থেকে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, শাহজিবাজারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারির কারণে এ কোম্পানির শেয়ারের প্রতি এত ঝোঁক বিনিয়োগকারীদের। পেট্রোম্যাক্স বেসরকারী খাতে দেশের সবচেয়ে বড় রিফাইনারি। বিদেশ থেকে আমদানি করা কনডেনসেট পরিশোধন করে এটি অকটেন, পেট্রোল ইত্যাদি উৎপাদন করে। দেশে পেট্রোম্যাক্সের অকটেনেই অকটেন সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
গত মঙ্গলবার হঠাৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় স্থানীয় রিফাইনারিগুলো থেকে তেল কেনার দাম কমিয়ে দেয়। চার ধরনের তেলের মধ্যে ডিজেলের দাম কমানো হয় ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ কম, কেরোসিনের দাম ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, পেট্রোলের দাম ৩৪ দশমিক ২১ শতাংশ এবং অকটেনের দাম ৩৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমানো হয়। তেলের দাম কমে যাওয়ায় কোম্পানির মুনাফা কমে যেতে পারে এমন আশঙ্কার প্রভাব পড়ে বাজারে।
সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন রিফাইনারিগুলোর উৎপাদিত তেলের দর কমানোর কারণে বুধবার লেনদেনের শুরুতেই মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোম্পানিটির শেয়ারের প্রথম লেনদেনটিই হয় আগের দিনের চেয়ে ২ টাকা কমে। পরে দাম আরও কমে যায়। মঙ্গলবার লেনদেন সমন্বয় শেষে শেয়ারটির দর ছিল ২৩৭ টাকা ৬০ পয়সা। বুধবার শেয়ারটির দাম কমে ২০ টাকা ৭০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ ২১৬ টাকা ৯০ পয়সা হয়।